নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের সেরা ১০টি গোল তুলে ধরলেন সুনীল ছেত্রী

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতের স্থান অনেকটা পিছনে থাকলেও, দেশের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী রয়েছেন কিংবদন্তিদের তালিকায়। ৯২টি আন্তর্জাতিক গোল করে পাঁচ সর্বোচ্চ গোল সংগ্রাহকদের তালিকায় রয়েছেন সুনীল।
তবে নিজের কেরিয়ারের ১৮ বছরে এই ৯২টি গোলের মধ্যে, কোন ১০টি গোল তার সব থেকে কাছের। এআইএফএফ মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুনীল নিজের কেরিয়ারের সেরা ১০টি গোল তুলে ধরেছেন। তবে এগুলি কোনোটাই ১-১০ কোনও ধারায় নেই।
সেরা ১০টি গোলের প্রথমটি সুনীল তুলে ধরেছেন ২০১৯ এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বে কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে গোলটি। সেই ম্যাচে ভারত ১-০ ফলে জিতেছিল।
এই গোল নিয়ে সুনীল বলেছেন, "যখন আমি এই গোলটি করেছিলাম, আমার মনে আছে সেটি জেজে লালপেখলুয়ার পাস ছিল। আমি সেটি ভুলতে পারব না। কারণ সেখানে কোনও জায়গা ছিল না আর বলটি ঠিক ঐভাবেই আসতে হত যেমনভাবে এসেছিল। এছাড়া অন্য উপায় ছিল না। আর আমার মনে হয়, ওর সাথে আমার বোঝাপড়ার কারণে, সেই গোলটি হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোল ছিল কারণ আমাদের তিন পয়েন্ট দরকার ছিল যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে থাকার জন্য।"
দ্বিতীয় গোল নিয়ে সুনীল তুলে ধরেছেন ২০১৭ সালে এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বে মায়ানমারের বিরুদ্ধে গোলটি। এই গোলের ফলে ৬৪ বছর পর দেশের বাইরে মায়ানমারকে হারায় ভারত।
এই গোলটি নিয়ে সুনীল বলেছেন, "আমি জানি না কতজনের এই গোলটি মনে রয়েছে, কারণ ফুটেজ ভালো ছিল না। কিন্তু এই গোলের পিছনে যে ভূমিকা উদান্তা সিং নিয়েছিল, তা ভোলার নয়। ২০ বছরের কেরিয়ারে, কাউকে এভাবে দৌড়তে দেখিনি। উদান্তার দৌড়টা দুর্দান্ত ছিল।"
তিন নম্বর গোলটি সুনীল তুলে ধরেছেন ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বে ওমানের বিরুদ্ধে গোল। যদিও সেই ম্যাচে ১-২ ফলে হারে ভারত।
এই গোল নিয়ে সুনীল বলেছেন, "এই গোলটি বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে মেরেছিলাম। আমার এখনও মনে আছে কারণ সেই গোলের টেকনিকটা এত ভালো ছিল। খুব সুন্দর ফিনিশ ছিল।"
চার নম্বর গোল নিয়ে সুনীল তুলে ধরেছেন ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপের মূলপর্বে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গোলটি। সেই ম্যাচটি ৪-১ ফলে জিতেছিল ভারত, যা ১৯৬৪ সালের পর মূলপর্বে ভারতের প্রথম জয় ছিল।
এই গোলটি নিয়ে সুনীল বলেছেন, "এটি আবারও উদান্তা সিংয়ের সাথে আমার যুগলবন্দীতে গোল। প্রথমার্ধে, আমরা ১-১ ফলে আটকে ছিল। তারপর দ্বিতীয়ার্ধে, উদান্তা নিজের গতিতে দুজন ডিফেন্ডারকে টপকে বলটা দিয়েছিল, আর আমি বক্সে ফিনিশ করি।"
পাঁচ নম্বর গোলটি নিয়ে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ভানায়ুতুর বিরুদ্ধে গোলটি তুলে ধরেছেন সুনীল। সেই ম্যাচটি জিতেছিল ভারত।
