২০২২ বিশ্বকাপ : রেকর্ড ও নজিরের এক অনন্য মিশেল

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : সম্প্রতি কাতারে আয়োজিত হওয়া ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ জমজমাটি উপায়ে সম্পন্ন হয়েছে। এবং টুর্নামেন্টের এই সংস্করণে একাধিক বড় রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স মহারণের ম্যাচটি বিশ্বজুড়ে প্রায় দেড় বিলিয়ন দর্শক দেখেছে। আর সেই ম্যাচটি লুসাইল স্টেডিয়ামে বসে দেখেছে ৮৮,৯৬৬ জন দর্শক।
এছাড়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে কাতার বনাম ইকুয়েডর ম্যাচটি ৫৫০ মিলিয়ন দর্শক দেখেছে।
এই বিশ্বকাপ জুড়ে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও ঝড় উঠেছে। ২৬২ বিলিয়ন রিচ ও ৫.৯৫ বিলিয়ন এনগেজমেন্ট এসেছে সমস্ত ধরণের সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই বিশ্বকাপে মাঠে দর্শকদের আগমণ ছিল দেখার মত। গোটা টুর্নামেন্টে মোট ৩.৪ মিলিয়ন মানুষ মাঠে বসে বিশ্বকাপ দেখেছে। ২০১৮ বিশ্বকাপে সেই সংখ্যা ছিল ৩ মিলিয়ন।
এদিকে এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোল করার ক্ষেত্রে এসেছে রেকর্ড। ২০২২ বিশ্বকাপে ১৭২টি গোল এসেছে। এবং এই বিশ্বকাপ ভেঙেছে ১৯৯৮ ও ২০১৪ সংস্করণের রেকর্ড।
এবারের বিশ্বকাপে লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল সহ তিনটি ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে, যা ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই রেকর্ড রয়েছে, ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে, যেখানে প্যাসাডেনার রোজ বোলে ব্রাজিল বনাম ইতালি ম্যাচ দেখতে হাজির হয়েছিল ৯৪,১৯৪ মানুষ।
এদিকে দুই মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের মঞ্চে গড়েছেন রেকর্ড। রোনাল্ডো প্রথম পুরুষ ফুটবলার যিনি পাঁচ বিশ্বকাপে গোল করেছেন। এদিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে রাউন্ড অফ ১৬ পর্ব আসার পর, লিওনেল মেসি প্রথম ফুটবলার, যিনি একটি বিশ্বকাপের চারটি টানা নকআউট ম্যাচে গোল করেছেন। এছাড়াও বিশ্বকাপে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডও গড়েছেন মেসি। জার্মানির কিংবদন্তী ফুটবলার লোথার ম্যাথিউসের ২৬ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছুঁয়েছেন মেসি।
এবারের বিশ্বকাপে দ্রুততম গোল করার রেকর্ড গড়েছেন কানাডার আলফান্সো ডেভিস। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধ্বে মাত্র ৬৮ সেকেন্ডে গোল করেছেন ডেভিস। এদিকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে তরুণতম ফুটবলার হিসেবে গোল করার কীর্তি গড়েন গাভি। স্পেনের এই মিডফিল্ডার মাত্র ১৮ বছর ১১০ দিনে গোল করেছেন কোস্টারিকার বিরুদ্ধে। এর আগে এই রেকর্ড ছিল ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে পেলের।
এই বিশ্বকাপে অনন্য কীর্তি গড়েছেন স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট, যিনি প্রথম মহিলা হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচে রেফারিং করেছেন। সেই ম্যাচে স্টেফানির সাথে সহকারীর ভূমিকায় ছিলেন নিউজা ব্যাক ও ক্যারেন ডিয়াজ।
আটটি গ্রুপ পর্বের বিজয়ী দেশগুলি চারটি ভিন্ন কনফেডারেশন থেকে এসেছে। এবং এই ঘটনা বিশ্বকাপের ইতিহাসে কেবল তৃতীয়বারই হল। এর আগে ১৯৮৬ ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এবারের বিশ্বকাপে দুরন্ত ফুটবল খেলেছে মরক্কো দল। এবং আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে খেলার কীর্তি অর্জন করেছে মরক্কো।
এবারের বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করেছে এশিয়ান দেশগুলি। এবং ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথমবার রাউন্ড অফ ১৬ পর্বে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের তিনটি দল যোগ্যতা অর্জন করেছে।
দোহায় ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালে ১.৮৫ মিলিয়ন দর্শক হাজির হয়েছেন। আর এই ফেস্টিভ্যালে এই প্রথমবার তাদের নিজস্ব সঙ্গীত প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম 'তুকো তাকা'। আর এই গানটি ফিফা বিশ্বকাপের অফিশিয়াল সাউন্ডট্র্যাকে এসেছে, যা প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ভিউস এনেছে ইউটিউবে।
এদিকে এই বিশ্বকাপ সম্প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ফিফা প্লাস। ব্রাজিলে ইউটিউব স্ট্রিমার ক্যাসিমিরো ও কিংবদন্তী ফুটবলার রোনাল্ডোর সাথে ফিফা প্লাস এই টুর্নামেন্টের লাইভ স্ট্রিম করেছে।
একটি বিশ্বকাপ কখনই পুরোপুরি সম্পন্ন হয় না পর্দার পিছনের লোকেদের ছাড়া। এবারের বিশ্বকাপে ১৫০টি দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার ভলেন্টিয়ার এসেছিল, যার মধ্যে ১৭ হাজার ভলেন্টিয়ার কাতারের বাসিন্দা ছিল, আর বাকি ৩০০০ বাইরের ছিল। ১৮ থেকে ৭৭ বছর অবধি বয়সের মধ্যে ছিলেন ভলেন্টিয়াররা।
এই টুর্নামেন্টকে সাফল্যমন্ডিত করতে প্রায় এক লক্ষ ৮০ হাজার অ্যাক্রেডিটেড মানুষের ভূমিকা রয়েছে। আর প্রায় ১০ হাজার সাংবাদিক এই বিশ্বকাপে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন গোটা বিশ্বের কাছে।
সব মিলিয়ে, এবারের বিশ্বকাপ নজির গড়েছে ফুটবল সহ গোটা ক্রীড়া বিশ্বে।