ইন্টারভিউ : ২০২১'এর বিশ্বকাপে ভাল পারফরম্যান্স করাই মূল টার্গেট : ঝুলন গোস্বামী

দেবাশিস সেন : তাঁর বর্তমান বয়স ৩৭। সঙ্গে রয়েছে একাধিক চোট-আঘাত। তবুও ২০২১'এর মহিলা বিশ্বকাপ জেতাই এখন তাঁর মূল টার্গেট। মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি। তিনি এক ও অদ্বিতীয় ঝুলন গোস্বামী। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে অনেক শৃঙ্গ চড়লেও, বিশ্বকাপ জয় এখনও অধরা। আর তাই কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নেমে চ্যাম্পিয়ন হয়েই মাঠ ছাড়তে চান। করোনা ভাইরাসের জন্য তিনিও সবার মত ঘরবন্দি। এরইমধ্যে এক্সট্রাটাইম'কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস'।
প্রশ্ন) নিউজিল্যান্ডে আগামী বিশ্বকাপ। প্রস্তুতি কেমন চলছে?
ঝুলন) ২০২১'এর নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে ভাল পারফরম্যান্স করাই এখন আমার মূল টার্গেট। শুনছি আইসিসি এখনও এই প্রতিযোগিতা বাতিল করেনি। তাই নিজেকে ফিট রাখার জন্য এই লকডাউনের মধ্যেও নিয়মিত ট্রেনিং করছি। মেডিটেশন করছি।
প্রশ্ন) ২০১৭ সালে লর্ডসে প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হল না। ওই হারের স্মৃতি কি এখনও দগদগে?
ঝুলন) সেই ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। তাই এখনও ফাইনালের কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু পেশাদার ক্রিকেটে অতীত নিয়ে বেশি ভাবনাচিন্তা করে কোনও লাভ নেই। আমার কেরিয়ারে দুটো ফাইনাল হেরেছি। যদিও সেটা অতীত। তাই আমরা এখন ২০২১ নিয়ে প্ল্যানিং করছি। সেখানে ভাল পারফরম্যান্স করাই মূল উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন) অনেকের মতে সেই বিশ্বকাপের পরেই আপনি ক্রিকেটকে পূর্ণাঙ্গ বিদায় জানাবেন? আপনার কোনও প্ল্যানিং?
ঝুলন) দেখুন, সত্যি বলতে আমি নিজের ভবিষ্যত নিয়ে এই মুহূর্তে একদম ভাবছি না। বরং নিজের কাজের প্রতি ফোকাস করছি। ভারতে মহিলা ক্রিকেটের নিরিখে ২০২১'এর বিশ্বকাপ একটা বিশাল বড় মঞ্চ। তাই আমি অবসর কিংবা ভবিষ্যত নিয়ে নয়, বরং ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি।
প্রশ্ন) গত ৭ মাস ক্রিকেট হচ্ছে না। এরমধ্যে আপনি আবার শুধু একদিনের ম্যাচ খেলেন। সেক্ষেত্রে ফিটনেস বজায় রেখে খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
ঝুলন) চ্যালেঞ্জ তো ক্লাব ক্রিকেটও আছে। তাই একজন ক্রীড়াবিদকে সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয়। আমি দীর্ঘদিন মাঠের ধারেকাছে যাইনি। তাই লকডাউনের পর মাঠে নামার আগে প্রস্তুতি খুব জরুরী। আশাকরি মাঠে নামলে খুব দ্রুত সবকিছু মানিয়ে নিতে পারব।
প্রশ্ন) করোনা পরবর্তী ক্রিকেটের জন্য নতুন নিয়ম করেছে আইসিসি। বলের পালিশ বজায় রাখার জন্য থুতুর ব্যবহার করা যাবে না? এটাও তো বেশ চ্যালেঞ্জিং?
ঝুলন) বল পালিশ করার জন্য থুতু ব্যবহার করতে হবে এমন কোনও নিয়ম কিন্তু রুল বুকে নেই। তবে ছোটবেলা থেকেই এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বল পালিশ করার জন্য কখনও থুতু আবার কখনও ঘামের ব্যবহার করেছি। তাই নতুন নিয়মের মধ্যেও আমাদের খেলতে হবে। এই নতুন চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে হবে। সাদা বলের ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারণ, ইদানিং দুটো বলে খেলা হয়। যদিও রিভার্স সুইং করানো অবশ্যই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। সেটা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আগামী সময় ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ আছে। সেই দুটো সিরিজ খেলার পরেই ব্যাপারটা আরও ভাল বুঝতে পারব।
প্রশ্ন) আপনার পরবর্তী পেস বোলাররা কি আদৌ তৈরি? কতটা তৈরি?
ঝুলন) দেখুন আমাদের দেশে মহিলা ক্রিকেটে একাধিক জোরে বোলার উঠে আসছে। তাদের দেখে আমি মুগ্ধ। তবে ওদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক পরিকাঠামো দরকার। ঠিকঠাক ট্রেনিং প্রয়োজন। এবং সবচেয়ে বড় কথা হল ওদের মধ্যে বড় ম্যাচে পারফরম্যান্স করার টেম্পারমেন্ট থাকতে হবে। আমাদের বাংলা দলে একাধিক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। পুরো দেশে সংখ্যাটা প্রায় ১৫-২০। এদের একত্র করে ট্রেনিং করানো উচিত। তবেই তো শিখা পান্ডে, পূজা ভাসত্রাকার, মানশী যোশী, শুভলক্ষ্মী শর্মা, সুকন্যা পরিদা'র মত জোরে বোলার উঠে আসবে। তবে আমার মনে হয় ওদের আরও সুযোগ পাওয়া উচিত।
প্রশ্ন) চাকদহ থেকে মহিলাদের একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। জার্নিটা কেমন?
ঝুলন) সত্যি বলতে জীবনকে এভাবে দেখব কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি শুধু দেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলাম। দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে বিপক্ষের উইকেট তুলতে চেয়েছিলাম। চাকদহ থেকে কলকাতায় এসে দৈনিক ট্রেনিং করার জন্য ঘরে অনেক অশান্তি হয়েছে। সেগুলো এখন খুব মনে পড়ে। একইসঙ্গে একটা জিনিস ভাবলে খুব ভাল লাগে। আজ আমার মত মেয়ে লড়াই করে এতটা রাস্তা হেঁটেছে বলেই, বর্তমান যুগে অনেক অভিবাবকরা তাঁদের মেয়েদের ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চান। তাঁদের মেয়েরা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করুক, সেটা দেখতে চান। এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই।