পরিবারের অসম্মতি সত্ত্বেও স্বপ্নকে ছোয়ার লড়াই, এবার আইপিএল দাপাবেন মুকেশ

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : সাধারণত, এখনকার সময়ে, আইপিএল খেললে তবেই জাতীয় দলের সার্কিটে আসা সম্ভব হয় কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মুকেশ কুমার। বাংলার হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার কেবলমাত্র তার ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মেন্সের জোরে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন।
এবার নিজের পারফর্মেন্সের আরও বড় পুরষ্কার পেলেন মুকেশ। শুক্রবার আইপিএল ২০২৩ এর মিনি নিলামে দিল্লি ক্যাপিটালস ৫.৫০ কোটি টাকায় তুলে নেয় এই পেসারকে, যা তার ভিত্তিমূল্য থেকে ২৭ গুণ বেশি। এরই সাথে আইপিএল ইতিহাসে বাংলার সব থেকে দামী ক্রিকেটার হয়ে গেলেন মুকেশ, টপকালেন বাংলার আইকন সৌরভ গাঙ্গুলিকে, যিনি ৪.৩৭ কোটি টাকায় ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে।
কিন্তু মুকেশের এই পথচলার কাজ সহজ ছিল না। বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার কাকারকুন্ডে জন্ম মুকেশের। তবে ২০১১-১২ সালে কলকাতায় চলে আসতে হয় মুকেশকে, সেখানে তার বাবা ট্যাক্সির ব্যবসা করতেন। সেই সময় মুকেশ কলকাতা ক্লাব ক্রিকেটে দ্বিতীয় ডিভিশন এবং পরে প্রথম ডিভিশন লিগে খেলতেন। যদিও বিহারে অনুর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলেছিলেন তিনি। ৪০০-৫০০ টাকায় কলকাতায় দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্রিকেট খেলে নিজের নাম তৈরি করে নিয়েছিলেন মুকেশ।
কিন্তু ক্রিকেট না খেলে চাকরি করার বিষয়ে পরিবারের তরফ থেকে চাপ পেয়েছিলেন মুকেশ। এই নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মুকেশ বলেছেন, "বিহারে যদি আপনি আপনার পরিবারকে বলেন যে আপনি ক্রিকেটে মনোনিবেশ করতে চান, তারা সব সময় বলবে 'না'। ওনারা আমায় পড়াশোনা করে ভালো চাকরি পেতে দেখতে চেয়েছিলেন।"
এবং পরিবারের কথা রাখতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মুকেশ। কিন্তু তিনবার ফিজিকাল ট্রায়ালে ব্যর্থ হন তিনি। এবং তারপর ক্রিকেট ও সিএবির ভিশন ২০২০ মুকেশের জীবন বদলে দেয়।
ভিশন ২০২০ প্রকল্পে কোচ হিসেবে ছিলেন ওয়াকার ইউনিস, মুত্থাইয়া মুরলিধরণ ও ভিভিএস লক্ষ্মণের মত প্রখ্যাত ক্রিকেটাররা। কিন্তু সেখানে ২০০-২৫০ ক্লাব ক্রিকেটারদের মধ্যে সুযোগ পেয়েছিলেন মুকেশ। তবে যখন ট্রায়ালের জন্য মুকেশের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন বাথরুমে ছিলেন তিনি। এরপর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিজের দেরি হওয়ার কারণ জানান। এবং তারপর নির্বাচকরা তাকে বোলিংয়ের সুযোগ দেন। সেই সময় মুকেশ নিজের বোলিংয়ের মাধ্যমে মুগ্ধ করেন পাকিস্তানের অন্যতম শ্রেষ্ট পেসার ওয়াকার ইউনিসকে। যার ফলে নির্বাচিত হন বাংলা দলে।
এবং বাংলা দলে অনবরত ভালো পারফর্ম করতে থাকেন মুকেশ। ৩৩টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ২১.৪৯ গড়ে ১২৩ উইকেট নিয়েছেন মুকেশ। এবং রঞ্জিতে ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে সুযোগ পান ভারতীয় এ দলে। নিউজিল্যান্ড এ দলের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়ে চমকে দিয়েছিলেন মুকেশ। আর তার এক মাস পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিবসীয় সিরিজে ভারতীয় দলে সুযোগ পান তিনি।
কিন্তু আইপিএলে শিকে ছিড়ছিল না মুকেশের। বারবার বিভিন্ন আইপিএল দলে ট্রায়াল দিলেও সুযোগ পাননি মূল দলে ঢোকার। এই নিয়ে মুকেশ বেশ কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "অনেকদিন ধরে আমি ট্রায়াল দিচ্ছি। নিশ্চয়ই একদিন এই দরজা ভেঙে আমি আসব।"
আর দরজাটি ভাঙলেনই মুকেশ। দিল্লি ক্যাপিটালসের মত বড় দলে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে এলেন বাংলার এই পেসার। এবং মুকেশের যে প্রতিভা ও ধারাবাহিকতা, তাতে ঋষভ পন্থের দলে প্রথম একাদশে সুযোগ পাবেনই তিনি।