মারাদোনার দুই ঘর - আর্জেন্টিনা-ইতালি আজ মহাদেশ জয়ী, রাজপুত্রের প্রতি এটিই প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : মাত্র ২২ ঘন্টার ব্যবধানে ফুটবলের দুই সেরা মহাদেশের দুই একছত্র রাজত্ব তৈরি হল। একদিকে দক্ষিণ আমেরিকায় দীর্ঘ ২৮ বছর পর শৃঙ্গজয়, কোপা আমেরিকা জয়। আর এদিকে ৫৩ বছর পর ইউরোপ সেরা হল ইতালি। কিন্তু এই দুই জয়ের সাথে একটি মানুষের অত্যন্ত অগাধ সম্পর্ক। তার নাম দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।
গত বছর আর্জেন্টিনায় নিজের বাড়িতেই অকালমৃত্যু ঘটে ফুটবলের রাজপুত্রের। আজ যদি বেঁচে থাকতেন, নিঃসন্দেহে এই দুই দেশের সাফল্যকে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতেন। আর্জেন্টিনা তো তবুও তার নিজের দেশ, কিন্তু ইতালিও তার হৃদয়ে জায়গা রাখে। ইতালি, বা স্পষ্ট করে বললে নেপলসের মানুষ আজও মারাদোনাকে নিজেদের ঘরের ছেলে বলেই মানেন।
কিন্তু মানবে নাই বা কেন, নাপোলিকে বিশ্ব ফুটবলের দরবারে নিয়ে এসেছিলেন মারাদোনাই। ১৯৮৪ সালে নাপোলিতে যোগ দেওয়ার পরেই সেখানকার মানুষ যেন ঈশ্বর দর্শন করে নিয়েছিল। আর মারাদোনাও নেপলসকে নিজের ঘরই মনে করে ফেললেন। ১৯৮৬-৮৭ সালে প্রথম দক্ষিণ ইতালীয় শহরের ক্লাব হিসেবে সিরি আ খেতাব জেতে নাপোলি। আর তারপর এক সপ্তাহ ধরে নেপলসের রাস্তায় উৎসব চলে। বাড়িতে মারাদোনার প্রতিকৃতি আঁকা হয়, যা আজও রয়েছে। অনেক সদ্যোজাত শিশুর নাম রাখা হয়েছে মারাদোনার নামে।
নেপলস যেমন আপন করে নিয়েছিল মারাদোনাকে, আর্জেন্টিনীয় বরপুত্রও নিজের হৃদয়ের স্থান দিয়েছিলেন নাপোলিকে। আর এই অসাধারণ ভালোবাসার জেরে। ২০০০ সালে ১০ নম্বর জার্সিকে অবসর জানিয়ে দেয় নাপোলি। আর মারাদোনার মৃত্যুর পর নাপোলির স্টেডিয়ামকে তার নামে নামাঙ্কিত করা হয়। আজ ইতালির এই জয় যেন মারাদোনাকে সেই জয়টাই দিত, যা দিয়েছিল নাপোলির হয়ে প্রথম লিগ জয়।
আর আর্জেন্টিনা - সে নিয়ে আর কিই বা বলা যায়। যে দেশটিকে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয় হোক কিংবা যে আবেগ নিয়ে দেশের হয়ে খেলে গিয়েছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। কোচ হিসেবেও ২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের মধ্যে এক আগুনের স্ফূলিঙ্গের সঞ্চার করেছিলেন। সেই স্ফূলিঙ্গই আজ যেন অগ্নিবাণে পরিণত হয়েছে।
আজ মারাদোনা বেঁচে থাকলে নিশ্চই ফাইনালের পর মারাকানার ভিভিআইপি গ্যালারি থেকে ছুটে মাঠে ঢুকে পড়তেন, জড়িয়ে ধরতেন লিওনেল মেসিকে। কোচ-খেলোয়াড় তো দূর, মারাদোনাই যেন খেলোয়াড় হয়ে ট্রফি নিয়ে উল্লাস করতেন। আসলে মানুষটাই তো এমন। আজকের পেশাদার যুগে যিনি আবেগে চলতে পছন্দ করেন, আর এই কারণেই তো তিনি সেরা, তিনিই সেরা।