সৌভাগ্য

আকাশ , ফেব্রুয়ারি ১৯ : দিনের পর দিন , ম্যাচের পর ম্যাচ । লালহলুদের ম্যাচ দেখতে বসলে ৯০ মিনিট একটানা বসে থাকাই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে ওঠে লালহলুদ সমর্থকদের । লালহলুদের একশো বছরের ইতিহাস , চড়াই যেমন এসেছে তেমনই এসেছে উতরাইও কিন্তু ইস্টবেঙ্গল জার্সি গায়ে চাপিয়ে যে এরকম জঘন্য ফুটবল খেলা যায় সেটা বোধহয় জানতেন না কোনও সমর্থকই । আইএসএলে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে সবুজমেরুন যেভাবে ছেলেখেলা করল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে তাতে অন্ধকার নামতে বাধ্য লালহলুদ জনতার মনে ।
প্রথম ডার্বিতে অজুহাত ছিল , দল গড়ার সময় পাওয়া যায়নি । এরপর যত সময় গড়িয়েছে ততই বেড়েছে অজুহাতের তালিকা । কখনো বাজে রেফারিং এর সুযোগ নিয়ে দায় এড়িয়ে গেছেন লালহলুদ ম্যানেজমেন্ট , কখনও বা দোষ চাপিয়েছেন স্বদেশী খেলোয়াড়দের ওপর ।
আজ কিন্তু কোনও অজুহাত ধোপে টিকবে না ।
হাইভোল্টেজ ম্যাচে কৃষ্ণ - মার্সেলিনো - উইলিয়ামস এর মত দ্রুত প্রতি আক্রমণে ওঠা খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে শ্লথ গতির রাজু-ফক্সরা খেলতে গেলেন উঁচু ব্যাকলাইন নিয়ে । কাজেই যা হওয়ার তাই হল । কৃষ্ণর গতি বা ডিফেন্স ভাঙা লম্বা বলে বারবার খাবি খেল লালহলুদ ডিফেন্স ।
প্রথম ডার্বিতে না হয় ভালো খেলোয়াড় ছিলেন না , এদিন তো ব্রাইট ছিলেন । নিজের একক দক্ষতায় উজ্জ্বলও হলেন বারকয়েক । কিন্তু লালহলুদ কোচের স্ট্রাটেজি বোধহয় ওই ব্রাইটের একক দক্ষতাতেই সীমাবদ্ধ । লীগের মগডালে থাকা বাগান ডিফেন্স সারা ম্যাচ মার্ক করে গেল পিলকিংটন ব্রাইটদের। অথচ লালহলুদে বালাই নেই সেসবের। ব্রাইট শেষবেলায় একক প্রচেষ্টাতে না এগোলে , গোটা ম্যাচ হয়তো ঘুমিয়ে কাটাতে হত অরিন্দমকে। সামাদকে তাড়িয়ে অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়কে আনা হয়েছে মাঝ মরশুমে । এমন জঘন্য খেললেন যে লালহলুদের আগের দিন হলে জীবনে আর কোনোদিন লালহলুদ জার্সি গায়ে চাপতে পারতেন কীনা সন্দেহ ।
কথায় বলে ভালো কোচের দল নাকি দ্বিতীয়ার্ধে ভালো খেলে । লালহলুদকে খুঁজেই পাওয়া গেলনা দ্বিতীয়ার্ধে । স্বদেশী খেলোয়াড়রা কোনোদিন কোচিং পাননি বলে একবার মন্তব্য করেছিলেন লালহলুদ কোচ । অথচ বিদেশি স্ট্রাইকারহীন এসসি ইস্টবেঙ্গলে তিনি জামাই আদর করে এনেছেন আমাদী হলওয়েকে, শোনা গিয়েছিল তিনি নাকি স্ট্রাইকার-ডিফেন্ডার সব জায়গাতেই সমান দক্ষ । অথচ মাঠে নেমে গুঁতোগুঁতি আর নাটকটুকু বাদ দিলে , খেপ প্রতিযোগিতাতেও জায়গা পাবেন কিনা সন্দেহ । পিলকিংটন বড় খেলোয়াড় সন্দেহ নেই কিন্তু সেরা সময় পেরিয়ে গেছে তারও । আরেক বিদেশি ফক্স সারা ম্যাচে হসপিটাল পাস বাড়িয়ে গেলেন। তার থেকে বল পেয়েই এলো বাগানের দ্বিতীয় গোল ।
একটা গোটা মরশুম বাগ-বিতণ্ডা করে কাটিয়ে দিলেন ফাউলার-গ্রান্টরা । পরিকল্পনার প-ও নেই খেলায় । ম্যাচ শেষে বিপক্ষ কোচ হাবাসও ব্যঙ্গ করে বলে গেলেন সেকথাই । ম্যাচ রিডিং বলে আদেও কোনো শব্দ এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজমেন্ট-এর অভিধানে আছে কিনা সন্দেহ । কোনও স্ট্রাটেজি কাজ না করলেও সেটাই বয়ে বেড়ানোই নিয়ম এখানে ।
একসময় এই দলেই কোচিং করিয়েছেন পিকে ব্যানার্জী , অমল দত্তের ডায়মন্ডকে চূর্ণ করে দেখিয়েছেন কিভাবে অঙ্ক করে ম্যাচ বার করতে হয় । এই দলেই একসময় সুভাষ ভৌমিক ষষ্ঠী দুলেকে দিয়ে সেসময়ে এশিয়ার সেরা মিডিও বেকতেরো সাসনার চাইম্যানকে বোতল বন্দী করে তুলে নিয়েছিলেন আশিয়ান কাপ ।
আই লীগ না পেলেও ট্রেভর মরগানের মেহতাব-পেন-টোলগে ত্রিভুজ মাতিয়ে দিয়েছিল ময়দান ।
ফুটবল এগিয়েছে , ফ্যানক্লাব তৈরি হয়েছে , আজকাল মাঠের বদলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে বেশি । তার ওপর প্যান্ডামিকে বাইরের মাঠে প্রথমবার নামল দল। তাই নতুন সমর্থকরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলেছিলেন যাই হয়ে যাক , দলের পাশে থাকবেন । সেই সুযোগটাই যেন নিল নতুন টিম ম্যানেজমেন্ট। সমর্থকরা বলেছিলেন এক দু ম্যাচ হারলেও গেল গেল রব তোলার কিছু নেই। সেখানে মুখে বড়বড় বাতেলা দিয়েও দিনের শেষে শতবর্ষের ইস্টবেঙ্গলে যে কলঙ্ক দিয়ে গেলেন রবি ফাউলার , টনি গ্রান্টরা তা হয়তো কোনোদিনও মুছবে না লালহলুদ জনতার মন থেকে ।
লালহলুদ জনতাও বুঝতে শুরু করেছে তাদের ভরসার কী প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে । দুদিন আগে ইস্টবেঙ্গলকে নতুন ক্লাব বলে বিতর্ক বাঁধানো গ্রান্টরা হয়তো জানেন না লালহলুদের জন্মেই আছে মুখ বুজে সব কিছু সহ্য না করার শিক্ষা । তাই তাঁদের ভাগ্য সত্যিই ভালো যে কলকাতায় হচ্ছে না কোনও খেলা । ভাগ্য ভালো দলের কথা ভেবে মুখ বুজে সব সহ্য করছেন সমর্থকরা । তাঁদের সৌভাগ্য যে এখনও মশাল জনতার আবেগের মশালে জ্বলেনি আগুন ।