মাঠের মধ্যে ও মাঠের বাইরে জুটি অটুট রাখার কারণ জানালেন মানস-বিদেশ...

নিজস্ব প্রতিনিধি: শুধু মাঠের মধ্যে নয়, মাঠের বাইরেও জুটি ছিলেন তারা। ছিলেন কি? আজও আছেন। আর কী করেই বা সেই জুটি গড়ে উঠেছিল? সেই সবই এক্সট্রাটাইম বাংলার লাইভ শো'তে খোলামেলা আলোচনায় জানালেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য ও বিদেশ বসু।
জুটি গড়ে ওঠা
বিদেশঃ ১৯৭৩ সালে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মানস তখন ক্যালকাটা জিমখানায় খেলে। আমি ভ্রাতৃসংঘে । ত্রিপুরায় অলবেঙ্গল খেলতে গেছি। আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়লাম। দলের সবাই ঘুরতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে, সেই সময় মানস দেখে আমি নেই। ও ম্যানেজার পশুপতি দাকে গিয়ে বলল, কাল যে গোল করেছে, ওই কালো ছেলেটাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। ম্যানেজার বললো, ওর জ্বর। ও রুমে শুয়ে আছে। মানস আর ওদের সঙ্গে বেড়াতে না গিয়ে, আমার ঘরে চলে এল। ওখান থেকেই শুরু হয়ে গেল বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট।
মানসঃ ও যা বলেছে, সবই ঠিক আছে। আমি শুধু একটু সংযোজন করতে চাই। ও শুধু আমার খেলার মাঠেরই বন্ধু নয়, ওর আর আমার কর্মস্থলও একই ছিল। ওর আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের নম্বরও প্রায় এক। আমি প্রভিডেন্ড ফান্ড নম্বর ভুলে গেলে ও বলে দেয়। ও মাঝে মাঝে ভুলে গেলে আমি বলে দি।
কোলবা বিচের সেই রাত
মানসঃ ১৯৭৮ সালে দিল্লিতে ইস্টবেঙ্গলের কাছে ডুরান্ড কাপে হেরে, মুম্বাইয়ে রোভার্স কাপ খেলতে গেলাম। ওখানেও অর্কের কাছে চার গোলে হারালাম। অর্কের অনটাই হ্যাট্রিক করল। তাই মনটা খুব খারাপ। চার-পাঁচ জন মিলে সেই রাতে কোলবা বিচে গেলাম। একটা জায়গায় বসে ম্যাচটা নিয়ে আলোচনা করছি। হঠাৎ মান্নাদা সেখানে হাজির। জিজ্ঞাসা করলেন এত রাতে তোমরা এখানে কী করছ? ভয় ভয় গলায় কম্পটনদা বললেন, পরের বছর তো আপনি আর আমাদের রাখবেন না। তাই কে কী করব, সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছি। মান্নাদা বললেন, হোটেলে যাও। এটা নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।
বিদেশঃ আমার পরিষ্কার মনে আছে ডুরান্ড কাপে হারের পর প্রদীপদা রোভার্স কাপে খেলতে যেতে চাননি। তখন ধীরেনদা, প্রদীপদাকে বলেছিলেন, আমি কথা দিয়ে দিয়েছি। মোহনবাগান রোভার্স কাপ খেলবেই। আপনারা যদি খেলতে না চান, তাহলে আমি কলকাতা থেকে মালিদের পাঠিয়ে দেব। ওরা খেলে আসবে। কিন্তু রোভার্স কাপে মোহনবাগান খেলবেই।
৮১ সালে মহামেডান
