ক্যাপ্টেন সানি। মিঠুন হলেন ফাস্ট বোলার...

উত্তর কলকাতার ছেলে গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীর ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছোট থেকেই ছিল। তবে একইসঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আরও কিছু কর্মকান্ডে। যার জন্য তাঁকে তাঁর প্রিয় শহর ছাড়তেও হয়। সেই ঘটনা অনেকেই জানেন। তবে আজ মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে কয়েকটা 'আনটোল্ড স্টোরি' বলব। দিলীপ ভেঙ্গসরকারের সাথে মিঠুনের খুব মাখোমাখো সম্পর্ক। তবে 'লিটল মাস্টার' সুনীল গভাস্কারের সঙ্গেও অভিনেতার সম্পর্ক দারুণ। আর সানির সঙ্গে বন্ধুত্বের খাতিরেই বিদেশে বাইশগজের যুদ্ধে নেমেছিলেন 'মহাগুরু'।
ততদিনে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন লেখা হয়ে গিয়েছে। প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক আগের বছর ১৯৮২ সালে রিলিজ করল 'ডিস্কো ড্যান্সার'। বক্স অফিসে সেই সিনেমা সুপারহিট হতেই, গোটা দুনিয়ায় রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে গেলেন মিঠুন। সেই বিশ্বকাপ জয়ের কয়েক বছর পর 'মাশালা ম্যাচ' আয়োজন করেছিলেন সানি। সেই ম্যাচ থেকে অর্জিত অর্থকে কেন্দ্র করে অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেটের দুই 'অল টাইম গ্রেট' সুনীল ও কপিল দেবের মধ্যে বিস্তর ঝামেলাও হয়।
যাই হোক। আমেরিকার নিউ জার্সিতে আয়োজিত ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দুই দলের একাধিক তারকাদের নিয়ে তৈরি সেই ম্যাচ খেলার জন্য মিঠুনকেও আমন্ত্রণ জানান সানি। কাকতলীয়ভাবে আমেরিকার প্রভিডেন্স নামক শহরে সেই সময় শ্যুটিং করছিলেন মিঠুন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন টম অল্টার। টেলিফোনে বন্ধু সানির সেই প্রস্তাব পেয়ে প্রভিডেন্স থেকে নিউ জার্সির উদ্দেশে রওনা দেন দুই অভিনেতা।
সেই ম্যাচে মিঠুনকে নিয়ে দারুণ মজার ঘটনা ঘটেছিল। বিপক্ষে ছিলেন একাধিক নামজাদা ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। তবুও কোনও এক বিশেষ কারণে শুরুতেই বঙ্গ অভিনেতার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক গাভাস্কার। ফুটবলে দক্ষতা থাকলেও, ক্রিকেট খেলা নিয়ে মিঠুনের তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে জাত্যাভিমানের জন্যই হয়তো সেদিন অধিনায়কের ডাকে সাড়া দিয়ে রানআপ নিতে শুরু করেছিলেন সুপারস্টার। যদিও শুরুটা কিন্তু ভাল হল না। অভিনেতার প্রথম বলকেই সপাটে মেরে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিলেন আ্যলভিন কালীচরণ। আম্পায়ার বাউন্ডারির সিগন্যাল দেখাতেই গ্যালারি থেকে তীব্র আওয়াজ উঠতে শুরু করল। সবটাই অভিনেতাকে টার্গেট করে।
মিঠুনকে উদ্দেশ করে তীব্র আওয়াজ উঠল, "ডিস্কো ড্যান্সার নেহি চলেগা'! মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনলেন বাঙালি। আর মনে মনে ভেবে নিলেন এবার মোক্ষম জবাব দেওয়ার সময়। লাল বল নিয়ে রান আপ নিতে শুরু করলেন। সামনে সেই বাঁহাতি কালীচরণ। বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে 'পিচ' হতেই শরীরের দূর থেকে খেলার চেষ্টা করলেন ক্যারিবিয়ান। কালীচরণ হয়তো সামনে আনকোড়া বোলারকে পেয়ে, ক্রিকেটের নির্মম সত্যতা ভুলে গিয়েছিলেন। যে খেলাটা মাত্র এক বলের। তাই তো ক্ষনিকের ভুলে ব্যাটের হালকা কানা লেগে পিছনে থাকা উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানির হাতে গিয়ে বল জমা হয়ে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে স্কোরবোর্ডে ভেসে উঠল…আ্যলভিন কালীচরণ (কট কিরমানি বোল্ড মিঠুন)। নকশাল আন্দোলন করা ছেলের রক্তের জোর যে অন্যরকম। যতই সুপারস্টার হয়ে যান। রুট তো ভুলে যাননি। কালীচরণকে ফিরিয়ে গ্যালারির সেই অংশের দিকে তাকালেন মিঠুন। এবং 'ডিস্কো ড্যান্স'এর সেই বহু পরিচিত পোজ দিয়ে চিৎকারের সঙ্গে বলে উঠলেন 'ডিস্কো ড্যান্সার হি চলেগা'।
প্রথম জীবনে পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতিতে কুস্তি করা। ১৯৬৭ সালে কুস্তিতে রাজ্য চ্যাম্পিয়ন। সঙ্গে চুটিয়ে ফুটবল। তবে ক্রিকেটের প্রতি আলাদা প্যাশন আগাগোড়াই ছিল। আইপিএল শুরু হওয়ার এক বছর আগে ভারতের মাটিতে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল)'এর জন্ম হয়। বাংলার বঞ্চিত ও কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে 'রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার্স' নামক দল তৈরি করেন। বাংলা ফুটবলের উন্নতির জন্য বরাবর ভাবতেন। হাওড়া ইউনিয়নের ফুটবল দলকেও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কালের নিয়মে সেগুলো আর ডালপালা মেলতে পারল না।
তবে তা বলে একটা মানুষের প্যাশন তো কমে যায় না। শরীরে বয়স থাবা বসিয়েছে। পিঠে প্রবল যন্ত্রণা। সেই নিয়ে এখনও শ্যুটিং করে চলেছেন বাঙালির 'মহাগুরু'। এখনও দৌড়ে বেড়াচ্ছেন গৌরাঙ্গ। কারণ, মিঠুনের জীবনের যে একটাই মন্ত্র…….'প্যাশন'।