ভারতীয় দলে সুব্রত পালদের উত্তরসূরি হয়ে উঠতে হবে তোকে। শঙ্কর রায়কে বললেন অতনু ভট্টাচার্য...

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ এক্সট্রাটাইম বাংলার নতুন শো পরম্পরা'তে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই প্রজন্মের দুই গোলকিপার। প্রাক্তন এশিয়ান অলস্টার গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্য ও মোহনবাগানের হয়ে আই লিগ জয়ী গোলকিপার শঙ্কর রায়। যিনি আগামী মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলবেন। তা কী কথা হলো দুই সময়ের দুই গোলকিপারের মধ্যে?
শঙ্কর: স্যার এমন একটা অনুষ্ঠানে আপনাকে পেয়ে আমার ভালই হল। বেশ কিছু মূল্যবান জিনিস জেনে নিতে পারব।
অতনু: তোর খেলা দেখেছি। তুই এবার খুব ভাল খেলেছিস। বল, কী জানতে চাইছিস?
শঙ্কর: স্যার আপনার কাছে জানতে চাইব বেশ কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো কী ভাবে দূর করব?
অতনু: দ্যাখ কেউই ১০০ শতাংশ সঠিক নয়। একজন গোলকিপারও নয়। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবেই। তবে আমি বলব স্ট্রংপয়েন্টকে আরও শক্তিশালী কর। দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা কর। বেশি সমালোচনায় কান দেওয়ার দরকার নেই। নিজের কাজ নিজে করে যা। তোর যোগ্যতা আছে বলেই তুই এই লেভেলের ফুটবল খেলছিস। সব গোলকিপারের ভাল সময়, খারাপ সময় যায়। তা বলে নেগেটিভ জিনিসটাকে আঁকড়ে ধরে রাখলে চলবে না। পরের ম্যাচেই সেটাকে শুধরে নিতে হবে। পালিয়ে গেলে চলবে না।
শঙ্কর: স্যার আমি যদি কোনও ম্যাচে ভুল করি, তাহলে আমার আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। ম্যাচ খেলতে খেলতে তখন মনে হয়, পরের ম্যাচে সুযোগ পাব তো? এর থেকে বেরোনোর উপায়?
অতনু: রোজ কারোরই ভাল সময় যায় না। বাজে সময় আসতেই পারে। তা বলে হতাশ হলে চলবে না। এই রকম যখন সময় আসবে তখন নিজের ভাল ভাল সেভ গুলি মনে করবি। কোনটা ওয়ান টু ওয়ান সেভ দিয়েছিলি। বা দুর্দান্ত ফ্লাইং করে কোন বলটা বাঁচিয়ে ছিলিস।
শঙ্কর: আমার আউটিংয়ে বেশ সমস্যা আছে। সেটা ওভারকাম করব কী করে?
অতনু: তোর উচ্চতা ভাল নয়। সেক্ষেত্রে তোর স্পট জ্যাম্পে উন্নতি করতে হবে। আমার, শিবাজী, প্রতাপ, তনুময়ের মতো তোর উচ্চতা নয়। তা বলে কী তুই ভাল গোলকিপার হতে পারবি না! অবশ্যই হতে পারবি। মনে রাখবি আমাদের থেকে কম উচ্চতা নিয়ে খেলে ভারতবর্ষ কাঁপিয়ে দিয়েছে ভাস্কর গাঙ্গুলি। কেন বল তো? ওর স্পট জাম্প আর টাইমিং দুর্দান্ত ছিল। তোরও তাই করতে হবে। তার জন্য তোকে ২০-২৫ গজের শট স্পিন টানতে হবে। এতে তোর বক্সের মধ্যে গতি বাড়বে। স্ট্রাইকার হেড দেওয়ার আগে তুই তাঁর মাথা থেকে বল তুলে নিতে পারবি।
শঙ্কর: আপনি তিন প্রধান খেলেছেন। আমি আগামী বছর ইস্টবেঙ্গলে খেললে, তিন প্রধান খেলা হয়ে যাবে। যদি এই ব্যাপারে বলেন কিছু।
অতনু: বিশেষ কিছু বলার নেই। শুধু বলব ইস্টবেঙ্গলে সেরাটা দিও। আর প্রমাণ করে দিও, মোহনবাগান-এটিকে তোমায় না নিয়ে ভুল করেছে। পরের বছর যেন তোমার জন্য আইএসএল দলগুলি ঝাঁপায়। ইস্টবেঙ্গলে এসেছ, দারুন সমর্থক পাবে। ভাল খেলতে পারলে ওঁরা তোমায় মাথায় তুলে রাখবে। তুমি ক্লাবের হয়ে ভাল খেললে, দেশ তোমায় ডাকবে। ভারতীয় দলে সুব্রত পাল, সন্দীপ নন্দীদের উত্তরসূরী হয়ে উঠতে হবে তোমাকে। আর একটু অন্য খেলা কম খেল।
শঙ্কর: ডার্বি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা যদি একটু শেয়ার করেন।
অতনু: ডার্বি ম্যাচের চাপ থাকবেই। ওটা সব সময় যে কোনও দলেরই ম্যাচ হতে পারে। যখন মোহনবাগানে খেলতাম তখন আন্ডার ডগ হয়ে নামতাম। আর ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন আপার হ্যান্ড নিয়ে নামতাম। তুইও খেলতে খেলতে চাপ নিতে শিখে যাবি।
শঙ্কর: লক ডাউনে কীভাবে নিজেকে তৈরি রাখব?
অতনু: বাড়ির ছাদে স্কিপিং, ব্যায়াম করা যেতে পারে। আমাদের সময় আমার বাড়ি ছাদে এসে টুলু, আমাকে আর কৃষানুকে দারুন ফিট রাখত। মনে রাখবি একজন ভাল গোলকিপারের ভাল রিফ্লেক্স দরকার। তার সঙ্গে স্ট্রেন্থ, এজিলিটিও প্রয়োজন।
শঙ্কর: স্যার আশীর্বাদ করুন আমি যেন আরও ভাল খেলতে পারি।
অতনু: অবশ্যই আরও বড় হ। ভাল খেল। আর হ্যাঁ, খেলার সময় মনে রাখবি, বল মাঝমাঠ পেরিয়ে তোর দিকে আসা শুরু করলেই, বলের দিক চোখ রাখবি। কিছুতেই সরাবি না। ওই সময় কিন্তু ক্যাজুয়ালের কোনও জায়গা নেই। অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। ভাল থাকিস।