ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নট ফর সেল, টার্মশিট, ফাইনাল এগ্রিমেন্ট, নানা প্রশ্ন নিয়ে এক্সট্রা টাইম ওয়েবের মুখোমুখি দেবব্রত সরকার।

•দমটা তো শ্রী সিমেন্ট দেখাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে,লগ্নিকারী সংস্থা পাঞ্জাবের দল নিয়ে আই এস এল খেলতে পারে। আপনারা যে দমের কথা বললেন কথায় কথায়, সেই দম কি শেষ?
- আজ এক দৈনিক সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, লগ্নিকারী সংস্থা স্বীকার করে নিলেন, আমরা এতদিন যা বলছিলাম, সেটাই সত্য।
গত ১০-১৫ বছরের ভিতরে ক্লাব যত লড়াইয়ে সামিল হয়েছে,সমস্ত বাধা পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। আমি আশা রাখি ক্লাব এই লড়াইয়েও সঠিক পথে এগোবে। যারা আজকে বিরূপ মন্তব্যের চর্চা করছে তারাই বলবে এরকম ভুল কাজ এই ক্লাব কমিটি কি করে করে গেলো। আমরা এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যে পরের প্রজন্ম আমার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে পারে। তাই যে সকল বন্ধুরা এটা নিয়ে চর্চা করছে, তারা নিজেদেরকে বাস্তব সম্মত করে লিখুক। সত্যি-মিথ্যে জানি না, এর সাথে আমরা যুক্ত নই, তবে আমাদের ক্লাবের বিরুদ্ধাচারণ করবার জন্য দুই-একটা বেসরকারি সংস্থা আছে যারা নাকি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিরোধিতা করে। কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ তাদের ব্যবহার করে। সদস্যরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছে, সমাজের বিশিষ্ট লোকজনেরা এখানে বসে আছে। তাদের বোকা ভাববার, স্বার্থানেষী ভাববার কোনো কারণ নেই। এটা ভুলে গেলে চলবে না গত একশো বছর ধরে দায়িত্ব নিয়ে ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত কর্মকর্তারাই।
• আপনাদের কাছে সই করবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো নির্দেশ এসেছে ?
- না, এরকম নির্দেশ আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করার না সাহস আছে, না ইচ্ছে আছে, আর এরকম শিক্ষাও পাই নি যে মুখ্যমন্ত্রীর কথা অমান্য করার।
• নির্দেশ এলে কি করবেন ?
- নির্দেশ এলে প্রথমে আমরা ওনার সময় চাইবো। তবে উনি যা আদেশ দেবেন আমাদের কর্মসমিতির মান্যতা নিয়ে সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। উনি কিছু উপদেশ এই কাজ চলাকালীন আমাদের দিয়েছিলেন। ক্লাবের অসম্মান হতে না দেওয়া, ক্লাবের ভালো-মন্দ বুঝে নেওয়া, ক্লাবের ক্ষতি না হতে দেওয়া, এটা তোমাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে, প্রতিষ্ঠানকে স্যাক্রিফাইস করে এমন কোনো কাজ করা উচিত না, ওনার থেকেই এটা শিক্ষা নিয়েছি। উনি বলেন, "জয় বাংলা", আমরা বলি "জয় বাংলা, জয় ইস্টবেঙ্গল"।
• তাহলে আপনারা সই করছেন না কেন ?
