এশিয়ান কাপে জায়গা পাকা, এবার ব্লু টাইগ্রেসদের নজর ফিফা বিশ্বকাপে

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ অস্ট্রেলিয়া ২০২৬-এ ভারতের ঐতিহাসিক যোগ্যতা অর্জনের চারদিন কেটে গেছে, কিন্তু উদযাপনের রেশ এখনো কাটেনি। বরং দেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে উত্তেজনা দিন দিন আরও বেড়ে চলেছে।
যে ম্যাচে ভারত জয় ছিনিয়ে নেয়, তার অধিনায়ক এনগাংবাম সুইটি দেবী ম্যাচ শেষের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। সতীর্থদের আর কোচিং স্টাফের আলিঙ্গনের মাঝে তিনি নিজেকে সামলে নিতে পারেননি। তবে কয়েকদিন পর অবশেষে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে অনুভূতির কথা বললেন তিনি।
"সত্যি বলতে এখনো ঠিকভাবে প্রকাশ করা যাচ্ছে না," বললেন ভারতীয় সেন্টার-ব্যাক। "অনেক রকম অনুভূতির ঢেউ ছিল। শুরুতে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। আমরা একে অপরকে বারবার বলছিলাম, 'হ্যাঁ, এটা সত্যিই ঘটেছে। আমরা করে দেখিয়েছি।' এই অনুভূতি… ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। যেকোনও মহিলা ফুটবলপ্রেমী বা এই খেলায় যুক্ত কেউ বুঝতে পারবেন এটার মানে কী। এটা সত্যিই অভূতপূর্ব।"
এশিয়ান কাপের প্রথমবারের মতো এই 'যোগ্যতা' অর্জনের পর ভারতীয় দল বিশ্রাম নেওয়ার মুডে নেই। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর খুব বেশি সময় নষ্ট না করেই কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী মেয়েদের নতুন লক্ষ্যের কথা জানান। আবেগ, কান্না, আলিঙ্গনের মুহূর্ত পেরিয়ে ছেত্রী দলকে জড়ো করে বললেন, "একটি পর্বতের চূড়া আরেকটি পর্বতের পাদদেশ। আমাদের শেখা এবং উন্নতি করা থামানো যাবে না। আমরা এশিয়ান কাপে পৌঁছেছি, এখন লক্ষ্য বিশ্বকাপ। স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যেতে হবে।"
এই স্বপ্ন আগে বহুবার ধাক্কা খেয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে কষ্টকর ছিল ২০২২ সালে ভারতের আয়োজিত এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ থেকে দলকে সরিয়ে নিতে হওয়া—কোভিড সংক্রমণের কারণে। সেবার ভারত মাত্র একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছিল, ইরানের বিরুদ্ধে ০-০ ড্র। তাতেও বিশ্বকাপের থেকে তারা ছিল মাত্র তিন ম্যাচ দূরে। সেই স্বপ্ন তখনই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
"এখনো সেসব মুহূর্ত চোখে ভেসে ওঠে। আফসোসটা রয়ে গেছে," বলেছিলেন সঙ্গীতা বাসফোর, যিনি থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে ভারতের দুই গোল করে ইতিহাস গড়েছিলেন। আর সেই দুই গোলই আবার বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার আশা জাগিয়ে তুলেছে। এবার দ্বিতীয় সুযোগ।
সুইটি বললেন, “এটা এক ধরনের মুক্তির অনুভূতি। গতবার, যখন ভারতেই টুর্নামেন্ট হয়েছিল, তখন কোভিডের কারণে আমরা খেলতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা সব ম্যাচ খেলেছি, সমস্ত কিছু পার করে উঠেছি, এবং যোগ্যতা অর্জন করেছি। ২৩ বছর পর আমরা এটা করে দেখালাম। এবার বিশ্বকাপের স্বপ্ন বেঁচে আছে।”
তাও আবার এমন এক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, যারা ভারতের চেয়ে ফিফা র্যাংকিংয়ে ২৪ ধাপ উপরে, যারা ২০১৪ এশিয়ান গেমসে ভারতকে ১০-০ গোলে হারিয়েছিল, যারা ইতিমধ্যেই দুইবার বিশ্বকাপে খেলেছে—সেই থাইল্যান্ডকে হারিয়ে এসেছে ব্লু টাইগ্রেসরা। আর সেই দলের কোচ ফুতোশি ইকেদা—যিনি ২০২৩ বিশ্বকাপে জাপানকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিলেন, এবং সেই টুর্নামেন্টে পরবর্তীতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্পেনকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিলেন! অথচ সেই ফুতোশির দলও থামাতে পারেনি ভারতের গর্জন।
এই ঐতিহাসিক ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা জীবনের অন্যতম বড় স্মৃতি হয়ে থাকবেন সুইটি দেবীর জন্য। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তাঁর নামের পাশে ৬৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ! কোচ ছেত্রী অবশ্য বাছাই পর্বে ম্যাচভেদে অধিনায়কত্ব ঘোরান। মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে সুইটি ছিলেন অধিনায়ক, টিমর-লেস্টের বিরুদ্ধে সঙ্গীতা এবং ইরাকের বিরুদ্ধে সঞ্জু।
‘লিডার’ বদলালেও, সুইটির কাছে এই সাফল্য গোটা দলের। মাঠে বা মাঠের বাইরে, প্রত্যেকের অবদান সমান বলেই মনে করেন তিনি।
"অধিনায়ক হওয়াটা অবশ্যই গর্বের বিষয়, কিন্তু এটি শুধুমাত্র আমার একার অর্জন নয়। আমি শুধু আর্মব্যান্ডটা পরে ছিলাম, দল আমাকে সেই দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু সাফল্যটা সবার—খেলোয়াড় থেকে কোচিং স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ—সবাই মিলে এটা সম্ভব করেছে। এটা পুরো দলের এবং পুরো দেশের জয়।"
এখন অপেক্ষা ২৯ জুলাইয়ের—সেদিনই এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ অস্ট্রেলিয়া ২০২৬-এর ড্র অনুষ্ঠিত হবে। ১২টি দলকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হবে। ভারত রয়েছে পট ৪-এ। ফলে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে—
পট ১ থেকে: অস্ট্রেলিয়া, জাপান বা ডিপিআর কোরিয়া
পট ২ থেকে: চীন, কোরিয়া রিপাবলিক বা ভিয়েতনাম
পট ৩ থেকে: ফিলিপাইন, তাইপে বা উজবেকিস্তান
প্রতিটি গ্রুপের প্রথম দুই দল এবং সেরা দুই রানার্স-আপ যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। চারটি কোয়ার্টার ফাইনাল বিজয়ী দল সরাসরি ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ ব্রাজিল ২০২৭-এ খেলার সুযোগ পাবে। বাকি চার কোয়ার্টার ফাইনাল পরাজিত দল খেলবে প্লে-অফে, যেখান থেকে আরও দুটি দল যাবে বিশ্বকাপে। এছাড়াও, প্লে-অফ হারা দুই দল পাবে ইন্টার-কনফেডারেশন প্লে-অফে যাওয়ার সুযোগ।