বাসু এখন ব্র্যাডম্যান-হাটনের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করবেন, স্মৃতিচারণা সুনীল গাভাস্কারের

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : ভারতীয় ক্রিকেটে অসংখ্য সুপারস্টার এসেছে, নিজেদের প্রতিভা দেখিয়ে ভারতকে বিশ্বসেরা করেছে। কিন্তু সেই সুপারস্টারদের গড়ার পিছনে যাদের হাত থাকে, তাদের অনেককেই সেই প্রকৃত সম্মান দেওয়া হয় না। তবুও কিছু গুরু রয়েছেন বা ছিলেন, যারা সর্বদাই শ্রদ্ধেয়, তেমনই একজন ছিলেন ভাসু পরাঞ্জপে।
গত সোমবার প্রয়াত হন মুম্বইয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা কিংবদন্তি কোচ ভাসু পরাঞ্জপে। তার অধীনে সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে শচিন তেন্ডুলকর, রোহিত শর্মা - এমন অসংখ্য মুম্বইয়ের দাপুটে খেলোয়াড়রা বড় হয়েছেন। এবার নিজের এক সময়ের ক্যাপ্টেন তথা গুরু ভাসু পরাঞ্জপের স্মৃতিচারণা করলেন কিংবদন্তি ওপেনার সুনীল গাভাস্কার।
"আমরা সবাই আমাদের ক্যাপ্টেনকে হারালাম, আমাদের খেলার প্রতি সবচেয়ে আবেগপ্রবণদের মধ্যে একজন। আমি যতীনের (ভাসু পরাঞ্জপের ছেলে) সাথে আলোচনা করছিলাম যে, তিনি এখন ডন ব্র্যাডম্যান, স্যার লেন হাটনের সাথে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি আমাদের জন্য অসাধারণ স্মৃতি রেখে গেছেন। তার ডিসিপ্লিন ছিল দেখার মতো - আমার মনে আছে দাদর ইউনিয়ন মাঠে, তিনি প্রথম পৌঁছাতেন। কখনো দেরি করেননি।"
"তিনি আমাদের যে বিষয়গুলো বলেছিলেন তা হল, এটি একটি খেলা, জয় -পরাজয় এর থাকবেই কিন্তু এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল খেলা উপভোগ করা। একবার খেলা উপভোগ করলে, আপনি ভাল খেলতে বাধ্য। তার সাথে থেকে, আমরা কেবল খেলাটিই শিখেছি তা নয় বরং অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি, তিনি আমাদের খুব হাসাতেন কারণ উনি সবসময় জিনিসের মধ্যে মজার দিক দেখতেন।"
"তিনি এমন লোকদের মধ্যে একজন ছিলেন যাদের উত্তর সবসময় প্রস্তুত থাকত। সম্ভবত আমি যেসব ক্রিকেটারকে চিনতাম তাদের মধ্যে প্রয়াত বিজয় মাঞ্জরেকার একরকম ছিলেন। বাসু খুব ইতিবাচক ছিলেন। এমনকি যদি তাকে কিছু বলতে হয়, তবে তিনি এমনভাবে বলবেন যে আপনি জিনিসটি জানেন। এটাই ছিল তার বিশেষত্ব, তিনি এমনভাবে বলতেন তাতে বোঝা যেত না যে তিনি আপনাকে তিরস্কার করছেন না বুঝিয়ে বলছেন।"
"তিনি জোর দিয়ে বলতেন যে আপনাকে একজন ক্রিকেটারের মতো দেখতে হবে। এগুলি এমন জিনিস যা আমাদের ডিসিপ্লিন শিখিয়েছে। আপনি শূন্য করতে পারেন অথবা ১০০ স্কোর করতে পারেন, শুধু একজন ক্রিকেটারের মতো খেলতে হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যে প্রত্যেককে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হবে, আমরা ভাসুর কাছ থেকে শিখেছি যে এই খেলাটি ভালবাসার জন্য একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হওয়ার প্রয়োজন নেই।"
"আমার শুধু একটা কথা বলা এখন কষ্টের যে আমি আর তাকে দেখতে পারব না। অন্যদিন, আমি যতীনকে একটি মেসেজ করেছিলাম, 'আমি মাটুঙ্গার কাছে আসছি, আমি কি তাকে দেখতে পারি? যদি সে সুস্থ থাকে।' যতীন সে কথার উত্তর দেয়নি, পরে আমরা জানতে পারলাম কেন। সে এখন আরও ভালো জায়গায় আছে। আমরা সবাই তার সঙ্গ এবং তার ক্রিকেট উপভোগ করেছি। তিনি আমাদের প্রজন্মকে যা শিখিয়েছিলেন তা আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকবে। যখন তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, আমি তাকে শুধু বলেছিলাম: 'বিদায় ক্যাপ্টেন, আপনি আরও ভাল জায়গায় থাকবেন।' আমি নিশ্চিত যে তিনি সেখানে আরও ভাল সময় কাটাবেন যেমন আমরা সবাই এখানে করেছি।"