- দেখুন, মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে তো সম্ভব না, একটা কন্ট্রাক্ট অক্ষরে অক্ষরে পড়ে দেখার এটা সর্বজন বিদিত যে এটাকে রূপ দেওয়ার জন্য তাই উনি বিশিষ্ট ভদ্রলোক তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা ও বিশ্ব মজুমদারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এনারা দুজনেই আমাদের এই চুক্তিপত্রের ভিতরে মধ্যস্থাকারী রূপে ছিলেন। যখন এই এগ্রিমেন্টের কপি টা এলো তখন বেলা আড়াইটে। সোয়া তিনটের সময় আমার কাছে ফোন আসে, যে এরকম টার্মশিট এসেছে ওটা দেখে ঠিক করো। (এই চুক্তিপত্র নিয়ে পর্যালোচনা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন অজিত ব্যানার্জি, সৈকত গাঙ্গুলি এবং সদানন্দ মুখার্জি) আমি সৈকত গাঙ্গুলিকে জানালাম, টার্মশিট এসেছে ওটা দেখে নাও। সৈকত গাঙ্গুলি প্রথমে দেখে বললো, ও কিছু পায় নি। তার দুই এক মিনিটের ভিতরে ও জানালো যে ও পেয়েছে। আমি বললাম, তুমি দেখো আমাদের কি কি পরিবর্তন দরকার। ও সম্ভবত ১১-১২ টা পয়েন্ট মার্ক করেছিল, যারমধ্যে সবচেয়ে বড় পয়েন্টটা ছিল, এক তরফা বিচ্ছেদ, ক্লাব তাঁবুর ব্যবহার, স্পোর্টিং রাইটস প্রভৃতি । আমরা সে দিনই বলেছিলাম ক্লাব তাঁবু লোগো প্রভৃতি উভয় পক্ষ ব্যবহার করবো। ফুটবল ছাড়া অন্যান্য স্পোর্টিং একটিভিটিস ক্লাব রুল পারমিট করেনা। পৃথিবীর কোথাও এরকমটা আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তখন তরুণ জি, বিশিষ্ট ভদ্রলোক, উনিও বুঝতে পারলেন, একতরফা বিচ্ছেদটা সঠিক নয়। এছাড়াও বহু পয়েন্ট ছিল। তখন তরুণ জি আমাদেরকে বললেন, "দেখুন এটা তো দুই বছরের লক-ইন পিরিয়ড, এতো টেনশন নেবেন না, পরে আমরা ওদের সাথে কথা বলে নেবো, দুই বছরের জন্য মানতে অসুবিধে নেই"।
খেলার একটা তাগিদ ছিল, সবার মনের ইচ্ছা ছিল, মুখ্যমন্ত্রী নিজে চেয়েছিলেন যে আমরা অংশগ্রহণ করি, এসব ভেবেই, আমরা বললাম, ঠিক আছে। তখন দিদির সাথেও কথা হলো, উনিও বললেন, "যে তরুণ জি'র উপর ভরসা রাখো, করো। এবছরটা তো শুরু করো, তারপর আমি আছি তখন দেখা যাবে"। আমরা এই যে ভরসা, আশ্রয়, দিদির থেকে পেয়েছি, সেটা জীবনে ভোলার না। পরবর্তীকালে যখন এই মূল এগ্রিমেন্ট নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হলো, তখন, তরুণ জি এবং বিশ্ব মজুমদার দুজনেই আমাদের তরফে সওয়াল করেন বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে। বিশ্ব মজুমদারের অফিসে একটা মিটিং ঠিক করেন কোম্পানির লিগ্যাল হেড খান্ডেলওয়ালজি। আমাদের ও যেতে বলেন। আমি, অজিত ব্যানার্জি, সদানন্দ মুখার্জি সেখানে যাই। ওখানে তরুণ জি'র সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কিছু সমাধানের রাস্তা বের করেন উনি। যেটাতে ক্লাব এবং কোম্পানি, দু তরফেই সমস্যা মেটানোর পথ খোলা ছিল। ওখানে আমরা রাজি হয়ে যাই। তিনটি শর্ত, যেমন একতরফা বিচ্ছেদ চলবে না, দু তরফেই বিচ্ছেদের সুযোগ থাকবে, বিচ্ছেদের পর সমস্ত রাইটস ক্লাবকে ফেরত দিতে হবে। এছাড়া ক্লাব প্রাঙ্গন এবং লোগোর কি হবে সেটাও সমাধানের রাস্তা বের করা হয়। তরুণ বাবুর সাজেশনে কোম্পানির লিগ্যাল হেড খান্ডেলওয়াল জি তখন সবার সামনে মৌন সম্মতির লক্ষণ দেখালেও পরে সেগুলোকে মান্যতা দিলেন না। কিছুদিন পর আবার তরুণ জি এবং বিশ্ব মজুমদারের উদ্যোগে টেলিফোনিক কনফারেন্সে হয়। ডাক্তার প্রণব দাসগুপ্ত, অজিত ব্যানার্জি আর সদানন্দ মুখার্জিকে নিয়ে ওই আলোচনায় যেটা উঠে এলো, তরুণ জি সেটাতে মান্যতাও দিলেন। কিন্তু তার সুফল আজ অবধি আমরা পাই নি। হঠাৎ করেই দেখলাম, অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়ে গিয়ে আবার প্রথম থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের কি করার আছে বলুন তো ?
