যাহা রোনাল্ডো! তাই বিরাট

অরিত্র বসু: ২০১৬ তে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হাতে ওঠে প্রথম জাতীয় দলের হয়ে ইউরো কাপ। জামালের বয়স তখন মাত্র ৯। কোহলি তখনও আইপিএলের মঞ্চে অভিশপ্ত। সেবার আরসিবির জার্সিতে সর্বোচ্চ রান করে ফাইনালে তুলেও দলকে জেতাতে পারেননি।
একবিংশ শতাব্দীর সেই ম্যাজিক ম্যানিয়ায় কে জানত পৃথিবীর এই দু'টো দেশে খেলার জগতে দুই কিংবদন্তি একদিন সাফল্যের কান্না কাঁদবেন চরম সমালোচনাকে দূরে সরিয়ে? কিংবদন্তিরা আসলে নীরবে পৃথিবীর কোনও এক কোণায় নিজেদের যন্ত্রণা গুলোর সঙ্গে লড়াই চালান। তাদের জীবনজুড়ে থাকে কষ্ট, আর লড়াই। প্রদীপ হয়ে আলো জ্বালতে গিয়ে তাদের পুড়তে হয় অনর্গল। প্রতি মুহূর্তে প্রমাণ করতে হয়। নিজের সেরাটা দিয়েও একটার পর একটা হার। একটার পর একটা না পাওয়া। তবুও লড়াই থামে না।
২০০৮ থেকে ২০২৫। কোহলিকে আইপিএল জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৮ বছর। ২০০৮ সালের আইপিএল থেকে শুরু। ২০০৯, ২০১১, ২০১৬ র ফাইনালে হার, ২০০৮ এর পর ২০২৫ এর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মাঝখানে ১৮ বছরে গোটা পৃথিবীকে শাসন করলেও বেঙ্গালুরুর জার্সিতে আইপিএল জয় ছিল অধরাই। অপয়া, ভাগ্যের জোর নেই, নিজের জন্য খেলে। নিজের সবটা উজাড় করেও এমন কটাক্ষ শুনতে হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারটিকেও। ১৮ বছর পর আইপিএলে টিকে থাকার স্বীকৃতি মিলেছে বিরাটের।
গত রাতে তরুণ জামালের সামনে হয়তো ৪০ বছর বয়সেও জীবনের নানা যুদ্ধে হেরে নিজেকে প্রমাণ করার লড়াইটা লড়ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো। যে লেলিহান শিখা, যে উত্তেজনা থাকে তাঁর সেলিব্রেশনে থাকে, তা তো ছিল না এদিন! বিরাটও সেদিন উত্তেজিত হননি। কেঁদেছিলেন। আসলে সব যুদ্ধের সৈনিকেরা যুদ্ধ শেষে শিশুর মতোই কাঁদেন, শিশুর মতোই শান্তির ঘুম ঘুমোন ট্রফি জয়ের পর!
মেসি বিশ্বকাপ জিতল, রোনাল্ডো সমালোচিত হয়েছিলেন। ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে বিরাটও সমালোচিত হয়েছিলেন। কত কটাক্ষ সহ্য করেছিলেন। আর দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা করেছিলেন। এই লড়াইগুলো আসলে এক একটা ম্যাজিক। যে ম্যাজিকগুলো স্বপ্ন দেখায় বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ রোনাল্ডো-বিরাটদের।
কে বলতে পারে ক্রিকেটে বহু যোজন পিছিয়ে থাকা রোনাল্ডোর পর্তুগালে বিরাটকে দেখে নেট প্র্যাকটিস করছে যে ছেলেটা, ২০ বছর পর তাঁর জন্যই ক্রিকেট বিশ্বকাপেও সবুজ-মেরুন জার্সি উড়বে না? আইকনিক সেই সেলিব্রেশন হবে না? ভারতের কোনও শহরে রোনাল্ডোর ছবি সামনে রেখে যে ছেলেটা পায়ে বল নিয়ে দৌড়াচ্ছে। শতযোজন বাধা টপকে তাঁর জন্য কোনও বিশ্বকাপে গোওওওল বলে লাফিয়ে উঠব না আমরা?
কিংবদন্তিদের কান্নাগুলো দেখুন। তাঁদের ধৈর্য্য, লড়াইকে বুকে আগলে রাখুন। স্বপ্নগুলো বাঁচিয়ে রাখুন। লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যান। একটা হারে থমকে যাবেন না। একটা নিন্দায় ধাক্কা খাবেন না। জেদ বজায় রাখুন। বিরাট-রোনাল্ডোরা তো আসলে রক্তে মাংসের মানুষই হন।