শুধু ছেলেরাই নন! দেশের চিন্ময়ীরাও বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন সার্থক করতে পারেন

অরিত্র বসু : তু সারা জাহা সে পেয়ারি মেরে ভারত কি বেটি
২২ বছর পর এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করল ভারতের দশপ্রহরণধারিণীরা।
যে ভারতের ছেলেদের নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ISL করা হয়, ক্লাবের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করার পর জাতীয় দলের জার্সি পরলেই জুজু বেড়াল হয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সঙ্গীতা বাসফোর, গ্রেস ডাংমেই, মনীষা কল্যাণ, সন্ধ্যা রঙ্গনাথন, আশালতা দেবীরা। মেয়েরা যেমন রাঁধে ঠিক তেমনি চুলও বাঁধে। দেশের সম্মান আজও যে যুগের পর যুগ মেয়েরাও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রমাণ এই ভারতের মেয়েরা।
এই ভারতীয় দল যখন কলকাতায় প্রস্তুতি শিবির সারছিল আমরাই তখন, তারা যে ক্লাবের হয়ে খেলেন সেই ক্লাবের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতাম, আর আমাদের চিন্ময়ীরা যখন দেশকে জিতিয়ে ছেলেদের লজ্জা ঢেকে দেয় তখন আমরা তাদের নিয়ে কতটা মেতে উঠি?
শনিবার রাতে থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই স্টেডিয়ামে মাঠে বসে গোল করার পর ২৭ বছরের সঙ্গীতা যখন হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন ওই কান্নাটা শুধুমাত্র ওর ছিল না যে, এটা সকল দেশবাসীর চোখে কান্না ছিল। কল্যাণীর প্রত্যন্ত একটা হাসপাতাল কোয়াটার থেকে বেড়ে ওঠা একটা মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চোখের জল ছিল যে ওটা।
কোটি কোটি টাকা গঙ্গার স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে যে সমস্ত বিদেশী কোচরা ভারতীয় ফুটবলের এসেছেন বা আসবেন তাদেরকে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ৫০ বছর বয়সী বঙ্গকোচ ক্রিসপিন ছেত্রী।
আচ্ছা আমাদের ভারতীয় পুরুষ দলে কজন বাঙালি আছে বলতে পারবেন? বর্তমানে তো বোধহয় একজনও না। সেখানে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতীয় দলের দাপিয়ে খেলছেন সঙ্গীতা, সঙ্গে নদীয়ার মেয়ে রিম্পা হালদারও। তবুও আমরা ওদের নিয়ে সেলিব্রেট করবো না, আনন্দিত হব না, গর্বিত হব না। থাইল্যান্ডে এশিয়ান কাপের এই বাছাই পর্বে ক্রিসপিনের ভারত যে দাপট দেখিয়েছে, তাতে আগামী এক বছর ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিলে সঙ্গীতাদের পক্ষে বিশ্বকাপ খেলা অসম্ভব নয়। কারণ এশিয়ান কাপে প্রথম ৬ দেশের মধ্যে থাকলেই ২০২৭ সালে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র মিলবে।
কে বলতে পারে আজ থেকে কয়েক বছর পর আমাদের চিন্ময়ীদের হাত ধরেই ভারত একদিন বিশ্বকাপ খেলবে না? স্বপ্ন কি শুধু হাজার হাজার ক্যামেরার ফোকাস, লাইম লাইট নিয়ে বসে থাকা সন্দেশ জিঙ্গান, মেহতাব সিংদের নিয়ে দেখবেন? আমাদের দেশের দশপ্রহরণধারিনীরাও কম কী?