পেনাল্টি শুটআউট নাকি মডরিচ-মেসির ম্যাজিক? কোনটি পার্থক্য গড়বে সেমির মহারণে?

অভিজিৎ বিশ্বাস : লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জলাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়া। চার বছর আগে ক্রোয়েশিয়া রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল এবং ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল, যারা কাতারে অন্য সেমি ফাইনালে মরোক্কোর সাথে খেলবে।
ক্রোয়েশিয়া কাতার বিশ্বকাপে সফল হওয়ার জন্য ফেভারিটদের মধ্যে ছিল না, কিন্তু পেনাল্টি শুটআউটে ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে তাদের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মত সেমি ফাইনালে উঠেছে। এখন তারা আর্জেন্টিনার মুখোমুখি এবং দুটি লাতিন আমেরিকার শক্তিধর দেশকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা নিয়ে খেলা শুরু করবে। যদি ক্রোয়েশিয়া তা করতে পারে তবে তারা ২০১৪ সালে জার্মানির পর প্রথম দল হবে যারা লাতিন আমেরিকার দুটি দলকে হারিয়ে ফাইনাল খেলবে।
ক্রোয়েশিয়া দলের সবচেয়ে বড় শক্তি হল সবাই মিলে এক সাথে লড়াই করা এবং অসাধারণ রক্ষণভাগ। ব্রাজিলের বিপক্ষে দুই উইং ব্যাক বর্না সোসা (১৯) ও জোসিপ জুরানোভিচ (২২) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, যারা ভিনিসিয়াস জুনিয়র এবং রাফিনহা এবং পরিবর্ত হিসেবে নামা অ্যান্টনিকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন। এদের সাথে সেন্টার ব্যাক জস্কো ভারদিওল (২০) কিভাবে ডিপ লাইং প্লে মেকিং করেন, এবং কিভাবে মাঝমাঠে অংশগ্রহণ করেন, তা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
অন্যদিক আর্জেন্টিনার প্রধান শক্তি হলেন লিওনেল মেসি। যার উপস্থিতি যে কোনও মুহুর্তে খেলা আর্জেন্টিনার দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু যখন তারা খেলতে নামবে, তারা পাবে না তাদের দুই উইং ব্যাক গোঞ্জালো মন্টিয়েল ও মার্কোস আকুনা, যারা আর্জেন্টিনার ভালো খেলার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। আর একটা আর্জেন্টিনার জন্য উদ্বেগের কারণ ছিল চোটের জন্য রড্রিগো ডি পলের না খেলার সম্ভাবনা, তবে যা খবর, তিনি থাকবেন প্রথম একাদশে। ডি পল থাকায় আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে ইন্টারসেপশন, ডিফেন্সের প্রথম লাইনে বেশ সামঞ্জস্য দেখা যাবে এবং লিঙ্ক আপ প্লেতে বেশ সুবিধা হবে দলের।
মার্সেলো ব্রোজোভিচ ক্রোয়েশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন খেলাটাকে পিছন থেকে তৈরি করার জন্য। ব্রোজোভিচ যদি লুকা মডরিচ ও মাতেও কোভাসিচের সাথে মিলে মিডফিল্ডে সেন্ট্রাল চ্যানেল দিয়ে মেসির ডাউন দ্য মিডল রান বন্ধ করে, আর্জেন্টিনা তখন বাধ্য হবে দুই উইংয়ে পাস খেলতে, একমাত্র তখনই মেসির প্রভাব বন্ধ করতে পারবে।
লিওনেল মেসি সম্ভবত তাঁর শেষ বিশ্বকাপ খেলছেন। বদলে যাওয়া আগ্রাসী মেসিই হলেন আর্জেন্টিনার তুরুপের তাস। ক্রোয়েশিয়া যখন মাঝখান দিয়ে মেসিকে আটকানোর চেষ্টা করবে তখন মেসি ডানদিকে হাফ স্পেস কিভাবে ব্যবহার করেন, তার উপর খেলার ফলাফল নির্ভর করবে। আর একটা মেসির অসাধারণ গুণ যেটা এই বিশ্বকাপে দেখা যায়নি সেটা হল সরাসরি ফ্রিকিক থেকে গোল। ফ্রিকিক থেকে মেসির গোলও এই সেমি ফাইনালে ফলাফল করে দিতে পারে।
শেষ রাউন্ডে পেনাল্টি শুটআউটে জয়ের পর দুটো দলেই আত্মবিশ্বাস থাকবে যে তাদের কাছে টাইব্রেকে জেতার জন্য অসাধারণ দুই গোলকিপার রয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার রয়েছে ডমিনিক লিভাকোভিচ, এবং আর্জেন্টিনার রয়েছে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তাই যারা পেনাল্টি শুট আউট মারতে পারে, তাদের উপর প্রচন্ড মানসিক চাপ থাকবে। যদি এই খেলাটা টাইব্রেকারে যায়, যারা এই মানসিক চাপ কাটিয়ে শট নিতে পারবে, তারাই জয়লাভ করবে।
এক কথায় বলা যায়, যে দল যত তাড়াতাড়ি বল পজেশন নিজের দখলে রাখতে পারবে, তারাই খেলাটিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।