Exclusive : ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সাথে যুক্ত প্রত্যেকে শাস্তি পাবে : AIFF সভাপতি কল্যাণ চৌবে

অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়, কাতার : সদ্য ম্যাচ ফিক্সিংয়ে কলঙ্কে জড়িয়েছে ভারতীয় ফুটবল। আর এই বিষয়ে অভিযুক্ত যে কোনও ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন, এমনটাই এক্সট্রা টাইমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে। ফেডারেশন সচিব শাজি প্রভাকরণের সাথে এই মুহুর্তে কাতারে রয়েছেন ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ এর জন্য।
আইলিগে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে সিবিআইয়ের চিঠি পাওয়া নিয়ে কল্যাণ চৌবে বলেছেন, "একজন প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে আমি বলতে পারি যে এই ম্যাচ ফিক্সিং একটি গর্হিত অপরাধ। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এই বিষয়টি কড়া নজরে দেখবে এবং কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। সমস্ত ক্লাব ও রাজ্য সংস্থাগুলিকে জানানো হবে। আমায় ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে জানানো হয়েছে। সিবিআই আমাদের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে। আমি এই বিষয়ে সচিবের সাথে আলোচনা করেছি। সব মিলিয়ে আমি বলতে পারি, কোনও ক্লাব যদি এই ধরণের অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
সদ্য হাই কমিশনে কাতারের কর্পোরেটদের সাথে আলোচনা করেছেন কল্যাণ চৌবে। এই আলোচনা নিয়ে কল্যাণ জানিয়েছেন, "একাধিক প্রবাসী ভারতীয় যারা বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার সাথে যুক্ত, তারা এখানে বসবাস করেন। আমি খুশি হয়েছিলাম জানতে পেরে যে তারা গত কয়েক বছর ধরে ফিফা বিশ্বকাপের পরিকাঠামোগত কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমি ওনাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং জিজ্ঞেস করেছি যাতে ওরা তাদের মূল্যবান জ্ঞান আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন যাতে আমাদের পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটে।"
কাতার বিশ্বকাপে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে কল্যাণ চৌবে বলেছেন, "কাতার সারা বিশ্বকে সর্বোচ্চ মানের ইঞ্জিনিয়ারিং দেখিয়ে দিয়েছে যেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি এয়ার কন্ডিশনিংয়ের মধ্যে ম্যাচ আয়োজিত হচ্ছে। আমরা কখনও ভেবেছিলাম তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ফুটবল খেলা হবে, কাতার সেটাই দেখিয়েছে। বাইরে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও, আটটি স্টেডিয়ামে সেই তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। এটা সম্ভব হয়েছে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অসাধারণত্বের জন্য। কাতার অসাধারণ কাজ করেছে। লুসাইল স্টেডিয়ামের শিল্পশৈলী দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। কাতার পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে অর্থকে কিভাবে সঠিক পথে চালনা করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়।"
বিশ্বকাপ দেখাকালীন কোনও কিংবদন্তি ফুটবলারদের সাথে দেখা হয়েছে কিনা, এ নিয়ে কল্যাণ চৌবে বলেছেন, "আমি ভাগ্যবান যে অনেকের সাথে দেখা হয়েছে যেমন ইকের ক্যাসিয়াস, রবার্তো কার্লোস, কাফু, মার্কো মাত্তেরাজ্জি, লোথার ম্যাথাউস, রোনাল্ডো (সিনিয়র), মাসচেরানো প্রমুখ। আমার দেখা হয়েছে ডেভিড বেকহ্যামের সাথেও। এই ফিফা কিংবদন্তিদের বড় ভূমিকা রয়েছে গোটা বিশ্বে এই খেলাটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার।"
সদ্য চীনের ক্রীড়ামন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি। এই আলোচনার বিষয়ে কল্যাণ চৌবে বলেছেন, "আমি ২৫ বছর ধরে ভারতীয় ফুটবলের সাথে জড়িয়ে রয়েছি। প্রতিটা ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের মত, আমারও স্বপ্ন এই দেশ আরও উন্নত হবে। ফিফা ও এএফসির সাথে এআইএফএফ যে সম্পর্ক বর্তমানে রেখেছে তা খুবই ভালো। আমি ওদের সাথে অনবরত কথা চালিয়ে যাচ্ছি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, অ্যাকাডেমি, কোচ, একটি সঠিক পরিকল্পনা যাতে ভারতীয় ফুটবল আরও এগিয়ে যেতে পারে। আমার চীনের ক্রীড়ামন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। উনি অলিম্পিক কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। আপনারা জানেন চীন বর্তমানে বিশ্ব ফুটবল র্যাঙ্কিংয়ে ৭০তম স্থানে রয়েছে। আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে দুই দেশই এই ক্রীড়ায় উন্নতি করতে পারে। উনি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এক টুর্নামেন্টের জন্য আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমার কথা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল ফেডারেশন সভাপতির সাথে। আমি জানার চেষ্টা করেছিলাম কিভাবে ওরা ২০০২ সালে সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পেরেছিল।"
আগামী মরশুম থেকে আইএসএল ও আইলিগে উত্তরণ ও অবনমনের বিষয়ে কল্যাণ চৌবে বলেছেন, "এতে আইলিগের প্রতিযোগিতা বাড়বে। এর আগে, আইলিগে ভালো ফল করলেও খুব একটা লাভ হত না। দেশের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য, এফএসডিএল সহ সমস্ত স্টেকহোল্ডাররা মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আলোচনা করছি কিভাবে অনুর্ধ্ব ২১ লিগ, প্রতিষ্ঠানগত লিগ চালু করা যায়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করার পরিকল্পনা করছি। এই দেশে ফুটবল উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্র খোলা রয়েছে।"
সদ্য সৌদি আরবের সাথে বিশেষ চুক্তি সেরেছে এআইএফএফ, যার ফলে সন্তোষ ট্রফির নকআউট পর্ব খেলা হবে মরুদেশে। এরকম কি অন্য কোনও দেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ফেডারেশন? এই নিয়ে কল্যাণ চৌবে বলেছেন, "সন্তোষ ট্রফির চারটি ম্যাচ (দুই সেমি ফাইনাল, তৃতীয় স্থানাধিকারী ও ফাইনাল) আগামী ফেব্রুয়ারিতে জেদ্দায় আয়োজিত হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী এটি খেলোয়াড়দের মনোবল আরও বাড়াবে। আমার আলোচনা হয়েছে যাতে আমাদের থেকে বেশি ফিফা র্যাঙ্কিংভুক্ত দেশের সাথে প্রীতি ম্যাচ খেলা যায়। আমি সদ্য ফিফা সামিটে যোগ দিয়েছিলাম যেখানে ২১১ দেশের ফুটবল সংস্থার সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাথে আমার কথা হয়েছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং কখনই রাতারাতি ফল আশা করতে পারেন না। আমাদের উচ্চ র্যাঙ্কিংয়ে থাকা দেশগুলির সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। কেন উচ্চ র্যাঙ্কিংয়ের একটি দেশ ১০৬তম র্যাঙ্কে থাকা একটি দেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে?"