জাতীয় ক্যাম্পে মহিলা ক্রীড়াবিদ নির্যাতন নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন ভিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিক

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ জাতীয় ক্যাম্পে ভারতীয় মহিলা ক্রীড়াবিদদের উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ বারংবার উঠে এসেছে ইতিপূর্বে। মহিলা ক্রীড়াবিদরা এই ঘৃণ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। এবার যৌন নির্যাতনের বিষয় ভয়ংকর অজানা তথ্য তুলে ধরলেন ভারতের দুই তারকা ক্রীড়াবিদ ভিনেস ফোগাট এবং সাক্ষী মালিক।
রেভ স্পোর্টস আয়োজিত কলকাতার সর্বকালের বৃহত্তম ক্রীড়া সম্মেলনে ভিনেশ জানিয়েছেন, "২০১৩ থেকে আমি সিনিয়র ক্যাম্পে আছি। তার আগে জুনিয়রদের জন্য থাকা আর খাওয়া পাওয়াটাই অনেক বড় ব্যাপার ছিল। কিন্তু সিনিয়র হলেই অনেক দায়িত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু বড় হলে আমরাও গোটা বিশ্বকে বুঝতে শিখি এবং ভুল-ঠিক বুঝতে পারি। আমরা মহিলাদের ভুলকে ভুল বলা নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমি সব সময় ভুলকে ভুল বলতে শিখেছি এবং এটি আমি আমার বাড়ি থেকেই শিখেছি। আমি আমার মা কে দেখেছি যত কঠিন অবস্থাই হোক তিনি ভুলকে ভুল বলেছেন, তাঁর থেকেই আমি এতো সাহস ও আত্মবিশ্বাস পাই। আমাদের যার সাথে লড়তে হচ্ছে, তারা অনেক শক্তিশালী মানুষ, তাদের টাকা এবং ক্ষমতা অনেক বেশি। তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা অনেক। সামনেই অলিম্পিক। তাই আমরা কিছু বললে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ হারাতে পারি। তাই অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে এই কথা গুলো বলছি। কিন্তু আমাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমি জানতাম আমি আজ না বললে কোনোদিনই বলতে পারবোনা। আমাদের দেশ অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, মহিলাদের কথা অনেকেই শোনেন না। কোনো মহিলা যখন বলছেন যে তার সাথে অত্যাচার হচ্ছে তখন সব সময় তিনি কীভবে প্রমাণ দেবেন? প্রমাণ সব সময় মহিলারা কেনো দেবেন পুরুষরাও দিক! যার উপর অভিযোগ তিনি প্রমাণ করুক যে তিনি কিছু করেন নি।"
এর সাথে ভিনেশ যোগ করেন, "আমাদের ভয় একটাই যে আমাদের থেকে কুস্তি না কেড়ে নেওয়া হয়। আমাদের মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে দিনের পর দিন। মানুষ অনেক বেশি নেতিবাচক কথা বলতে থাকেন এবং হুমকি আসতে থাকে আমার পরিবারের কাছে যে আমি কিছু বললে আমায় মেরে ফেলা হবে। আজ আমি বড় কিছু করার পরেও ভয় থাকি সেখানে যারা নতুন আসছেন তাদের ভয় থাকাটা স্বাভাবিক। আমার কাছে অলিম্পিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অলিম্পিক না খেলতে দেওয়া হলে আমার কাছে মৃত্যুই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়াবে।"
সাক্ষী মালিক বলেছেন, "আমি ভিনেশের কথা ধরেই বলতে চাই যে, মানুষ সব সময় প্রমাণ চান। আমি ১৮ বছর ধরে দেখছি যে মেয়েদের সাথে শারিরীক হেনস্থা করা হচ্ছে। আমরা এতো বড় স্টেজে গিয়ে মিথ্যে কেনো বলবো? যখন এতো বছর সাহস যুগিয়ে দুনিয়ার সামনে বলি তখন তার প্রমাণ চাওয়া হয় তখন মন ভেঙে যায়। ঠিকাছে আমায় আজ কুস্তি ছাড়িয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু এর পরবর্তী প্রজন্মের মহিলাদের কী হবে? তাই আমি এই বিরোধিতায় সামিল হই যাতে ভবিষ্যতের মহিলা অ্যাথলিটদের এই হেনস্থার শিকার না হতে হয়। আমার স্বামি সর্বদা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আমাকে এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার খুবই খারাপ লাগে যে আমরা এতো বছর ধরে সাহস যুগিয়ে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে এখন।"
ভিনেশ সবশেষে বলেছেন, " আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হল পুরুষ কুস্তিগিররা আমাদের পাশে রয়েছেন। তাঁরা আমাদের পাশে রয়েছেন বলেই আমরা এতো বড় লড়াই করার সাহস পেয়েছি। তারা এতো বড় ক্রীড়াবিদ হয়েও আমাদের সাথে রয়েছেন এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় শক্তি।"