মানসঃ মোহনবাগান ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু হঠাৎই শুনলাম, আমাকে আর বিদেশকে নাকি দলে রাখা অসম্ভব। তখন আমি, বিদেশ আর প্রসূনদা মহামেডান চলে গেলাম। ওদের শেষবারের মতো কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলাম। তবে মোহনবাগান ছাড়তে কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বাধ্য হয়েছিলাম।
বিদেশঃ তখন শুনেছি সুরজিৎদা নাকি সবাইকে নিয়ে মহামেডানে চলে যাচ্ছে। ভাস্কর, চিন্ময় তখন আমাকে ফোন করে বলল তোরা চাইলে মহামেডানে আসতে পারিস। মোহনবাগান ছেড়ে যাওয়ার সময় কষ্ট পেয়েছিলাম। কিছু কষ্ট থাকে, কিন্তু কাউকে বোঝানো যায় না।
ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব
বিদেশঃ ৮৪ সালে নেহেরু কাপে দারুন খেললাম। ইস্টবেঙ্গল আমাকে কসবার বাড়িতে নিতে এল। আমি ওদের বললাম মোহনবাগান ছেড়ে যেতে পারব না। তার একটাই কারণ, মোহনবাগান ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে ভাল খেলতে না পারলে, লাল-হলুদ সমর্থকরাই তখন বলত, ও আর খেলবে কী করে, ও যে মোহনবাগানি। আর সবুজ-মেরুন সমর্থকরা তখন বলত, এবার বোঝ মোহনবাগান ছেড়ে ওই ক্লাবে গেলে কী হয়! তাই ঠিক করেছিলাম, গালাগালি খেলে এক ক্লাবেই খাব।
মানসঃ ইস্টবেঙ্গল চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যায়নি। তার জন্য কোনও আক্ষেপ নেই।
জ্যাভিয়ার পায়াস
মানসঃ আইএম বিজয়ন ভাল। কিন্তু পায়াসও বড় মাপের ফুটবলার। ওর বুদ্ধি ও সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পায়ের কাজের জন্য ওকে আটকানো যেত না।
বিদেশঃ ও টোয়ের উপর খেলত। নাচের ভঙ্গিতে। আমার এখনও মনে আছে ওর সেই ডিপ চিপের কথা। পুরো পায়ে ফেলত।
পেলের কসমস
বিদেশঃ যে পেলের গল্প শুনেছি। সেই পেলের বিরুদ্ধে খেলব। এটা শোনার পর সারা রাত ঘুমায়নি।
মানসঃ পেলের ডান হাত ধরে ছিলাম। এই জন্য মোহনবাগান ও ধীরেনদাকে এখনও ধন্যবাদ জানাই।
১৬ আগস্ট
বিদেশঃ আমার রিটালিয়েট করা উচিত হয়নি। তবে মাঠের গন্ডগোলের জন্য গ্যালারিতে গন্ডগোল ছড়িয়েছে বলে যেটা বলা হয়ে থাকে সেটা ঠিক নয়। ম্যাচের শুরু হওয়ার আগে থেকেই ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেছিল। আমার মনে হয়, পুলিশ গ্যালারিতে উঠে সমর্থকদের তাড়া না করলে সেদিনের ঘটনা ঘটত না।
মানসঃ প্রশাসনিক কারণেই ঘটনা ঘটেছিল। তবে সুধীনদা আরেকটু শক্ত হাতে খেলা পরিচালনা করলে, এটা হতো না। দিলীপ পালিত ইচ্ছা করেই বিদেশকে লাথি মারছিল। ওকে সুধীনদার কার্ড দেখান উচিত ছিল।
ধারাভাষ্য
মানসঃ আমি এটা দারুন উপভোগ করি। উভয় দলের সমর্থকদের মনমতো না হলেই সমালোচনা করে। গ্রেমাইন্ডের অনিলাভ এই ব্যাপারে সাহায্য করেছে। রেডিও কমেন্ট্রি ও টিভি কমেন্ট্রির পার্থক্য বুঝিয়েছে।
বিদেশঃ ও বরাবরই কমেন্ট্রি করতে ভালবাসে। বাইরে যখন খেলতে যেতাম। ও রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ক্রিকেটের কমেন্ট্রি করত। আমি কখনও কমেন্ট্রি করিনি এক্সপার্ট থেকেছি।