• আপনারা বলছেন টার্মশিট আর ডেফিনিটিভ এগ্রিমেন্টের ভিতরে বিস্তর ফারাক, ওরা বলছে কোনো ফারাক নেই, এরকমটা কেন? এত বড় ভুল কোন পক্ষ থেকে হবেই বা কেন?
- আজকে বাঙ্গুর সাহেব বলেছেন, "ওরা তো EGM করে আমাদের দিয়েছে"। উনি ঠিকই বলেছেন, আমরা EGM করে দিয়েছি প্রথম এগ্রিমেন্ট/টার্মশিট । কিন্তু দ্বিতীয় এগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে যে বিস্তর ফারাক, সেটা সদস্যরা এখনো দেখেনি। আমরা চাই আপনাদের সামনেই সই করে দিতে। সম্পর্কটা এখন আমাদের থেকে আপনাদের সাথেই ভালো। এগ্রিমেন্টটা সাংবাদিকদের সার্কুলেট করতে বলুন। সাংবাদিকরাই দেখে নেবে, সত্য-মিথ্যে কোথায়।
•তাহলে কি আপনারা আদালতে যাবেন?
- না এরকম ইচ্ছে আমাদের এখুনি নেই। তবে ওনারা যদি আদালতে নিয়ে যান, যাবো। আদালত যা বিচার করবে মেনে নেবো।
• বাঙ্গুর সাহেব বলছেন আগে সই, তারপরে আলোচনা করে ঠিক করবো, আপনাদের মন্তব্য কি?
- দিল খুলে প্রথম এগ্রিমেন্টে সই করেছি। বিশ্বাস করে স্পোর্টিং স্পিরিট দেখিয়ে একটা সই করে চোখ খুলে গেছে। টার্মশিটে লেখা একটা শর্ত যে জয়েন্ট অপারেট হবে, সেটা কি ওনারা মেনেছেন? মানেননি। আজ অবধি কোনো ১ টি কাজ ক্লাবের সাথে আলোচনা করে করেননি। তাইতো প্রশ্ন, টার্মশিট ডায়লেট করলো করা ? ক্লাব না SCL? সই আবার করার সেই বিশ্বাস ওনাদের উপর আর নেই। সদস্যরাই ঠিক করবেন আগামী দিন ক্লাবের ভবিষ্যৎ কি হবে ।
•ওনারা বলছেন, এতো টাকা খরচ করেছি, এই ব্যাপারে কি বলবেন? সত্যি তো টাকা তো শ্রী সিমেন্ট খরচ করেছে, কে ফেরত দেবে সেই টাকা?
- ওরা তো টাকা খরচ করে মাইলেজ নেবেন, সেটাই তো সারা পৃথিবীতে সমাদৃত, সেটার জন্যই তো এসেছে। আমাদের ক্লাব না হয়ে পাড়ার বালক সংঘ হলে কি ওনারা আসতেন? আসতেন না। আজকে উনি প্রচারের শিরোনামে আছেন। যেটা উনি কোনোদিনই উপভোগ করেন নি, ব্যক্তিগত ভাবে বা কোম্পানীগত ভাবে। এই মাইলেজ পাবে কোথায়? উনি যদি ৫ টাকা খরচ করে থাকেন ২০ টাকার মাইলেজ পেয়েছেন। তাহলে তো ১৫ টাকা ক্লাবকে ফেরত দেওয়া উচিত।
•আপনারা বলেছেন এসাইন করে দেবেন তাই টার্মশিটে সই করেছেন, এখন দিচ্ছেন না কেন?
