"ভাবতেই পারিনি...": অবসরের পর আবেগে ভাসলেন অদিতি চৌহান, শেয়ার করলেন নিজের ফুটবল সফরের গল্প

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক অদিতি চৌহান জানালেন, যখন প্রথম ফুটবলে পা রাখেন, তখন তিনি জানতেনই না যে ভারতের কোনও মহিলা জাতীয় দল রয়েছে। প্রায় দুই দশকের সফর শেষে এখন তিনি অবসর নিচ্ছেন, একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে—কারণ তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা ফুটবলার যিনি ইউরোপে পেশাদার ফুটবল খেলেছেন।
"ফুটবল খেলতে শুরু করেছিলাম মজা করার জন্য। তখন জানতামই না যে একটা জাতীয় দল আছে। যখন শুরু করেছিলাম, তখন কল্পনাও করিনি যে আমি এত কিছু অর্জন করব... এটা এমনকিছু ছিল না যা আমি স্বপ্নেও ভেবেছিলাম," পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানালেন ৩২ বছরের এই তারকা।
তবে অবসর নেওয়ার পর এখনই ফুল-টাইম কোচিংয়ে ঢুকে পড়ছেন না অদিতি। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে প্রস্তুত তিনি, এবং সেই লক্ষ্যে কোচিংয়ের পেশাদার কোর্সও করছেন।
১৭ বছরের কেরিয়ারে জাতীয় দল ও ক্লাব স্তরে বহু সাফল্য অর্জন করেছেন অদিতি। এখন তাঁর মনোযোগ আগামী প্রজন্মের গোলরক্ষকদের তৈরি করার দিকে। "আমি সত্যিই চাইব, গত কয়েক বছর ধরেই আমি আমাদের দলের অন্য গোলরক্ষকদের মেন্টর করছিলাম। আমি এটা খুব উপভোগ করি," জানালেন তিনি।
গোলরক্ষক কোচিংয়ের লেভেল ১ কোর্স ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন অদিতি এবং ভবিষ্যতে আরও কোর্স করতে চান। "আমি এখনও বলতে পারছি না যে পুরোপুরি কোচিংয়ে চলে আসব। তবে অবশ্যই আমি যতটা পারি সাহায্য করতে চাই," বললেন ভারতের প্রাক্তন নম্বর ওয়ান গোলরক্ষক।
আন্তর্জাতিক স্তরে সফল কেরিয়ারে, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ক্লাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নজরে এসেছিলেন অদিতি। জাতীয় দলের হয়ে ৫৭টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি এবং ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের অংশ ছিলেন। এছাড়াও সাউথ এশিয়ান গেমস-এ সোনাও জিতেছেন তিনি।
তবে তাঁর কেরিয়ার শুধুমাত্র সাফল্যেই ভরা ছিল না। দুইবার এসিএল ইনজুরির শিকার হয়ে ফিরে এসে আবার নিজের জায়গা আদায় করেছিলেন মাঠে। "গত বছর দ্বিতীয় এসিএল ইনজুরি থেকে ফিরে আইডাব্লিউএল খেলতে নামি। ফিরে আসার একটাই উদ্দেশ্য ছিল — আবার ফুটবলের আনন্দ ফিরে পাওয়া। আমি চাইনি ইনজুরির সঙ্গে ফুটবলকে বিদায় জানাতে," বললেন তিনি।
"তখন দলে অন্য গোলরক্ষক ছিল, আমাকে আবার সেই জায়গা ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম, মাঠে ফিরতে পারলে আমি আবার আমার ‘নম্বর ওয়ান’ জায়গাটা পাবো। আর আমি সেটা করেও দেখালাম।"
ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে দুই মরসুম খেলার পর ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন অদিতি এবং ২০১৯-২০ মরসুমে গোকুলাম কেরালা এফসি-তে যোগ দেন। সেই ক্লাবের হয়েই ২০১৯-২০ এবং ২০২১-২২ আইডাব্লিউএল জেতেন তিনি। এছাড়া এএফসি মহিলা ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে পৌঁছে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
তাঁর নেতৃত্বে একটি তরুণ দল তলানির অবস্থান থেকে উঠে এসে সেরা তিনে জায়গা করে নেয়। তবুও, নিজের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার সময় যে এসে গেছে, সেটা বুঝেছিলেন তিনি।
"আমি জানতাম, যতদিন খেলব, ততদিন আমার লক্ষ্য থাকবে নম্বর ওয়ান জায়গাটা ধরে রাখা। আর সেটা করলে অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই সিদ্ধান্ত নিই—এই জায়গাটা এখন নতুন প্রজন্মের জন্য ছেড়ে দেওয়ার সময় এসেছে।"
ভারতীয় মহিলা দলের সাম্প্রতিক এএফসি এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করা নিয়ে তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি সঠিক পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন থাকলে আমরা বিশ্বকাপে যেতে পারব। এটা এশিয়া কাপের জন্য করা প্রস্তুতির ফলাফল, এবং এটা দারুণ এক ব্যাপার।"
তিনি ‘SheKicks’ নামের একটি উদ্যোগ শুরু করেছেন, যার লক্ষ্য ভারতের তরুণ মহিলা ফুটবলারদের জন্য একটি পেশাদার পরিবেশ গড়ে তোলা। "যদি আমার সময় এমন পেশাদার ব্যবস্থাপনা থাকত, তাহলে হয়তো এখনই অবসর নিতে হতো না। আমি চাই না কোনও তরুণ খেলোয়াড় এমন অনুভব করুক—যথাযথ সুযোগ না পেয়ে তাঁরা তাঁদের পূর্ণ সামর্থ্য দেখাতে পারল না," বললেন অদিতি চৌহান।