কিংবদন্তী রজার ফেডেরারকে উইম্বলডনে প্রবেশের অনুমতিই দিলেন না এই নিরাপত্তারক্ষী

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : সাধারণত আমরা দেখে থাকি, প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে নিয়মের পরিবর্তন করা হয়েই থাকে। অনেক সময়ে কর্তব্যের ঘেরাটোপে থাকলেও প্রভাবশালীদের জন্য কর্তব্যের বাইরে যেতে বাধ্য হতেই হয়। ক্রীড়াজগতেও এর অন্যথা হয় না।
খেলার জগতে প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বদের প্রতি ফ্যানডমের কোনও খামতি থাকে না। ভুলে যান সমস্ত কর্তব্য ও নিয়মের কথা, আনুগত্যই তখন আসল। কিন্তু আজও এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা ফ্যানডমকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের কর্তব্য পালন করেন।
আর এমনই এক কর্তব্যপরায়ন নিরাপত্তারক্ষীর কবলে পড়েন টেনিসের কিংবদন্তী রজার ফেডেরার। যে মানুষটি আটবার জিতেছেন ঐতিহ্যশালী উইম্বলডন খেতাব, তাকেই কিনা ঢুকতে দেওয়া হল না অল ইংল্যান্ড ক্লাবে!
এমনই দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন ফেডেরার। এক মার্কিনী টক শোয়ে ফেডেরার বলেছেন, "হাঁটুর চোটের জন্য আমি ইংল্যান্ডে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়ার পর আমি ঘড়িতে দেখি এখনও দুই ঘন্টা সময় রয়েছে হাতে, তাই ভাবলাম উইম্বলডনে গিয়ে আমরা চা খেয়ে আসব।"
"যখন উইম্বলডনে টুর্নামেন্ট হয় না, তখন আমি সেখানে যাইনি খুব একটা। তাই আমি যেখানে অতিথিরা আসেন, সেই গেটে গাড়িটা নিয়ে যাই, যেখানে আপনি এসে ঢুকে যেতে পারবেন। আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আমার কোচ সেভেরিন (সেভেরিন লুথি), যিনি আমার সাথে সেই সময়ে ছিলেন, তাঁকে বলি যে আমি গিয়ে নিরাপত্তারক্ষী মহিলার সাথে কথা বলে আসছি।"
কিন্তু তারপরেই হয় আসল গোলমালটি। উইম্বলডনে ঢুকতে গেলে সদস্যপদ কার্ড দরকার হয়। তবে যারা এই টুর্নামেন্টে বিজয়ী হয়, তাদের উপহার হিসেবে সদস্যপদ দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফেডেরারের কাছে একাধিক কার্ড থাকার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই সময়ে ফেডেরারের কাছে কোনও সদস্যপদ কার্ড ছিল না। বরং তিনি জানতেনও না যে এমন বিষয় রয়েছে।
এবং সেই কারণে ঐ নিরাপত্তারক্ষী মহিলা যখন ফেডেরারের কাছ থেকে সদস্যপদের কার্ড চান, তখন ফেডেরার তা দিতে পারেননি। আর এর জেরে ভোগান্তি শুরু হয়।
এই নিয়ে ফেডেরার বলেছেন, "আমি সদস্যপদের কার্ডের বিষয়ে জানতাম না, হয়ত বাড়িতেই থাকবে কোথাও। আর আমি এত ভ্রমণ করছিলাম যে আমার খেয়াল ছিল না। তাই আমি জানাই, 'না আমার কাছে কোনও সদস্যপদের কার্ড নেই। তবে আমি একজন সদস্য। আমার প্রশ্ন হল কোথা দিয়ে আমি প্রবেশ করব।' আর সেই সময়ে উনি বলছেন, 'তবে আপনাকে তো একজন সদস্য হতে হবে।'"
সচরাচর রজার ফেডেরার নিজের কৃতিত্বের কথা খোলাখুলি বলেন না, যে কারণে তিনি একজন মহৎ ক্রীড়াবিদ। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, যে নিজের আটবার উইম্বলডন জেতার গর্বকে তিনি তুলে ধরতে বাধ্য হন।
ফেডেরার বলেছেন, "আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছি, আর আমার সেই সময়ে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু আমি ওনার দিকে তাকাই এবং জানাই, 'আমি এই টুর্নামেন্ট আটবার জিতেছি। দয়া করে আমায় বিশ্বাস করুন, আমি একজন সদস্য। কিভাবে আমি প্রবেশ করব?'"
কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই নিরাপত্তারক্ষী ফেডেরারকে প্রবেশের অনুমতি দেননি। ফলে বাধ্য হয় অন্য একটি গেটের দিকে যান ফেডেরার। আর সেই সময়ে, সৌভাগ্যবশত ফেডেরারকে চিনতে পারেন ভক্ত ও নিরাপত্তারক্ষীরা।
এই নিয়ে ফেডেরার বলেছেন, "সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা দেখে বলেন, 'আরে মিস্টার ফেডেরার, আপনি এখানে কি করছেন? আপনার কাছে কি সদস্যপদের কার্ড রয়েছে?' আমি তখন জানাই যে আমার কাছে কার্ড নেই, কোনওভাবে যে ভেতরে যাওয়া যাবে? তখন ওনারা বলেন, 'হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আমরা দরজা খুলছি, আমরা ব্যবস্থা করছি।"
ভিতরে গিয়ে ফেডেরার অল ইংল্যান্ড ক্লাবের চেয়ারম্যানের সাথে ঘন্টাখানেক গল্প করেন ও চা পান করেন, এবং যে উইম্বলডন ট্রফিকে তিনি আটবার তুলেছেন, সেই ট্রফিটির কাছেও যান।
কিন্তু এসবের পরেও, ফেডেরার সেই মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর কথা ভোলেননি। এবং বেরোনোর সময়ে সুইস তারকার মাথায় একটি খেয়াল আসে।
তিনি বলেছেন, "আমি ভেবেছিলাম আগের ঐ গেটে গিয়ে ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে আসব। কিন্তু আমি তা করিনি!"
তবে এই কাহিনী বলার সময়েও সেই মহিলা নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়নতার প্রশংসা করেন ফেডেরার। আজকের দিনে এই স্টারডমের যুগে যা অত্যন্ত বিরল, সেখানে এই নিরাপত্তারক্ষীর সাহস ও নিয়মের প্রতি দায়িত্ব পালনে মুগ্ধ হয়েছেন রজার ফেডেরার।