“তখন যদি ছুরি থাকত, নিজেকেই আঘাত করতাম”—১৯৯৪ সালের পেনাল্টি মিস নিয়ে রবার্তো বাজ্জিওর হৃদয়বিদারক স্বীকারোক্তি

Photo-X
এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) মুহূর্ত, ১৯৯৪ সালের ফাইনালের পেনাল্টি মিস—তিন দশক পেরিয়ে গেলেও সেটি এখনও তাড়া করে বেড়ায় রবার্তো বাজ্জিওকে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে সেই ফাইনালে, টাইব্রেকারে বাজ্জিওর শট বারের উপর দিয়ে চলে গেলে ইতালির জয়ের সব আশাও শেষ হয়ে যায়।
“তখন যদি আমার কাছে ছুরি থাকত, নিজেকে ছুরিকাঘাত করতাম। যদি বন্দুক থাকত, নিজেকেই গুলি করতাম। ওই মুহূর্তে আমি কেবল মরতে চেয়েছিলাম,” দ্য অ্যাথলেটিকসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই বললেন বাজ্জিও।
ওই মুহূর্তটি আজও এক ধরনের ট্র্যাজিক-হিরো সিম্বলিজমের প্রতিচ্ছবি। বাজ্জিও দাঁড়িয়ে আছেন, মাথা নিচু, হাত কোমরে—চোখে হতাশা, মনে শূন্যতা। পরে দেখা যায়, চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সেই বিশ্বকাপ ছিল বাজ্জিওর—সারাদিন তিনি আলোচনায় ছিলেন, তবে যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে নয়। “এটা ছিল আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। ফাইনালের আগে আমার বৌদ্ধ গুরু আমাকে বলেছিলেন, অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে এবং সবকিছু ঠিক শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত হবে। তখন বুঝতে পারিনি, উনি কতটা ঠিক বলেছিলেন,” আগে একবার বলেছিলেন বাজ্জিও।
যদি ইতালি বিশ্বকাপ জিতত, তাহলে তিনিও হয়তো পেলে ও ম্যারাডোনার সঙ্গে আলোচিত হতেন। তবে এ নিয়ে তাঁর বিশেষ আফসোস নেই। “আমি ওভাবে ভাবি না। নিজেকে কখনও ওদের পাশে বসাতে পারি না। আমি সবসময় নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখেছি। এই পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মাঝে আমিও একজন। ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়েছি, এটাই আমার সৌভাগ্য। আমি শুধু চেয়েছি মানুষকে আনন্দ দিতে,” বলেন বাজ্জিও।
তিনি আরও বলেন, “মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল আমার স্বপ্ন। ১০ বছর বয়স থেকে শুরু করে, ১৫, ২০—যতদিন খেলেছি, এই মানসিকতা নিয়েই খেলেছি।”
বাজ্জিও বলেন, ছোট ছোট বিষয়েই তিনি খুশি থাকেন। “হয়তো এইসব ব্যাপার অজানাই থাকা ভালো। জানলে হয়তো নিজে বদলে যেতাম। আমি চাই না বদলাতে। আমি সেই ১০ বছরের ছেলেটাই আছি এখনো। জীবন নিয়ে আমার আবেগ এখনও একই—সাধারণ, ছোট ছোট জিনিসেই আমি খুশি।”
সম্প্রতি ক্লাব বিশ্বকাপ উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন বাজ্জিও। সেখানে মেসির ৩৮তম জন্মদিনে সাক্ষাৎ হয় তাঁর সঙ্গে। বাজ্জিও তাঁকে উপহার দেন ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের নিজের জার্সি। “জার্সিটা দেখে মেসি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তিনি জার্সিটা আদর করে দেখলেন, তারপর ভাঁজ করে রাখলেন। দারুণ এক মুহূর্ত ছিল ওটা।”
মেসিও ইনস্টাগ্রামে এই মুহূর্ত ভাগ করে নিয়ে লেখেন, “কী অসাধারণ এক সাক্ষাৎ! ধন্যবাদ বাজ্জিও, এই মূল্যবান উপহার আর আমাদের আন্তরিক আলাপের জন্য। আপনি একজন কিংবদন্তি। আপনার জন্য সবসময় দরজা খোলা থাকবে।”