৩-০'এ হেরে লে ফন্দ্রে-হুগো বৌমসের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল ড্যানি ফক্সবিহীন ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স। বিস্তারিত পড়ুন...

মুম্বই সিটি এফসি : ৩ (লে ফন্দ্রে : '২০, '৪৮, সান্তানা : '৫৮)
এসসি ইস্টবেঙ্গল : ০
সব্যসাচী বাগচী : ফুটবল দেবতা মনে হয় ম্যাচের শুরুতেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের দেওয়াল লিখন পড়ে নিয়েছিলেন। একেবারে গোড়ায় চোট পেয়ে অধিনায়ক ড্যানিয়েল ফক্স মাঠ ছাড়তেই রবি ফাউলারের ছন্ন ছাড়া ডিফেন্সের ফাঁকফোকর গুলো বারবার প্রকট হয়ে উঠল। এবং গোটা ম্যাচজুড়ে চলল অসহায় আত্মসমর্পণের পালা। কখনও স্কট নেভিল, আবার কখনও সুরচন্দ্র সিং। লাগাতার ভুল করেই চললেন। আর এরই খেসারত দিতে হল শতবর্ষে পা রাখা দলকে। মঙ্গলবার ব্যাম্বোলিমের মাঠে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে লাল-হলুদকে উড়িয়ে দিল মুম্বই সিটি এফসি। ফলে ডার্বি হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও হারের মুখ দেখলেন ফাউলার। জোড়া গোল করলেন লে ফন্দ্রে। তবে স্প্যানিশ কোচের এমন দুরন্ত জয়ের নেপথ্যে ফরাসি ফুটবলার হুগো বৌমস। কারণ, তিনিই যে একা তফাৎ গড়ে দিলেন।
এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বি যুদ্ধ হারের হ্যাংওভার থেকে এখনও বেরোতে পারেনি এসসি ইস্টবেঙ্গল। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয় পেতে তিন পয়েন্ট তোলার জন্য অ্যান্টনি পিলকিংটন ও বলবন্ত সিং'কে সামনে রেখে মাঠে দল নামিয়েছিলেন লিভারপুল লেজেন্ড। কিন্তু খেলার একেবারে শুরুতে ২ মিনিটের মাথায় বাঁ পায়ের কোয়াড্রিসেপ মাশলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ড্যানি ফক্স। তাঁর পরিবর্তে নামেন মহম্মদ রফিক। দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার এমন জোরালো চোট পেলে দল তো চাপে পড়বেই। আর সেটাই ঘটল।
৯ মিনিটের মাথায় অ্যাডাম লে ফন্দ্রের ব্যাক পাশ থেকে গোলের দিকে জোরালো শট মারেন হুগো বৌমস। তবে দুরন্ত সেভ করে দলের পতন রুখে দেন দেবজিত। কিন্তু সেন্ট্রাল ডিফেন্স আঁটোসাঁটো না হলে গোলকিপার কিই বা করতে পারেন! ২০ মিনিটে আবার আক্রমণ হানাল সার্জিও লোবেরার দল। হুগো বৌমসের এক ঝটকায় ছিটকে গেলেন সুরচন্দ্র সিং! স্কট নেভিল ও মহম্মদ ইরশাদ, তাঁরাও ধারেকাছে নেই। ফ্রান্স থেকে আসা হুগো দলকে প্রথম সাফল্য এনে দিতে পারতেন। কিন্তু যোগ্য 'টিম ম্যান'এর নিদর্শন রেখে পিছন থেকে আসা লে ফন্দ্রে'কে বল বাড়ালে তিনি অনায়াসে গোল করে চলে যান। ১-০'এ এগিয়ে গেল মুম্বই।
১ গোলে পিছিয়ে থাকলেও ফুটবলে কামব্যাকের অনেক নজির আছে। তবে রবি ফাউলারের দল সেটা পারল কোথায়! দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার পরেও লাল-হলুদের দুর্বল রক্ষণের ভোল বদলায়নি। সৌজন্যে ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা হুগো বৌমস। প্রথম গোলের সময় তিনি সুরচন্দ্রকে হেলায় বুঝে নিয়েছিলেন। এবার পালা ছিল স্কট নেভিলের। ফরাসি ফুটবলাররের বডি ওয়েটের কাছে হেরে পিছিয়ে গেলেন স্কট। দেবজিতের কিছু করার ছিল না। দলের পতন আটকাতে গিয়ে হাত দিয়ে হুগো বৌমসকে ফেলে দেন। স্বভাবতই পেনাল্টি। এবং সেখান থেকে গোল করে ৪৮ মিনিটে মুম্বই'কে ২-০'এ এগিয়ে দেন লে ফন্দ্রে।
তবে 'পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত'। ৫৮ মিনিটে হারনান সান্তানা'র গোলটা যত না সুন্দর, এর চেয়েও বেশি সুন্দর গোলের মুভ। চলতি আইএসএলের সেরা মুভের মধ্যে এটা থাকবেই। প্রায় সেন্ট্রাল সার্কেল থেকে দূরপাল্লার শট তোলেন আহমেদ জহুয়া। সেই বলকে মাইনাস করেন হুগো। এবং সেখান থেকে জোরালো ভলি'তে জালে বল জড়িয়ে দেন স্পেন থেকে আসা দলের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হারনান সান্তানা। লাল-হলুদের ডিফেন্সকে একেবারে দুরমুস করে ৩-০'এ এগিয়ে গেল মুম্বই।
এটিকে-মোহনবাগানের কাছে হারের স্মৃতি মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন ফাউলার। কিন্তু ভাবলেই তো হবে না। কাজটাও তো করতে হবে। আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের বিরুদ্ধে হারলেও প্রথম ২০-২৫ মিনিট উজ্জীবিত ফুটবল খেলেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু এদিন তো ডার্বি ম্যাচের ২৫% পারফরম্যান্সও দেখাতে পারেনি লাল-হলুদ। খেলা দেখে যেন বারবার মনে হচ্ছিল যে ডার্বি হারের হ্যাংওভার এখনও পুরোপুরি কাটেনি!
মুম্বই সিটি এফসি : অমরিন্দর সিং (গোলকিপার), মহমাদ সিং, মৌর্তদা ফাল, মন্দার রাও দেশাই, হারনান সান্তানা, ভিগনেশ দক্ষিণামূর্তি, রওলিন বর্জেস/মেহতাব সিং, আহমেদ জহুয়া, বিপিন সিং, হুগো বৌমস/গোডার্ড, অ্যাডাম লে ফন্দ্রে/ওগবাচে
এসসি ইস্টবেঙ্গল : দেবজিত মজুমদার (গোলকিপার), স্কট নেভিল, মহম্মদ ইরশাদ, ড্যানিয়েল ফক্স (অধিনায়ক)/মহম্মদ রফিক, নারায়ণ দাস, আঙ্গুসানা লুয়াং/শেহনাজ সিং, মাত্তি স্টেইনমান, সুরচন্দ্র সিং/অভিষেক আম্বেকর, অ্যান্টনি পিলকিংটন, জ্যাক মাঘোমা, বলবন্ত সিং/জেজে