কীভাবে ধারাভাষ্যতে জুটি তৈরি হয়েছিলেন অজয় বসু ও পুস্পেন সরকারের?

নিজস্ব প্রতিনিধি: আগে ইংলিশে ধারাবিবরণী হত। আঞ্চলিক ভাষায় হত না। ত্রিশ দশকের গোড়ার দিকে বাংলা ধারাবিবরণী শুরু হয়। ফুটবল নিয়ে প্রথম ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। যিনি আজও আমাদের মধ্যে চন্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে বেঁচে আছেন।
যদিও তিনি কিন্তু ফুটবল খেলাটা জানতেন না বলে প্রথমে ধারাবিবরণী দিতে চাননি। তাঁকে রায়চাঁদ বড়াল ভরসা যুগিয়ে বলেছিলেন, আরে আমি তো আছি। তুমি ফুটবল নিয়ে ধারাভাষ্য শুরু কর, তারপর আমি তোমার থেকে ধরে নেব। কিন্তু ফুটবল ম্যাচ শুরু হওয়ার পর বীরেন্দ্রকৃষ্ণের হাতে মাইক্রোফোন দিয়ে সরে পড়েছিলেন রায়চাঁদ বড়াল। সেই সময় মহা ফাঁপরে পড়েছিলেন স্বর্গীয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। না কমেন্ট্রি ছেড়ে উঠতে পারছিলেন, না ফুটবল নিয়ে সঠিক ধারাবিবরণী দিতে পারছিলেন। বক্সের মধ্যে গোলকিপার বল হাত দিয়ে ধরলে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বলে উঠেছিলেন হ্যান্ডবল করে বসলেন গোলকিপার। এখন দেখা যাক রেফারি কী সিদ্ধান্ত নেন? এই নিয়ে খুব হাসাহাসিও হয়েছিল। বক্সের মধ্যে নাকি গোলকিপারের হ্যান্ডবল!
৫০ দশকের গোড়ার দিকে ঠিক হয়, ফুটবল যেভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে, তাতে এভাবে বাংলা ধারাবিবরণী দিলে চলবে না। অনেক কিছু বদলাতে হবে। তখন ঠিক হয় আকাশবাণীতে অডিশন নেওয়া হবে। সেই অডিশনে যারা ফুটবলটা বুঝিয়ে বলতে পারবে, আবার মাঠের চিত্রটাও তুলে ধরতে পারবে, তাদেরকে কাউকে নেওয়া হবে।
অডিশনের দিন ঠিক হল। অডিশন দিতে এলেন তিন জন। মন্মথ দত্ত, অজয় বসু ও সন্তোষ মুখার্জি। কেউ ফুটবলটা ভাল বিশ্লেষণ করছেন, কেউ আবার চিত্রটা ভাল ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু একমাত্র অজয় বসু -- দুটোর ভারসাম্য রেখে চমৎকার বিশ্লেষণ করছেন। তখন ঠিক হল অজয় বসুকে রেখে বাকি দুজনকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু একা তো আর টানা ধারাবিবরণী দেওয়া সম্ভব নয়। আরেক জনকে লাগবে। তখন অডিশনে ডেকে সাংবাদিক পুস্পেন সরকারকে নেওয়া হল। এবং মোহনবাগান-রাজস্থান ম্যাচ দিয়ে শুরু হল অজয় বসু ও পুস্পেন সরকারের ধারাবিবরণী। মাইক্রোফোন নিয়ে প্রথম ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন পুস্পেন সরকার। শুরু করেছিল, নমস্কার, আমি পুস্পেন সরকার বলছি। ফুটবলের জন্য দারুন ভাবে হিট করে গেল এই জুটি।
কিন্তু ক্রিকেটেও তো বাংলায় ধারাভাষ্যকার লাগবে। অজয় বসু তখন কমল ভট্টাচার্যকে গিয়ে বলেন ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দেবে। কিন্তু কমল ভট্টাচার্য বেঁকে বসেন। ওনারা যেহেতু একই অফিসে -- একজন বাংলা ও আরেক জন ইংলিশ কাগজে কাজ করতেন, সেহেতু অজয় বসু আরেকবার চেষ্টা করলেন কমল ভট্টাচার্যকে দিয়ে যদি ক্রিকেট কমেন্ট্রির করানো যায়। কারণ কমল ভট্টাচার্য ক্রিকেটটাও দাপিয়ে খেলেছেন। অবশেষে রাজি হলেন কমল ভট্টাচার্য। তবে একটি শর্তে। হাওড়া ইউনিয়নের টেন্টের নিচে গিয়ে আগে তাঁর সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে কমেন্ট্রি করবেন। তারপর মাইক্রোফোন হাতে নেবেন।
পরবর্তী কালে তাদের কমেন্ট্রি টিমের সঙ্গে প্রেমাংশু চ্যাটার্জিও এসেছিলেন। বর্তমান ধারাভাষ্যকার প্রদীপ রায় বলছিলেন, ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন অজয় বসু। একবার তাঁর সঙ্গে তিনি শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে অজয় বসুর অটোগ্রাফের জন্য হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছিল।