মরক্কোর রক্ষণ বনাম ফ্রান্সের গতি - কোন ফ্যাক্টর বাজিমাত করবে সেমির মহারণে

অভিজিৎ বিশ্বাস : পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের পর প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে উঠেছে মরক্কো। কাতারের আল বায়েত স্টেডিয়ামে ২০২২ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে তারা বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলবে। ফ্রান্স যদি মরক্কোকে হারাতে পারে, তাহলে ফ্রান্স ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হবে যারা পরপর দুবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলবে।
এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে মরক্কোর খেলার বিশেষত্ব হচ্ছে অসাধারণ ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন এর সাথে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল, যে আক্রমণটা খুব অল্প পাসে বিপক্ষ গোলমুখে পৌঁছে যাচ্ছে। মরক্কোর ডিফেন্ডারদের মধ্যে দুর্দান্ত ভিস্যুয়াল ও ভার্বাল কমিউনিকেশনের জন্য মাত্র ৩১.৮ শতাংশ বল পজেশন থাকা সত্ত্বেও পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে চারটি ম্যাচ ক্লিনশিট রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর জন্য তাদের গোলকিপার ইয়াসিন বোনো (১) বিশেষ কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। আর মরক্কোর এই বিশ্বকাপ অভিযানের সাফল্যের পিছনে তাদের কোচ ওয়ালেদ রেগ্রাগুইয়ের ট্যাকটিকাল সিদ্ধান্তের প্রভাব ও নিজেদের শক্তির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
অন্যদিকে ফ্রান্স বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে ফেভারিট হিসেবেই খেলা শুরু করবে। এটি হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সপ্তম সেমি ফাইনাল। ফ্রান্স ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে হারালেও যদি হ্যারি কেন পেনাল্টি মিস না করতেন, তাহলে খেলার ফলাফল অন্যরকম হতেই পারত। ফ্রান্সের খেলার আসল শক্তি হল তাদের উইং প্লে। যখন ফ্রান্স খেলা সুইচ ওভার করে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খেলা নিয়ে যাচ্ছে, তাদের দুই উইঙ্গার এমবাপ্পে ও ডেম্বেলে সামনে অনেকটা অরক্ষিত জায়গা পেয়ে যাচ্ছেন, যেখান থেকে এই দুই প্রতিভাবান খেলোয়াড় খেলায় আধিপত্য বিস্তার করছেন। তার সাথে অলিভিয়ের জিরুর গোল করার দক্ষতা ও গ্রিজম্যানের ফাইনাল পাস বাড়াবার ক্ষমতা ফ্রান্স দলকে এই বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদার করে তুলেছে।
মরক্কো : সোফিয়ান আমরাবাত
স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় যে মরক্কোর কাছে সেমি ফাইনাল ম্যাচে বল পজেশন কম থাকবে। তাই সোফিয়ান আমরাবাত (৪) মাঝমাঠে ডিফেন্সিভ টেকনিক কিভাবে প্রয়োগ করেন তাঁর উপর ফ্রান্সের ফরোয়ার্ড পাসের তীক্ষ্ণতা নির্ভর করবে।
এর সাথে আমরাবাত যদি অফেন্সিভ ট্রানজিশনের সময় আজেদিন উনাহির (৮) সাথে কম্বিনেশনে খুব অল্প পাসে ফ্রান্সের গোলমুখে পৌঁছে যেতে পারেন, তাহলে মরক্কোর গোল পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। কিন্তু মরক্কোকে বিপক্ষ দলের অর্ধে পাসিং অ্যাক্যুরেসি যেটা ৬০ শতাংশ আছে, তা আরও ভালো করতে হবে।
ফ্রান্স : আতোয়াঁ গ্রিজম্যান
যদিও এমবাপ্পে ও জিরু এই দুজন প্রচারের সব আলো নিয়ে নিচ্ছেন, ফ্রান্সের এই বিশ্বকাপে ভালো খেলার পিছনে গ্রিজম্যানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গ্রিজম্যান এই ফ্রান্স দলের মূল চালিকাশক্তি।
তাঁর প্লেমেকিং ক্ষমতা ও ফাইনাল পাস বাড়াবার দক্ষতাকে যদি মরক্কো আটকাতে না পারে, তাহলে ফ্রান্সকে আগামী ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে দেখার সম্ভাবনা বেশি। এই বিশ্বকাপে গ্রিজম্যান তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন এবং ১৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন, যা এই বিশ্বকাপে সর্বাধিক।