মশালধারী

ফেব্রুয়ারি ২৪ : ফুটবল জীবন শুরু টালিগঞ্জ অগ্রগামী থেকে , তারপর তৎকালীন প্রয়াগ ইউনাইটেড হয়ে যোগ ইস্টবেঙ্গলে । ২০১৪ থেকে ১৮ মরশুমে লালহলুদ জার্সি গায়ে খেলেছেন ৬২টি ম্যাচ । ইস্টবেঙ্গল জার্সি গায়ে চাপিয়েই খুলে ফেলেছিলেন জাতীয় দলের দরজা । আর কেউ নন , তিনি মহম্মদ রফিক।
ইস্টবেঙ্গল তখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি আই লীগ না আইএসএল । তবুও প্রিয় ক্লাবের ডাক ফেরাননি ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে । আইএসএলে লালহলুদের লাঞ্ছনার কারণ যদি অর্ধেক কোচিং বিদ্যা হয় , দ্বিতীয়টি অবশ্যই খেলোয়াড়দের লালহলুদ জার্সির ওজন বুঝতে না পারা । তবু দলে যে কয়েকজন ব্যতিক্রম তার মধ্যে তিনি একজন । হয়তো তাঁর সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু দায়বদ্ধতা দিয়ে সেসব কিভাবে ছাপিয়ে যেতে হয় , বারবার প্রমাণ করেছেন রফিক । ম্যানেজমেন্ট খেলাচ্ছে অপরিচিত জায়গায় , রাইট ব্যাকে , তবুও যতক্ষন মাঠে থাকছেন , বুক চিতিয়ে লড়ছেন । নর্থইস্ট ম্যাচেও তার পরিবর্তন নেই । গোটা ম্যাচে যতক্ষণ লালহলুদের ডান দিকে ছিলেন , গলেনি মাছিও । একসময় মেহতাবকে দেখে বলা হত , তাঁর নাকি চারটে ফুসফুস , যতক্ষন মাঠে থাকেন রফিক ততক্ষণ যেন সেরকমই মনে হয় তাঁকে দেখে । বল পায়ে থাকলে ছিনিয়ে নেওয়া কঠিন , গতি - রিফ্লেক্স দেখে একমাত্র তাকেই মনে হয় একশো শতাংশ ম্যাচ ফিট , ৯০ মিনিট মাঠে থাকার উপযুক্ত।
কিন্তু এবার লালহলুদের নিয়ম অন্য । ম্যাচের পর ম্যাচ যখন অন্য খেলোয়াড়রা ডোবাচ্ছেন , তখন হঠাৎ ভালো খেলার দায়ে বেঞ্চে গেলেন রফিক , তারপর আস্তে আস্তে দলের বাইরে ।
রফিক আর যাই করুন হেডটা অন্তত দিতে জানেন । অথচ লালহলুদের ম্যানেজমেন্ট-এর এমনই মায়া , যে গোটা মরশুমে সেটপিস থেকে পেনাল্টি বক্সে বল গেলে তাকে দেখা যায়না হেড দিতে । মিলন , অজয় , তোম্বা-দের হম্বিতম্বি তো গোটা মরশুমেই দেখলেন লালহলুদ সমর্থকরা , তাদের থেকে রফিকের চোরা গতির দৌড় , পঞ্চাশ-পঞ্চাশ বলের জন্য ঝাঁপানো এসব কী খুব খারাপ হতো ? কে জানে ।
আজও যখন মাঝমাঠে এলেন , জেজেকে এমন একটা পাস দিলেন , যে গোটা নর্থইস্ট রক্ষণ একমুহূর্তে ইন্ডিয়া গেট হয়ে গেল , বোধহয় ওটাই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ম্যাচের সেরা পাস । জেজে আগের জেজে থাকলে হয়তো এসে যেত গোলও । কিন্তু ঐটুকুই । ঠিক তার পরের মুহূর্তেই তুলে নেওয়া হল তাঁকে । কারণ এই লালহলুদে এটাই নিয়ম । গোটা মরশুমে এটাই হয়ে এসেছে । কোনও খেলোয়াড়কে চিনতে একটা গোটা মরশুম লেগে যায় , এটা বোধহয় ক্লাস টুয়ের বাচ্চাও বিশ্বাস করবে না । তবুও কিছু লোক অজুহাত দিয়ে দিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরবেন । রফিক সেই দলে নেই । লালহলুদে আজকাল সবাইকেই মশালধারী বলে অভিহিত করা হচ্ছে । তবে মশালের ওজন আদেও সবাই নিতে জানে কিনা সেই প্রশ্ন কেউ করে না । তবুও এই লালহলুদে যে কয়েকজন সত্যিই আছেন মশাল ধরার , রফিক তাদের মধ্যে একজন ।