প্রিমিয়ারশিপে প্রথম ব্রিটিশ-এশীয় হিসেবে খেলেছিলেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত! জানুন এই কাহিনী

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : আপনারা জানলে অবাক হবেন জিমি কার্টার প্রথম ব্রিটিশ এশিয়ান খেলোয়াড় যিনি প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলেন, এবং তিনি ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আপনারা এই সত্যটা জেনে অবাকই হবেন বলা যায়। যদিও প্রাক্তন লিভারপুল উইঙ্গার ঐতিহ্যশালী অ্যানফিল্ডে তার খেলোয়াড় জীবন কাটিয়েছিলেন এবং তার আগে আর্সেনালের হয়ে প্রিমিয়ারশিপে খেলেছিলেন যেটা অনেকেরই অজানা ছিল, সাম্প্রতিক কালে এটি ব্যাপকভাবে আলোড়ন ফেলেছে।
১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে মিলওয়াল থেকে ৮ লক্ষ ডলারে তিনি লিভারপুলের হয়ে সই করেন, যিনি ছিলেন কেনি ডালগ্লিশের চূড়ান্ত সইগুলির মধ্যে একজন। কার্টার, যিনি অর্ধ-ভারতীয়, পরের অক্টোবরে তিনি হাইবারিতে তার প্রথম পূর্ণ মরসুমের জন্য গানার্সদের জন্য সই করেন, যা প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী ক্যাম্পেইন ছিল ১৯৯২-৯৩ এর। আর্সেনালের হয় মরশুমের প্রথম ম্যাচেই তার দল ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের কাছে ০-১ গোলে হেরে যায়।
তিনি ছাড়াও পরবর্তী ২৯ বছরে, দক্ষিণ এশীয় হেরিটেজ থেকে মাত্র চারজন খেলোয়াড় প্রিমিয়ার লিগে খেলেছে - নিল টেলর, মাইকেল চোপড়া, হামজা চৌধুরী এবং জয়েশ রেহমান। ব্রিটিশ এশিয়ানরা সমগ্র যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ (মোটামুটি ৩.৫ মিলিয়ন) হওয়া সত্ত্বেও, মাত্র ০.২৫% পেশাদার ফুটবলার ব্রিটিশ এশিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ডের।
৫৫ বছর বয়সী কার্টার বলেন যে তার এই ধরনের কেরিয়ারের জন্য তার ভারতীয় বাবার কোন হাত ছিল না। “এটি একটি ভিন্ন সময় ছিল আমি ১৯৮৭-৮৮ মরশুমে মিলওয়ালের হয়ে খেলা শুরু করেছিলাম। টেরেস ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গা। সোশ্যাল মিডিয়ার মত মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সমস্যা এখন রয়েছে, কিন্তু তখন এসব ছিল না। অনেক ব্রিটিশ এশিয়ান তখন ফুটবল খেলত না, আমি মনে করি যে তখন বাবা -মা তাদের সন্তানদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে উৎসাহিত না করে, সম্ভবত তাদের পড়াশোনা এবং শিক্ষার দিকে মনোনিবেশ করতে বলতো। একটি দৃঢ় ও স্থিতিশীল কর্মজীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তখনকার সমাজ সন্তানদের পেশাগত খেলাধুলায় উৎসাহিত করত না।"
"আমার সম্পর্কে জানলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আমার উঠে আসা কোথা থেকে, আমার বাবা ব্যাপকভাবে খেলাধুলায় ছিলেন। তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন, বেড়ে ওঠেন এবং স্কুল করেছেন কিন্তু তিনি নৌবাহিনীতে একজন বক্সারও ছিলেন। যেখানে তিনি ৪৬টি লড়াইয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছিলেন। আমার বাবা একটু কঠোর ছিলেন তিনি সবসময় বলতেন যে দ্বিতীয় স্থানকে কেউ মনে রাখে না যেমন অলিম্পিকে রৌপ্য পদকপ্রাপ্তদের কেউ মনে রাখে না।"
"যখন একজন পিতা-মাতা আপনাকে জোর দিয়ে এটা নিশ্চিত করতে বলেন যে আপনি তখনই কোনো কিছু অর্জন করতে পারবেন যখন আপনি তার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারবেন এই উপদেশ এর জন্য তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। প্রথম ব্রিটিশ এশিয়ান হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে, যদিও তখন কেউ সত্যিটা জানত না যা ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।"
কিন্তু প্রাক্তন উইঙ্গার জোর দিয়ে বলেন যে তিনি অন্য কোন তরুণ ফুটবলারের চেয়ে আলাদা নন যিনি পেশাদার খেলায় এটি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রতিভা সবকিছুর চেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, "রঙ, ধর্ম, এই সব কিছু একটার মধ্যে আসেনি এবং এটা আমি আজও বিশ্বাস করি। আমি এখনও বিশ্বাস করি যে কেনি ডালগ্লিশ বা জর্জ গ্রাহাম, যে সব ম্যানেজার আমাকে স্বাক্ষর করেছিলেন, যদি সেই সময়ে, জনসাধারণের ক্ষেত্রে এটা বেশি হতো যে আমি একজন ব্রিটিশ এশিয়ান ছিলাম, আমি মনে করি না যে এটি তাদের কাছে পার্থক্য করার কোনো কারণ ছিল। তারা শুধু ফুটবল খেলোয়াড়ের দিকে তাকিয়েছিল এবং আমি ক্লাবে কী আনতে পারি সেটার ওপর জোর দিয়েছিল।"
“আমি কি সেই সময়ে আরও বেশি কিছু করতে পারতাম যখন আমি এসেছিলাম? এই সম্পর্কে বলতে গেলে - টেরেসে অন্যরকম সময় ছিল। তখন খেলোয়াড়দের সঙ্গে অপব্যবহার করাহত। ক্রিস্টাল প্যালেসে আমার কেরিয়ার শুরু হয়েছিল একজন তরুণ হিসেবে। আমার বয়স তখন ১৮ বছর। আমি তখন প্রো সাইন করতে গিয়েছিলাম, কিন্ত ১৯ বছর বয়সে আমার চুক্তি ভেঙে যায় তাই আমি স্ক্র্যাপেপ ছিলাম।"
“আমি ১৯ বছর বয়সে খেলা থেকে বেরিয়ে আসার পরে খুব কঠিন হয়ে পরে আবার খেলায় ফিরে আসা কারণ একবার আপনি খেলা থেকে বেরিয়ে গেলে ফিরে আসা খুব কঠিন। যখন তুমি ফুটবল খেলতে পারো এবং প্রতিভা থাকে তোমার রং কোন পার্থক্য করে না, তুমি একজন মানুষ এটাই তোমার প্রকৃত পরিচয় হওয়া উচিত। আমি মনে করি না যে আমার ভারতীয় ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য অন্য কারো থেকে নিজেকে আলাদা করার কোন প্রয়োজন আছে। আমরা সবাই একই, আমাদের বাবা -মা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের হতেই পারেন।"
"যেহেতু আমি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে এত কঠিন সময় পেয়েছিলাম এবং অবশেষে আমি নিজেকে ফুটবলে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম তাই আমি মনে করি না যে আমার আলাদা কিছু করা দরকার কারণ আমার মূল ফোকাস ছিল ফুটবলে থাকা এবং নাম করার চেষ্টা করা। আমার স্বপ্ন ছিল সবসময় একজন পেশাদার ফুটবলার হওয়ার খুব ভালো খেলার সৌভাগ্যক্রমে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।"