এই নিয়ে সুনীল বলেছেন, "এই গোলের ফিনিশিংটাও ভালো, শুভাশিস বসুর ক্রসও ভালো ছিল। কিন্তু এই গোলটি আমার স্মৃতিতে সারাজীবন থেকে যাবে, কারণ সেই দিনেই আমি আর আমার স্ত্রী গোটা বিশ্বকে জানাই যে আমাদের সন্তান আসতে চলেছে। গোলটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত জরুরি, তবে এই গোলটি আমার স্মৃতিতে থেকে যাবে কারণ এটি আমাদের দুজনের কাছে খুব স্পেশাল।"
২০১৮ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে কেনিয়ার বিরুদ্ধে গোলটিকে ছয় নম্বর গোল হিসেবে রেখেছেন সুনীল।
এই নিয়ে সুনীল বলেছেন, "এই গোলটি চিপ মেরে করেছিলাম। আমি এই গোলটাকে তুলে ধরছি কারণ যে অসম্ভব মানে আমি গোলটা করেছিলাম। খুব সহজ গোল ছিল না এটা। গোলকিপার এগিয়ে এসেছিল আর আমার পিছনে ডিফেন্ডার ছিল। ওখান থেকে বলটি চিপ করাটা খুব কঠিন ছিল। আমি এই গোলটা বারবার দেখি। এই গোলের জন্য আমি গর্বিত।"
এই গোলটি বেশ কিছুটা পুরোনো। সাত নম্বর গোল হিসেবে ভারত অধিনায়ক তুলে ধরেছেন ২০০৮ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ সেমি ফাইনালে মায়ানমারের বিরুদ্ধে গোলটি। সেই সময়ে সুনীলের মাথায় সেলাই পড়েছিল। যদিও ম্যাচটি ভারত হেরেছিল।
এই নিয়ে সুনীল বলেছেন, "আমি জানি না কতজনের মনে রয়েছে, তবে আমার মনে রয়েছে। এটি আমার অন্যতম সেরা গোল ছিল এবং খুবই কর্দমাক্ত মাঠে হেডে গোল করেছিলাম। আর তারপর, আমরা যখন ড্রেসিংরুমে ফিরি, আমাদের কোচ বব হাউটন বলেছিলেন যে ওনার দীর্ঘ ফুটবল কেরিয়ারে, এরকম সাহসী গোল উনি দেখেননি। এটি আমায় খুব আনন্দ দিয়েছিল এবং আমি নিজের এই গোলের জন্য খুবই গর্বিত।"
এরপরের গোলটি সুনীল তুলে ধরেছেন ২০০৮ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালে নিজের দ্বিতীয় গোলটি। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সুনীল, আর এর ফলে তাজিকিস্তানকে ৪-১ ফলে হারিয়েছিল ভারত।
এই গোল নিয়ে সুনীল বলেছেন, "এই ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটির কথা আমি বলছি। আমার এখনও মনে আছে, আমি বলটি নামিয়ে এনে গোলটি করেছিলাম। সেই গোলটি আমার অত্যন্ত কাছের।"
এরপর নয় নম্বর গোলটি সুনীল তুলে ধরেছেন ২০১০ সালে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি। সেই ম্যাচে ভারত সুনীল ছেত্রীর হ্যাটট্রিকে ৩-১ ফলে জিতেছিল।
সুনীল বলেছেন, "অ্যান্থনি পেরেইরার বলে আমি ফ্লিক মেরে গোল করেছিলাম। আমার মনে হয় আমাদের কাছে এই গোলের ফুটেজ রয়েছে। আমি প্রথম পোস্টে গিয়ে সাইড ফ্লিক করে গোলটি করি। খুব স্টাইলিশ প্রয়াসে গোলটি হয়। খুব সহজ স্কিল নয় এটি, তবে খুশি হয়েছিলাম যে গোলটি হয়েছিল।"
শেষ গোলটি নিয়ে সুনীল ছেত্রী তুলে ধরেছেন সদ্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ফাইনালে লেবাননের বিরুদ্ধে গোলটি। সেই ম্যাচে ২-০ ফলে জিতেছিল ভারত।
এই নিয়ে সুনীল বলেছেন, "যে উপায়ে গোলটি হয়েছে, তাতে দশম গোলটি আমার হৃদয়ের অত্যন্ত কাছের। এর কারণ হল বলের পজিশন। আনোয়ার আলি থেকে সন্দেশ ঝিঙ্গান, সেখান থেকে লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে, আর তা থেকে নিখিল পুজারি। আমরা এই মুভমেন্টটি একাধিকবার অনুশীলন করেছিলাম। তাই অধিনায়ক হিসেবে, আমার কাছে খুব স্বস্তির গোল ছিল এটি কারণ আমরা অনুশীলন করে ফল দিয়েছিলাম।"