কাঁটাচামচে করে ইলিশ খেতেন চুনী গোস্বামী!

নিজস্ব প্রতিনিধি: চার বছর টাটা ফুটবল একাডেমিতে ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম ঘোষ। খুব কাছে থেকে চুনী গোস্বামীকে দেখেছেন তিনি। সেই সময় টাটা ফুটবল একাডেমির ডিরেক্টার ছিলেন চুনী গোস্বামী। ঠিক একইভাবে স্পোর্টস কাউন্সিলে থাকার সময় প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলারকে দেখেছেন অর্জুন পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার শান্তি মল্লিকও। তাঁরা সেই সব দিনেরই স্মৃতিচারণা করলেন এক্সট্রাটাইম বাংলা ফুটবল শো'তে এসে।
অর্জুন পাওয়ার পর
শান্তি মল্লিক: মহিলা ফুটবলার হিসাবে অর্জুন পুরস্কার পাওয়ার পর চুনী গোস্বামীর সঙ্গে আমার একদিন দেখা হল। উনি আমায় বললেন, তোমার ভাল খবরে আমার মন ভরে গেল। আরও বড় হও। আমি কালীঘাটের মেয়ে। ওনার শেষকৃত্য সম্পন্ন হল কালীঘাটেই, কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। অথচ এত কাছে থেকেও ওনাকে শেষবারের মত চোখের দেখা দেখতে পেলাম না।
পায়েস করে খাওয়ান
গৌতম ঘোষ: আমরা যখন টিএফএ'তে খেলছি, চুনী স্যার তখন ডিরেক্টার। একদিন স্যারের সঙ্গে দেখা করতে স্যারের স্ত্রী টিএফএ'তে এলেন। চুনী স্যার তখন তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, "ওদের কিছু ভাল রান্না করে খাওয়াও। এখানকার কুকেরা তো ভাল রান্না করতে পারে না। অবশ্যই পায়েস কর ওদের জন্য।"
কাঁটাচামচে করে ইলিশ খাওয়া
গৌতম ঘোষ: উনি ছিলেন আমাদের উত্তম কুমার। রোজ সকালে উঠে দাড়ি কেটে ফ্রেশ হতেন। তারপর চক্কর দিতে বের হতেন। এক প্যান্ট, জামা দু'বার পড়তে কখনও দেখিনি। একদিন আলোক দাসের ঘরের সামনে গিয়ে দেখি উনি দাঁড়িয়ে পড়েছেন। মন দিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছেন। আলোকের অভ্যাস হল সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই রবীন্দ্র সংগীত চালানো। আমাদের বুঝতে অসুবিধা হল না উনি সঙ্গীত ভালোবাসেন। উনি খেতেও খুব ভাল বাসতেন। একদিন জমিয়ে খাওয়া হচ্ছে। ইলিশ মাছ হয়েছে। উনি দেখি কাঁটাচামচে দিয়ে ইলিশ মাছ খাচ্ছেন। আমরা দেখে তো অবাক। যেখানে হাত দিয়েই ভাল করে ইলিশ মাছের কাঁটা ছাড়ানো যায় না। সেখানে উনি কাঁটাচামচে করে খাচ্ছেন কী করে!
সাও পাওলো
গৌতম ঘোষ: আমাদের একাডেমিকে আরও উন্নত করার জন্য টাটা থেকে চুনী স্যারকে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে পাঠানো হয়েছিল। যাতে ওখান থেকে ঘুরে এসে উনি আরও ভাল ভাবে একাডেমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। উনি খুব দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।
ব্রিটিশ চুনী
গৌতম ঘোষ: একবার জার্মান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এফসি কোলনের আধিকারিকরা এলেন আমাদের এখানে। ওদের সঙ্গে চুনী স্যারের কথোপকথন দেখেছিলাম। দেখে মনে হয়েছিল জার্মানদের সঙ্গে কোনও ভারতীয় নয়, এক ব্রিটিশ কথা বলছেন। এমনিতেই জার্মানিরা উন্নাসিক হয়। কিন্তু সেদিন চুনী স্যারের বডি ল্যাঙ্গুয়েজও দেখেছিলাম।
পারফেকশন
গৌতম ঘোষ: একদিন হাবিব স্যারের অনুমতি নিয়ে মাঠের মধ্যে এলেন চুনী স্যার। আমাদের দেখিয়ে দিলেন কীভাবে সেন্টার করতে হয়! বললেন, যে পায়ে শট করছি, সেই পায়ে নয়, বলের পাশে যে পা'টা রাখছি, সেটা খেয়াল কর। এইভাবে আমাদের অনেক কিছু দেখিয়ে দিতেন। তবে উনি ডিরেক্টার হলেও, কোচ হাবিব স্যারের অনুমতি না নিয়ে মাঠে ঢুকতেন না।