অন্যান্যবারের থেকে এবারের বড় ম্যাচ কেন স্পেশ্যাল? রইল ১০টি কারণ

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : আগামী ১৬ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে ডুরান্ড কাপ, আর এর মাধ্যমেই শুরু হচ্ছে আসন্ন ভারতীয় ফুটবল মরশুম। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীরা অপেক্ষা করে আছেন আগামী ২৮ আগস্টের জন্য। সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হবে এটিকে মোহনবাগান ও ইমামি ইস্টবেঙ্গল।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, বড় ম্যাচ, সব মিলিয়ে বাংলা ফুটবলের আবহাওয়া বেশ গরম। এই পরিস্থিতিতে এবারের বড় ম্যাচ অন্যান্যবারের থেকে অনেকটাই স্পেশ্যাল। তা কেন? এই ১০টি কারণের জন্যই এবারের কলকাতা ডার্বি হতে চলেছে অনন্যসাধারণ।
আড়াই বছর পর কলকাতায় মুখোমুখি হচ্ছে লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুণ ব্রিগেড। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। তখন অবশ্য মোহনবাগানের আগে ছিল না এটিকে, আর ইস্টবেঙ্গল ও কোয়েসের মেলবন্ধনে ছিল জটিলতা। সেই ম্যাচে মোহনবাগান জিতেছিল ২-১ গোলে।
বলা হয়, বড় ম্যাচ যে জেতে, খেতাব কার্যত তারই। এবং তারই প্রতিফলন ঘটবে এবারের বড় ম্যাচেও। ডুরান্ডের গ্রুপ বি-কে ধরা হচ্ছে গ্রুপ অফ ডেথ। কারণ ইমামি ইস্টবেঙ্গল ও এটিকে মোহনবাগান ছাড়াও রয়েছে মুম্বই সিটি এফসি। ফলে এই তিন দলের মধ্যে দুটি দল উঠবে সেমিতে, এমনটাই আশা করা যায়। এই পরিস্থিতিতে এবারের বড় ম্যাচ কার্যত নকআউট হতে চলেছে দুই দলেরই জন্য।
ডার্বি বরাবরই ৫০-৫০, এই সম্যক ধারণা বিরাজমান কলকাতা ময়দানে। কিন্তু যদি ফুটবল তত্ত্ব দিয়ে বিচার করা হয়, তাহলে এটিকে মোহনবাগান অনেকটাই এগিয়ে ইমামি ইস্টবেঙ্গলের থেকে। লিস্টন কোলাসো-মনবীর সিং-আশিক কুরুনিয়ন সমৃদ্ধ আক্রমণভাগ, জনি কাউকো-হুগো বুমোসদের নিয়ে সাজানো মাঝমাঠ, ফ্লোরেন্টিন পোগবা-ব্রেন্ডন হ্যামিল-প্রীতম কোটালদের নিয়ে ভরা ডিফেন্স - সব মিলিয়ে শক্তিশালী এটিকে মোহনবাগান। অন্যদিকে স্টিফেন কনস্টানটাইনকে নিয়ে একেবারে নতুনভাবে দলগঠন করছে ইমামি ইস্টবেঙ্গল। ফলে শক্তির বিচারে, এটিকে মোহনবাগানই এগিয়ে।
ইনভেস্টর পর্ব আসার পর থেকে প্রায়ই দেখা যেত, নিজেদের মাঠকে অবহেলা করে যুবভারতীর অনুশীলন মাঠে প্রস্তুতি সারত ইস্টবেঙ্গল। এমনকি, করোনা অতিমারি পেরিয়েও কালো পর্দা ঢেকে অনুশীলন করেছে এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু এবার চিত্রটি বদলেছে। দুই প্রধানই নিজেদের ঐতিহ্যশালী মাঠে, সমর্থকদের মাঝখানে অনুশীলন করছে। আবারও যেন সেই পুরোনো ময়দানি আমেজ ফিরে এসেছে।
পুরোনো ময়দানি আমেজ ফিরলেও যুগের সাথে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে, তা বুঝেছে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। আর সেই কারণে নিজেদের তাঁবু ও মাঠের সংস্করণের কাজও অনেকটাই সেরেছে দুই প্রধান। একেবারে আধুনিকতায় ঢেকে গিয়েছে মোহনবাগান তাঁবু, এদিকে নিজেদের মাঠ ঠিক করছে ইস্টবেঙ্গল।
সংযুক্তিকরণের পর এই প্রথমবার কলকাতায় বড় ম্যাচ খেলবে এটিকে মোহনবাগান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, উত্তেজনা থাকবেই। একদিকে মোহনবাগান গ্যালারির এক অংশে হয়ত রিমুভ এটিকে স্লোগান উঠবে। আবার উল্টোদিকের ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে মোহনবাগানীদের উদ্দেশ্যে এটিকে নিয়ে খোঁচা চলতেই থাকবে। এটিকে নামক কাঁটা নিয়ে দুই পক্ষের সমর্থকরা একে অপরকে আঘাত হানবে।
শুধু কি ইস্টবেঙ্গল এটিকে নিয়ে খোঁচা মারবে? এমনটা হয়ত নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে ফুটবলে সাফল্য আসছে না ইস্টবেঙ্গলের। এদিকে একের পর এক ইনভেস্টর বদলাচ্ছে, এই অচলাবস্থা মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকদের একাংশ। হয়ত বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে দেখা যেতে পারে ক্লাবের কার্যসমিতির বিরুদ্ধে স্লোগান, নির্দিষ্ট কোনও কর্তার নামে গো আউট স্লোগান। আর সেটি নিয়েও মোহনবাগান সমর্থকরা খোঁচা মারতেই পারেন।
আড়াই বছর পর বড় ম্যাচ, তাও আবার সমর্থকদের মাঝখানে। টিকিট কি আর থাকে? শনিবার অনলাইনে ডুরান্ডের টিকিট ছাড়া হয়েছিল, কিন্তু দুই ঘন্টার মধ্যেই শেষ ডার্বির টিকিট। মানুষ খুঁজছে, জানতে চাইছে আবার কি টিকিট আসবে? অফলাইন টিকিট এলে দীর্ঘ লাইনে পড়তেই হবে, তার আন্দাজ এখন থেকেই করা যায়।
২০২০ এর বড় ম্যাচ আর ২০২২ এর বড় ম্যাচ, মোহনবাগানের ক্ষেত্রে বদল হয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু বড় বদল হয়েছে ক্লাবের শীর্ষক্ষেত্রে। এক সময়ের জুটি দেবাশিস দত্ত ও সৃঞ্জয় বসু আজ আলাদা। মোহনবাগানের নতুন সচিব হিসেবে দেবাশিস দত্ত রয়েছেন, এদিকে সৃঞ্জয় বসু থাকবেন সাধারণ গ্যালারিতে, সেখানেই বসে সমর্থন করবেন এটিকে মোহনবাগানকে। দুই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু আজ যেন দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে, মাঝে চলেছে এটিকে মোহনবাগানের স্রোত।
কিছুটা ভিন্ন অবস্থা বলা যায় ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভিআইপি গ্যালারি থেকে ইস্টবেঙ্গলের জন্য গলা ফাটাবেন দেবব্রত সরকার ও আদিত্য আগরওয়াল। গত ২ আগস্ট ইমামি ও ইস্টবেঙ্গলের আনুষ্ঠানিক চুক্তিবন্ধন অনুষ্ঠানে যে মেলবন্ধনের চিত্র দেখা গিয়েছিল, তাতে একই ছবি বড় ম্যাচেও দেখা যেতে পারে।