অমিত ভদ্রের লম্বা থ্রো দেখে তাঁকে দেখা করতে বলেছিলেন অচ্যুৎ ব্যানার্জি...

এক্সট্রাটাইম নিউজ ডেস্কঃ পার্ক সার্কাসে সাতের মাঠে একটা ম্যাচ খেলছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে চিফ গেস্ট হয়ে এসেছিলেন স্যার অচ্যুৎ ব্যানার্জি। তাঁর লম্বা থ্রো দেখে তাঁকে দুখিরাম কোচিং সেন্টারে দেখা করতে বলেছিলেন অচ্যুৎ ব্যানার্জি। ওখান থেকেই কলকাতা ময়দানে পথ চলা শুরু তিন প্রধান খেলা প্রাক্তন ফুটবলার অমিত ভদ্রর। সেই সব নিয়েই এক্সট্রাটাইম বাংলা ফুটবল শো'র খোলামেলা আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।
রেলে চাকরি
অমিত: বড় টিম খেলার আগেই, আমার কাছে দুই জায়গা থেকে চাকরির প্রস্তাব আসে। পোর্ট ও রেল থেকে, কিন্তু ৮-১০ টাকার পার্থক্য হওয়ায় আমি পোর্ট ছেড়ে ৮১ সালে রেলে যোগ দিই।
৮৬ তে মোহনবাগান
অমিত: মোহনবাগানের প্রস্তাব থাকলেও, ৮৪ সালে মহামেডানে যোগ দিই, কিন্তু সেই ভাবে খেলতে পারিনি। ৮৫তে এরিয়ানে ফিরে যাই। ৮৬ সালে হারু মন্ডলকে নিয়ে শৈলেন মান্না আমার বাড়িতে আসেন। সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্যি ছিল না আমাদের বাড়ির কারুরই। কারণ মান্নাদা একটা ফ্যাক্টর।
দিলীপ কুমারের প্রশ্ন
অমিত: ১৯৮৭ সালে রোভার্স কাপে খেলতে গেছি। ওই সময় খুব ঘনিষ্ট একজনের কাছে দিলীপ কুমার জিজ্ঞাসা করেছিলেন ওই পাঞ্জাবি স্টপারটার নাম কী? আমার তখন ব্যাক ব্রাশ করা চুল ছিল। আর গালে চাপ দাড়ি তো আমার বরাবরেরই।
সুব্রতর সঙ্গে মনোমালিন্য
অমিত: লোকে যতটা ভাবে, ততটা কিন্তু আমার সঙ্গে সুব্রত ভট্টাচার্যের মনোমালিন্য হয়নি। তবে হ্যাঁ, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল ঠিকই। সুব্রত ভট্টাচার্য সিনিয়র হিসেবে আমায় ক্লাব ছাড়তে বারণ করেছিলেন। আমি তখন মুখের উপর বলেছিলাম, তুমি কি আমার অভিভাবক? এতে হয়ত আঘাত পেয়েছিলেন বাবলুদা, কিন্তু আজও বলছি, বাবলুদা'কে কিন্তু আমি সম্মান করি।
বোঝাপড়া
অমিত: অচিন্ত্য বেলেলের সঙ্গে আমার দারুন বোঝাপড়া ছিল। সেই ইউনিভার্সিটি ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে। আমার বেশ মনে আছে, আমি আর বেলেল তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলছি। ইউনিভার্সিটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছি। সামনে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়। ওদের হয়ে তখন খেলছে মজিদ বাসকার, জামসেদ নাসিরি, খাবাজিরা। কলকাতা ময়দান তখনও এই তিন ইরানিয়ানকে কেউ চিনত না। আমি আর বেলেলই প্রথম মজিদদের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। ম্যাচটা ১-০ গোলে হেরে ছিলাম। তারপর তো মজিদদের কলকাতা ময়দানে দেখলাম।
অরুণদা অনেকটা
অমিত: আমার জীবনে অরুণ ঘোষ অনেকটা। বিএনআর ক্লাবে থাকার সময় ওনার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। উনি সব সময় বলতেন টাকার জন্য হ্যাংলামি করবে না। মন দিয়ে খেলবে। যদি অন্য কিছু নিয়ে ভাব, তাহলে খেলায় আর মনোসংযোগ করবে কখন!
সুদীপ চ্যাটার্জির পরিবর্ত
অমিত: সুদীপ চ্যাটার্জি তখন সাড়া জাগানো নাম, কিন্তু সেই সুদীপ চ্যাটার্জি ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মোহনবাগানে চলে গেল। সবাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। লাল-হলুদের মাঝমাঠ কী হবে? সব শুনে প্রদীপদা গড়াগড়িদা বা নিতুকে বলেছিল, মাঝমাঠে টুলুর পরিবর্ত পেয়ে গেছি। কে সে? যে টুলুর পরিবর্ত হতে পারে? প্রদীপদা আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিল, অমিত মাঝমাঠে খেলবে। সেই বছর আমি ইস্টবেঙ্গলের সব কটা ম্যাচ মাঝমাঠে খেলেছিলাম। পরে বছর অবশ্য স্টপার পজিশনে ফিরে আসি।
অমলের ক্যারিশমা
অমিত: সুভাষ ভৌমিক কোচিং থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার জায়গায় অমল দত্ত এসেছে। সিকিম গোল্ড কাপ খেলেই আমরা ডুরান্ড খেলতে গেছি। অমলদা সবে দলের হাল ধরলেও, তখনও ভাল মতো কোচিং করাননি। খেলতে নামার আগে কিছু ছোট ছোট কথা বলে দিয়েছিলেন, তাতেই কাজ দিয়েছিল।
কালো কাপড়
অমিত: কুইলানে বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি খেলতে গেছি। দেখি আমাদের গ্রুপে কেরল অথবা পঞ্জাব হবে, গড়াপেটা ম্যাচ খেলেছে। তার প্রতিবাদে আমরা সবাই মুখে কালো কাপড় বেঁধে গিয়েছিলাম। এর জন্য বোধহয় আমাদের শাস্তি দিয়েছিল ফেডারেশন। তবে সেই সন্তোষ ট্রফিটা আমরা ভাল খেলতে পারিনি।