- হ্যা, আমরা এখনো বলছি তো এসাইন করবো, কিন্তু পারপিটুয়াল করবো না। ওরা বলছেন, আমাদের লোগোটা এসাইন করতে, কিন্তু আপনি বলুন তো আপনার পত্রিকার লোগোকে আপনি অন্যত্র হস্তান্তর করতে পারেন ? পারেন না। এই লোগো আমাদের অস্তিত্ব, অহংকার, লড়াইয়ের রসদ। আপনি ভাবতে পারেন এটা দিতে হবে অন্যত্র, ফেরত পাবো না কখোনো!
SCL এর লোগোটা ওদের করতে ক্লাব অনুমতি দিয়েছে, ব্যবহার করছে ওরা । তাহলে আমাদের লোগো গুলো ওদের প্রয়োজন কেন? কারণটা বলতে পারেন ? আমি কি লোগো অন্যত্র হস্তান্তর করতে পারি ? দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে কোনো শুভবুদ্ধি ও বাস্তব চেতনা সম্পন্ন মানুষ এই এগ্রিমেন্টে দেখলে শিউরে উঠবেন, চর্চা তো দূরে থাক।
শ্রী সিমেন্ট কি তার লোগোটা আমায় দেবে ব্যবহার করবার জন্য? দেবে না। শ্রী সিমেন্টের লোগোটা কি অন্য কাউকে বিক্রি করবে? করবে না। তাহলে আমাদের এই লোগোটা যেটা আমাদের পূর্বসূরিরা করে গেছেন, আর যুগ যুগ ধরে যে লোগোটা আমাদের উত্তরসূরিরা বহন করে নিয়ে যাবেন, সেই লোগো তো আমাদের কাছে মাতৃ সম। প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেরই তো একটা লোগো আছে, সেটা প্রতিষ্ঠানের কাছে মা'র মতো। সেটি বিক্রি করে দেওয়া বা পারপিটুয়াল করে দেওয়ার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমরা ইউসার রাইটস দিতে পারি শুধুমাত্র। ওরা বলছে টার্মিনেশনটা ওদের একতরফা, ওরা যখন টার্মিনেট করবে সেটা আমাদের কাছে ফেরত আসবে না কোনো দিন। আপনি বলুন তো, এটা আমরা কখনো দিতে পারি? দেওয়া সম্ভব?
• লোগো নিয়ে সমস্যাটা বুঝলাম, তাহলে বাকি গুলো দিচ্ছেন না কেন?
- সেটার ক্ষেত্রেও একই জিনিস, এই আর্মি ল্যান্ড, আমাদেরকে ওদের কাছে এসাইন করে দিতে হবে। যেটা আমাদের না, সেটা এসাইন করবো কি ভাবে? আমরা বলেছিলাম, আমরা জয়েন্টলি ব্যবহার করবো। এতে অসুবিধেটা কোথায় ছিল ? সেটা না করে ওদের কাছে লিখে দিতে হবে, আর ওরা কখন আমাদের প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারিকে সময় দেবে তখন আমরা ঢুকবো। ভাবুন তো, ক্লাবের মেম্বার অফিসটা আমাদেরকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। কল্পনা করতে পারেন? আমরা কাস্টোডিয়ান, সদস্যরা যদি বলে মানবো। সদস্যদের ক্লাব, তারা আমাদেরকে নির্বাচিত করে এনেছে, আমরা হলাম কাস্টোডিয়ান। কাস্টোডিয়ান কখনো বিক্রি করে দিতে পারে না। এটা ভাবতে হবে সবাইকে।
স্পোর্টিং রাইটস, এটা নিয়েই একশো বছর বেঁচে ছিল। ওরা টার্মিনেট করে চলে যাওয়ার সময় যে কাউকে দিয়ে দিতে পারে, আমরা কিছু বলতে পারবো না। কোনো চরম শত্রুর সাথেও এরকম এগ্রিমেন্ট হবে না। আমাদের কোনো অধিকার নেই ক্লাব বিক্রি করে দেওয়ার।
• তার মানে তো সমস্যা গভীর। তাহলে উপায় কি?
- মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বিস্বস্ত যে কোনো ২ জন মানুষকে দিন যারা শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাব ও এই চুক্তির গভীরতা অনুধাবন করতে পারবেন। নেগোশিয়েট যারা করছিলেন, সেই দু জনকেই এই আলোচনায় আমাদের সাথে থেকে এই ব্যাপারটা করা যেতে পারে। ভাবুন তো, আজ দুই থেকে তিন মাস ধরে, কখনও নাম প্রকাশ করে কখনও বা নাম প্রকাশ না করে ক্লাবকে মেলাইন করা হয়েছে। এবং কিছু বেসরকারি সংস্থাকে লাগানো হয়েছে ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রচার করবার জন্য। যদিও আমাদের কিছু যায় আসে না, এরকম বেসরকারি সংস্থা পয়সা দিয়ে প্রচুর পাওয়া যায়। এই খেলাটা কিন্তু ফুটবলকে হত্যা করছে, এটা ঠিক না। কই সে তো আমাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের সাথে এরকম চুক্তি হয় নি।
বাঙ্গুর সাহেবের মতো বিশিষ্ট ভদ্রলোক, "আগে সাইন, পরে কথা", "মোহনবাগানের তো অসুবিধে হয় নি, আমাদের কেন অসুবিধে হচ্ছে" এরকম বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করছেন। তিনি কি জানেন না, মোহনবাগানের আর আমাদের এগ্রিমেন্টে তো এক নয়। তাদের স্পোর্টিং রাইটস দেওয়া আছে শুধুমাত্র ফুটবলকে, আর তাদের মাঠটা ও নেওয়ার জন্য তাদের পারমিশন নিতে হবে আর তার মেইনটেনেন্স কস্ট ও দিতে হবে। ওরা আমাদের মাঠটা নিয়ে নিচ্ছে। আর আমাদের মাঠ কর্মী যারা আছে, তাদেরকেও ওরা কনসিডার করবে কিনা পরে ভেবে দেখবে বলেছে। যারা ২৫ বছর ৩০ বছর ধরে ক্লাবের কাজ করে যাচ্ছে, তাদেরকে এই এক বছর খোঁজ খবর নেওয়া তো দূরে থাকে, বেতন পর্যন্ত দেয় নি। কোনো প্লেয়ারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বলেছে ? নাকি কোনো কোচের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বলেছে ? না কোনো স্টাফের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বলেছে ? না কোনো প্রেস কনফারেন্স করছে সেখানে আমাদেরকে বলেছে ? না কোনো ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করেছে ?….গত এক বছরে এর কিছুই তারা করে নি। অথচ টার্মশিটে লেখা আছে,"জয়েন্ট এক্ট"। টার্মশিটকে মান্যতা দিয়েছে ওরা? না আমরা ? আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না। সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে অপপ্রচার করার চেষ্টা এর পূর্বেও বহু লোক আমাদের বিরুদ্ধে করেছিল, কিন্তু সেসব ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিলো। এবারেও সেটাই হবে। সংবাদমাধ্যমই যদি ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্ধারক হয়, তবে তো সরকারের দরকার নেই, প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালানোর দরকার নেই, তারাই নিয়ন্ত্রণ করুক। সংবাদমাধ্যমের কাজ সত্যটাকে উদ্ঘাটন করে সবার সামনে তুলে ধরা। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে সেটা হচ্ছে না বলে আমাদের মনে হয়।
আমরা আমাদের জায়গায় আছি, আমরা আমাদের জায়গা থেকে সরছি না। আমাদের কর্মসমিতির সবাই, ক্লাবের পক্ষে এই অসম্মানজনক এগ্রিমেন্টে সই করবনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা আমাদের কালেক্টিভ সিদ্ধান্ত। যদি দুপক্ষের মতামত নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
•কোয়েসকেও রাখতে পারলেননা। আগের বিনিয়োগকারী যারা এসেছিলেন, তাদের নিয়েও অনেক কন্ট্রোভার্সি হয়েছিল, এটা বার বার কেন হচ্ছে শুধুমাত্র আপনাদের সঙ্গে? কর্পোরেট জগতে কিন্তু বার্তা খারাপ যাচ্ছে। বারবার বিনিয়োগকারী সংস্থা পেয়ে যাবেন এই গ্যারান্টি কোথায়?
