কেন এই তরুণ গোলকিপারের সাহায্যে এগিয়ে এলেন শিল্টন পাল? কে তিনি? জানতে পড়ুন...

নিজস্ব প্রতিনিধি : কাকদ্বীপের বুঁদাখালি গ্রামের ছেলেটা ও তাঁর পরিবার এর আগে 'আয়েলা' ও 'বুলবুল' নামক সাইক্লোনের দাপট হজম করেছেন। তবে আমফানের জোরালো শট আর 'সেভ' করতে পারলেন না এই তরুণ গোলকিপার। আসলে পোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে স্ট্রাইকারদের জোরালো শট 'সেভ' করা, আর আমফান'কে হজম করা যে এক নয়। সেটা এখন বেশ টের পাচ্ছেন আই লিগে ট্রাউ এফসি'র হয়ে খেলা গোলকিপার মিঠুন সামন্ত। তাঁদের একমাত্র আস্তানা ছোট্ট কুঁড়েঘর ঝড়ের দাপটে একেবারে ধুলিস্মাৎ হয়ে গিয়েছে। একটাই সান্তনা পরিবারের কারও প্রাণ যায়নি। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন মিঠুন ও তাঁর বাবা-মা। তাই তো এই তরুণের সাহায্যে এগিয়ে এসে মানবিকতার উদাহরণ দিলেন শিল্টন পাল।
আমফান সব উড়িয়ে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। তবে ছেড়ে গিয়েছে ভয়ঙ্কর স্মৃতি। গ্রামে ইন্টারনেট তো অনেক দূরের কথা। বিদ্যুৎ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমত কাজ করছে না। তাই অনেকবার চেষ্টার পর ওঁকে লাইনে পাওয়া গেল। সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওঁর গলা কেঁপে আসছিল। বলছিলেন, "চোখ বন্ধ করলে এখনও সেই দৃশ্য ভেসে ওঠে। ওই সন্ধে জীবনে ভুলতে পারব না। কি ভয়ঙ্কর সেই আওয়াজ। বিশাল গাছ থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি কিংবা গবাদি পশু, সাইক্লোনের দাপটে সবকিছু যেন দেশলাই বাক্সের মত উড়ে যাচ্ছিল। এখানেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। 'আইলা' থেকে 'বুলবুল' অনেক ঝড় সামলেছি। তবে 'আমফান' সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ঝড়ের দিন সকাল থেকেই ইলেকট্রিক ছিল না। বাড়িতে আমি,বাবা আর মা। বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট ঘর ছিল। সেটা সবার আগে নষ্ট হয়েছিল। বেশ বুঝতে পারছিলাম বাড়িতে থাকলে কেউ বাঁচব না। তাই সেই রাতে ঝড় থামতেই বাড়ি থেকে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আশ্রয় নিলাম দাদুর বাড়িতে।"
কয়েকবছর আগে এই মিঠুন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল খেলেছেন। গত মরসুমে ট্রাউ এফসি'তে সই করেছিলেন। খালিদ জামিলের প্রিয়পাত্রকে দলে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন রিয়াল কাশ্মীরের কোচ ডেভিড রবার্টসন। তবে ফুটবল নিয়ে এখন ওঁর ভাবনার সময় নেই। কারণ, গ্রামের ছেলে মিঠুন জানেন আগে বাঁচতে হবে। শুধু তো প্রিয় কুঁড়েঘর নয়। বাড়ির কিছুটা দূরে ওঁর বাবার পানের বুরুজ ছিল। সাইক্লোনের দাপটে সেটাও পুরো শেষ। যদিও এতকিছু খারাপের মধ্যে প্রাপ্তিও আছে। এমন সঙ্কটের মধ্যে ওদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিল্টন। তাই সিনিয়রের প্রতি সম্মান জানিয়ে মিঠুনের প্রতিক্রিয়া, "শিল্টন দা'র ঋণ কোনওদিন শোধ করতে পারব না। উনি আমার পরিবারের কাছে ভগবানের মত।"
তা কীভাবে ওঁর পরিবারকে সাহায্য করলেন মোহনবাগানের হয়ে জোড়া আই লিগ জয়ী এই গোলকিপার? ময়দানের 'বাজপাখি' বলছিলেন, "এটা নিয়ে এত ফলাও করে বলার কিছু নেই। গত শনিবার কাকদ্বীপ,নামখানা গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে এসেছি। আগামী শনিবার ফের সেখানে গিয়ে ওই এলাকায় গিয়ে প্রায় ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ দেব। মিঠুনের সঙ্গেও দেখা করে এসেছি। ওর হাতে সামান্য আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছি। পাশাপাশি ওর এবং স্থানীয় এলাকার একাধিক বাড়ি সংস্কারের জন্য স্থানীয় থানার ওসি, ব্লকের আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও বলে এসেছি। আসলে সুন্দরবন ও সেখানকার মানুষদের বাঁচাতে হলে আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমি সাধ্যমত সেটাই করেছি। আশাকরি সবাই আন্তরিকভাবে এগিয়ে এলে এই সমস্যার দ্রুত মোকাবেলা করা যাবে।"