শৈশবে বাবার মৃত্যু, টয়লেট পরিষ্কার করা - বর্ণবিদ্বেষের ভিড়ে আজ দেশের নায়ক রাহিম স্টার্লিং

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : চলতি ইউরোয় কার্যত ইংল্যান্ডের রাষ্ট্র নায়ক হয়ে উঠেছেন রাহিম স্টার্লিং। ইতিমধ্যেই তিনি তিন গোল করেছেন এই টুর্নামেন্টে, এর আগে ইউরোতে ইংল্যান্ডের হয়ে তিন গোল করেছেন, যা আগে করেছিলেন গ্যারি লিনেকার ও অ্যালান শিয়েরার। কিন্তু এই তারকা উইঙ্গারের কাহিনী যে কতটা অনুপ্রেরণাদায়ক আজকের দিনে, তা সত্যিই জানা দরকার।
জামাইকার কিংস্টন শহরে জন্মেছিলেন রাহিম স্টার্লিং। কিন্তু নিজের জন্মানোর সময়ে পাশে পাননি বাবাকে, মায়ের ঘরের পদবীই রাখা হয় রাহিমকে। এরপর দুই বছর বয়সে জানতে পারেন, খুন হয়েছেন তার পিতা। এরপর ছোট্ট রাহিমকে সঙ্গে করে লন্ডনে চলে আসেন তার মা, এবং ওয়েম্বলি শহরের একটি স্কুলে ভর্তি হন।
আর সেই শহরে সদ্য তৈরি হতে থাকা ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের উত্থানকে নিজের চোখে দেখতে থাকেন স্টার্লিং। স্বপ্ন গড়ে উঠতে থাকে, একদিন তিনি এই মাঠে রাজ করবেন। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় ৮-৯ বছর বয়সে স্টোনব্রিজে মায়ের সাথে টয়লেট পরিষ্কার করতেন রাহিম, আর ভেন্ডিং মেশিন থেকে সকালের প্রাতঃরাশ সারতেন।
কিন্তু স্বপ্নটি আঁকড়ে ধরে থাকেন স্টার্লিং। আর সেই কারণে নিজের পুরোনো বন্ধুদের ছেড়ে এমন বন্ধুদের সাথে মিশলেন, যারা ফুটবল নিয়ে চর্চা করত, খেলত, আলোচনা করত। আর তারপর ধীরে ধীরে নিজের কেরিয়ার গড়ে উঠতে শুরু করে স্টার্লিংয়ের।
স্থানীয় যুব দল আলফা অ্যান্ড ওমেগা দলে চার বছর কাটান স্টার্লিং। আর তারপর আসে তার বড় ব্রেক, মাত্র ১০ বছর বয়সে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স সই করে স্টার্লিংকে। যদিও আর্সেনাল, চেলসি, ফুলহ্যাম, লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটির অ্যাকাডেমি থেকে বারবার তাকে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু রাহিমের মা চেয়েছিলেন যাতে ছেলে লন্ডন থেকে দূরে যাক। কারণ সেই সময় লন্ডনে গ্যাং কালচার শুরু হয়েছিল।
এরপর ২০১০ সালে লিভারপুলে সই করার পর থেকে আটকে রাখা যায়নি স্টার্লিংকে। পাঁচ বছর খেলার পর রেকর্ড চুক্তিতে সই করেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। আজ তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা উইঙ্গার হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু একজন কালো মানুষকে যা প্রতিনিয়ত ভুগতে হয়, তা ভুগতে হয়েছে স্টার্লিংকেও। ইংল্যান্ডের অসভ্য জনতার কাছে বারংবার শুনতে হয়েছে বর্ণবিদ্বেষী সমালোচনা। ২০১৬ সালে ইউরোয় ইংল্যান্ডের হতশ্রী পারফর্মেন্সের পরে ২৩ বছরের স্টার্লিং নিজের মাকে একটি বাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। যে মা ছোটবেলা থেকে কষ্টে ও প্রচন্ড লড়াই করে আজ রাহিমকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন, সেই মাকে ছোট্ট একটি উপহারই দিয়েছিলেন স্টার্লিং, কিন্তু সেই নিয়ে সমালোচনায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন ইংরেজ জনতা।
সমালোচনা চলবেই, বর্ণবিদ্বেষকে রোখা সত্ত্বেও সমাজে কুৎসিত মনোভাবাপন্ন মানুষের অভাব থাকবে না - কিন্তু রাহিম স্টার্লিংদের এভাবেই চলবে। ছোটবেলা থেকে যে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের গড়ে ওঠা দেখে তিনি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই ওয়েম্বলিতে জার্মানিকে পরাস্ত করে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠেছেন ২৮ বছরের রাহিম। লোকে যা বলে বলুক, রাহিমের এভাবেই চলুক।