- দেখুন আগের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কি নিয়ে মতোবিরোধ হয়েছিল, কেউ কি বলতে পারবেন ? বিষয়টা চারদিক থেকে তৈরী করা হয়েছিল। যেটা হচ্ছিলো, সেটা বিচ্ছেদ নিয়ে। এক বছর আগেই তারা আমাদেরকে নোটিশ দিয়েছিলো, তাদের শেয়ার হোল্ডাররা পার্মিট করছেন না, তাই তারা বিচ্ছেদ চাইছেন। যারা সবচেয়ে বেশি শোরগোল করেছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, তারা ক্লাবকে সবথেকে বেশি ক্ষতি করেছেন। আগের বিনিয়োগকারী ক্লাবের উপর ৩-৪ কোটি টাকা লায়াবিটিস দিয়ে চলে গেছেন। যারা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকে, সবাই চেষ্টা করে তাদের ব্যবহার করার। এখানেও তাই হচ্ছে। আমরা সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে কেয়ারটেকার এর ভূমিকা পালন করি। আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষদের উপর ক্ষমতাবান মানুষদের যুদ্ধ আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু আমাদের শরীরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের রক্ত বইছে। বাঙালদের লড়াই করার মানুষিকতা আর জেদের সামনে আর্থিক ক্ষমতাবান মানুষেরা কখনোই ছড়ি ঘোরাতে পারবেন না। ইস্টবেঙ্গল আর বাঙাল সমর্থকদের সাথে নিয়ে এই ঐকবদ্ধ লড়াইয়ে তাদের জিত হবেই। ছত্রে ছত্রে লেখা আছে Assighnment irrevocable and perpetual - চিরতরে তাঁবু, লোগো দিয়ে দিতে হবে, আর ফেরত আসবে না ক্লাবে।
•সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ কিছু বিরোধিতা হচ্ছে, কেন হবেনা বলতে পারেন ? সাধারণ সমর্থকরা এতসব বুঝবে কেন? তারা তো দলের সাফল্য দেখতে চায়। ইস্টবেঙ্গলকে আই এস এলে চায়।
- যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই একটা বিরোধী শক্তি থাকা উচিত। সেটাই প্রশাসনকে ভালো কাজ করতে শক্তি যোগায়। এরাই আমাদের প্রেরণা। আমি তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি, খালি সোশ্যাল মিডিয়াতে না থেকে ক্লাবের পক্ষে সামাজিক কর্মযজ্ঞে বা ক্লাবের কোনো ভালো কাজ করা যায় কিনা, সাথে সাথে এটা ভাববার ও অনুরোধ রাখলাম।
•এই যে আপনারা বসতে চাইছেন, তাহলে ওনারা বসছেন না কেন, তার মানে কি সব আলোচনা শেষ?
