আরসিবি, পিএসজি, টটেনহ্যাম থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, চোকার্স তকমা ঘুচল?

সাইফঃ চোকার্স, খেলাধূলার জগতে এই শব্দটি কতটা অসম্মানের? কতটা মাপবেন? সম্মান কিন্তু নেই এক ফোঁটা। হারতে হারতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরও দেওয়াল যাদের জন্যে কোনো স্থায়ী ঠিকানা লেখার জায়গা দেয়না তারাই চোকার্স। আলো আর অন্ধকারের ফারাক যতটা! একটি চ্যাম্পিয়ন দল আর গ্রুপ লিগে সবার শেষে শেষ করা একটি দলের ফারাক কতটা? ফাইনালে উঠতে উঠতে প্রতিবারে, ফেভারিট থেকে, ফিরে যাওয়ার মধ্যে কি সত্যি কোনো ফারাক আছে? একটি চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি উঁচু করে আকাশে তুলে ধরে আর দূরে দাঁড়িয়ে দেখে একটি পরাজিত হতাশ দল। পরাজয় যখন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়, তখনই সে চোকার্স হয়ে যায়!
আচ্ছা রবার্ট ব্রুস কিন্তু চোকার্স ছিলেন না। সাতবার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাহাড়ের মাথায় গুহায় লুকিয়ে থেকে, শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি খুঁজেছিলেন, একটি দুর্বার মাকড়সাকে দেখে। যে মাকড়সা বারবার জাল বুনতে বুনতে ব্যর্থ হয়ে, শেষবার বানিয়ে ফেলে তার সেতু। গভীর জীবনবোধের শিক্ষা নিয়ে, শেষ যুদ্ধ জিতেছিলেন রবার্ট ব্রুস। উদ্ধার হয়েছিল সাম্রাজ্য। চোকার্স তকমা ঘুচিয়েছিলেন।
২০২৫ সালটা বিশ্বের খেলাধুলায় অনেক দলের চোকার্স তকমা ঘুচে গেল। সব শেষ উদাহরণ, দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে লর্ডসের মাঠে তারা চার দিনের মাথায় পরাজিত করল দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথমদিন থেকেই চালকের আসনে। স্বাধীনতার পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পদার্পণ করে তারা ১৯৯১ সালে। বিশ্ব ক্রিকেটে পরাশক্তি হলেও আইসিসি ইভেন্ট একটিবার ছাড়া আর কখনো হাতে পায়নি তারা। সেই অর্থে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতলেও বিশ্বকাপ কিন্তু এই প্রথম। চির অপয়া শব্দটা এবার বিলুপ্ত হল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের নামের পাশ থেকে।
হ্যাঁ, ২০২৫ সাল, আইপিএলের জন্ম লগ্ন থেকে ফেভারিট হয়ে মাঠে নামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। বিরাট কোহলি, এবি ডেভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল বিশ্ব ক্রিকেটে তাণ্ডব সৃষ্টিকারী ক্রিকেটাররা একসঙ্গে খেলেও একটি আইপিএল দিতে পারেননি আরসিবিকে। ২০০৮, ২০১৬ ফাইনালে উঠেও কাপ অধরা ছিল। কাপ এল ২০২৫ সালেই। আক্ষরিক অর্থে বছরটা চোকার্সদের জন্য ফুলের বাগান সাজিয়ে দিয়েছে।
উয়েফা ইউরোপা কাপের কথাই ধরুন। টটেনহ্যাম বিশ্ব ফুটবলে বরাবরই সাড়া জাগানো নাম। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে ট্রফি কোথায়? শেষ পর্যন্ত এই বছরই স্পার্সরা ইউরোপা কাপ জিতল ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে। শাপমুক্তি।
এই শতাব্দীতে সাড়া জাগিয়ে ফুটবলে পদার্পণ করেছিল পিএসজি। ফ্রান্সের ফুটবলে বিপ্লব ঘটিয়েছে তারা। একসঙ্গে নেইমার, মেসি, এমবাপেদের খেলিয়েও ফাইনালে উঠেও ইউরোপ সেরা হতে পারেনি তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগ পাওয়ার স্বপ্ন দূর থেকেই দেখেছে প্যারিসের দলটি। বছরটা তো ব্যতিক্রম ছিল, সব স্বপ্ন সফল হওয়ার বছর। কোনও মহতারকা ছাড়াই ইন্টার মিলানকে হারিয়ে এবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ প্যারিসের প্লেন ধরেছে।
বছরটা তাই যারা কিছু পায় না অথচ লড়ে যায়, তাদেরই। এখনও বছরটা সবে অর্ধেক পেরিয়েছে। আপনিও লড়ে যান। সফল হবেনই।