সুশান্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ধোনিকে চিনেছিলেন কিরণ মোরে। কিন্তু কীভাবে? জানতে পড়ুন...

সব্যসাচী বাগচী : বিহারের পাটনা শহরে জন্ম হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই 'দেহাতি হিন্দি' একেবারে রপ্ত ছিল। ছোট বোন মিঠু সিং একটা সময় রাজ্য দলের হয়ে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন। বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সুশান্তও ক্রিকেট খেলতেন। ফলে বাড়িতে ছিল ক্রিকেটের পরিবেশ। কিন্তু সেটা পাড়ার মাঠে টেনিস বলে খেলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে অদৃষ্টের ইচ্ছায় সেই ছেলেটাই হয়ে একদিন গেলেন রুপোলি পর্দার মহেন্দ্র সিং ধোনি। সুশান্ত সিং রাজপুত 'এম এস ধোনি দ্যা আনটোল্ড' সিনেমায় তো শুধু অভিনয় করেননি, একইসঙ্গে সবার মন জয় করে নিয়েছেন। তাই তিনিই যে 'ক্যাপ্টেন কুল'এর অগুনিত ভক্তদের কাছে 'মাহি 2'। ভারতের প্রাক্তন উইকেটকিপার কিরণ মোরে যে, মৃত্যুর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও, প্রিয় সুশান্ত'কে 'মাহি 2' নামেই মনে রাখতে চান।
এহেন অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে ছিল ঠিক পাঁচ বছর আগে। এক রবিবারের সকালে মুম্বইয়ের বান্দ্রার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। পুলিশের দাবি, গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁকে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান ছিল পুলিশের। তবে ঠিক কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা উঠে এসেছে। শোনা গিয়েছে, বেশ কিছু ছবি মুখ থুবড়ে পড়ায় অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তবে শেষ এই ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।
২০১৬ সালে রিলিজ করেছিল 'এম ধোনি দ্যা আনটোল্ড স্টোরি'। সেই সিনেমায় 'ক্যাপ্টেন কুল' ব্যাটিং স্টাইল নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য সুশান্তকে সাহায্য করেছিলেন কিরণ মোরে। এমন তরতাজা একটা প্রাণ চলে যাওয়া, এখনও মেনে নিতে পারছেন না কিরণ। ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে এক্সট্রাটাইম'কে বললেন, "ওর সঙ্গে প্রায় ৯ মাস কাজ করেছিলাম। অনুশীলনের সময় আমাদের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ধোনির ব্যাটিং স্টাইল এবং ওর ম্যানারিজম নকল করার জন্য ওর দিন-রাত পরিশ্রম করত। এবং সেটা সিনেমার প্রতি ফ্রেমে প্রতিফলিত হয়েছিল। এমনটা মনে হত সুশান্ত নয়। যেন মহেন্দ্র সিং ধোনি নিজেই অভিনয় করছেন। আসলে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সুশান্ত একজন শিক্ষিত ছেলে। এবং নিজের চরিত্রগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করত। তাই এত সুন্দরভাবে ধোনির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিল। যা সবার আজীবন মনে থাকবে। তবে ওর মত একটা ছেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল! এটা ভেবেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।"
এরপরেই যোগ করলেন, "আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না ট্রেনিংয়ের সময় সুশান্তের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছি! কারণ, ধোনির ব্যাকরণ বহির্ভূত শটগুলো রপ্ত করা মোটেও সোজা ছিল না। পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা ও সিনেমায় একজন জীবিত লেজেন্ডের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক আছে। তবুও সুশান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছে। এত পরিশ্রম তো অনেক ক্রিকেটারকেও করতে দেখিনি। সুশান্ত সেটা অনায়াসে করেছে। তাই ও চিরনিদ্রায় চলে গেলেও, আমাদের কাছে অমর থাকবে।"
শুধু তো কিরণ মোরে নন। এই সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে খড়গপুরের বর্তমান বিধায়ক প্রদীপ সরকারের সঙ্গেও সদ্য প্রয়াত সুশান্তের দারুণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেটা অবশ্য মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্যই। কারণ, ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আগে ধোনি যে এই খড়গপুর রেল স্টেশনে টিকিট পরীক্ষকের চাকরী করতেন। এমনকি স্থানীয় দুর্গা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে টেনিস বলে খেপের একাধিক প্রতিযোগিতাও খেলতেন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। সিনেমায় ধোনির সেই 'সোনার সময়' দেখানো হয়েছিল। শ্যুটিং স্পটের সেই দিনগুলোর কথা জিজ্ঞেস করতেই বিধায়কের মন খারাপ হয়ে গেল। বলছিলেন, "এত বড় সেলিব্রেটি হলেও ওর মধ্যে একফোঁটাও গরিমা ছিল না। বেশ কয়েক সপ্তাহ খড়গপুরে ছিল। শ্যুটিং শেষ হলেই আমরা একসঙ্গে চা-সিঙ্গারা খেতাম। আড্ডা মারতাম। ইয়ার্কি-ঠাট্টা লেগেই থাকতো। আজ সবকিছু অতীত। সুশান্ত যে কেন এমন করল, বুঝতে পারছি না।"
তাঁর শেষ অভিনীত সিনেমা 'ছিছোড়ে'। গল্পের মূল বিষয় হল, "আত্মহত্যা নয়। কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকাই হল আসল যোদ্ধার পরিচয়।" কিন্তু সুশান্ত সেটা পারলেন কোথায়! রুপোলি পর্দায় ধোনির স্টোরি 'আনটোল্ড' থাকেনি। তবে আপনার গল্পটা কিন্তু অজানা রয়েই গেল। অনেকটা সেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের মত।
'শেষ হয়েও হইল না শেষ.....'
তাই তো আপনার স্কোরবোর্ডে লেখা থাকবে.....
রিল লাইফের এম এস ধোনি....
কট : ডিপ্রেশন......বোলড : সুইসাইড!