- আপনারাই বুঝে দেখুন না, যারা কাজটা করব না ভাবে, তারাই উপেক্ষা করে। আমরা বসতে চেয়ে সবসময় সমাধানের রাস্তা খোঁজার চেষ্টা করছি। ওনারা বলছেন এজেন্ডা আমাদের দেওয়া হোক। আমরা এজেন্ডা দিয়েছি। ওনারা বলছেন আমি পাই নি। তাহলে এই যে 'দিয়েছি' আর 'পাইনি' এটা তো একমাত্র টেবিলে সামনাসামনি বসেই ঠিক করা যাবে, না হলে আমরা পাঠাবো কোথায় ? তাহলে একটাই উপায়, সামনাসামনি হাতে দিয়েই আলোচনায় বসার। কেন বসছেন না ? বাঙ্গুর সাহেব নাকি দেড় মাস এখানে ছিলেন। ওনার যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকতো উনি তো আমাদেরকে ডেকেও কথা বলতে পারতেন। কি সমস্যা হচ্ছে, দেখি আমরা একসাথে মিলে কাজ করতে পারি কিনা, কই, ডাকেন নি তো ? বলেন নি তো । কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার ইন্টারভিউ বেরোচ্ছে, বলা হচ্ছে এগ্রিমেন্টে সই না করলে টিম করবো না। কেন টিম করবেন না ? তাদের কাছে রাইটস রয়েছে। কেন তাহলে সঠিক সময়ে রাইটস ক্লাবকে ফেরত দেয় নি? এর জবাব সভ্য-সমর্থকদের কাছে ওনাকে দিতে হবে। কেন ক্লাবকে জানানো হয় নি এই এগ্রিমেন্ট সই না করলে টিম করবো না ? কেন আমাদের সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে হচ্ছে ? আপনারা বলেন আপনারা কর্পোরেট । তাহলে দিনের পর দিন সংবাদমাধ্যমে বলে চলেছেন, এটা হচ্ছে না, সেটা হচ্ছে না…এটা কি কর্পোরেট কালচার ? আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
আমাদের যখন আই.এস.এল'এ খেলার প্রয়োজন ছিল, তখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অবদানের জন্য আমরা ওনার কাছে ঋণী। ঠিক একই রকম ভাবে, ইনভেস্টর কিন্তু পাড়ার ক্লাব বা পঞ্চম ডিভিশনের ক্লাবের জন্য আসে নি, একশো বছরের একটা ক্লাবের সাথে নিজেদেরকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছে ওনারা। যেটা কোটি কোটি টাকা দিয়েও পেতেন না। ওনার শেয়ার দড় বেড়েছে, পাবলিসিটি বেড়েছে। ওনাদের বাংলা তথা ভারতের কটা লোক চিনতেন আমার ধারণা নেই, কিন্তু বাংলা তথা ভারতবর্ষ জুড়ে ওনাদের চেহারা, নাম এবং কোম্পানির নাম, সবটাই প্রচারে এসেছে।
গত বছর আমাদেরকে কোনো ব্যাপারে ডাকে নি, আমরাও ইন্টারফেয়ার করিনি। শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন ওনাকে কিছু ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। এই এগ্রিমেন্টের পরে আরেকটা এগ্রিমেন্টে সই করতে হবে, সেটা লেখা আছে বটে, কিন্তু কোথাও লেখা নেই সেটা বাধ্যতামূলক। যদি বাধ্যতামূলক না থাকে, তবে সেখানে কি শাস্তি হবে সেটাও ওখানে দেওয়া আছে। আমরা সেই শাস্তি নিতে রাজি আছি। আপনারা টিম করে চালান না, যুগ যুগ ধরে চালান, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বাকি জিনিসগুলো পেতে গেলে আপনাদের আমাদের শর্তেরও কিছুটা মেনে নিতে হবে, এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। এটাও মাথায় রাখতে হবে শতবর্ষ পেরোনো একটা প্রতিষ্ঠানের থেকে সদস্য-সমর্থক, কর্মকর্তা, ইনভেস্টর কেউই বড় নয়। সবার আগে প্রতিষ্ঠান, তার পরে সব।
এটা বালক সংঘ ক্লাব না, এটা কোটি কোটি সমর্থকদের ক্লাব।