হরভজন সিং - ভারতীয় ক্রিকেটের এক দূর্নিবার

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : শুক্রবার সকল ধরণের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন ভারতের অন্যতম সেরা অফ স্পিনার হরভজন সিং। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় দলে ব্রাত্য হরভজন, আইপিএলেও সম্প্রতি খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না - বুঝেই গিয়েছিলেন এবার ইতি জানাতে হবে এই খেলাটিকে। আর শুক্রবার তারই হল সরকারি ঘোষণা।
তবে হরভজন সিং ভারতীয় ক্রিকেটে ঠিক কতটা বড় নাম, তার জন্য কোনও আলাদা তথ্য দিতে হবে না। ২০০১ সালে অশ্বমেধের ঘোড়া অস্ট্রেলিয়াকে রুখে দেওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন হরভজনই। একজন স্পিনার হয়েও যে আগ্রাসন দেখানো যায়, তা তো দেখিয়েছিলেন ভাজ্জিই। অফ স্পিন, দুসরার জাদুতে মাতিয়ে রেখেছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে, আর পরাস্ত করেছিলেন একের পর এক প্রতিপক্ষকে।
১৯৮০ সালের ৩ জুলাই পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন হরভজন। বাবা সরদেব সিং প্লাহা বলবিয়ারিংয়ের ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই ব্যবসায় ঢুকতে চেয়েছিলেন ছোট্ট ভাজ্জি, কিন্তু বাবা তাকে ক্রিকেটে মন দিতে বলেন। শুরুতে ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রশিক্ষণ নিলেও পরে তার স্পিনের ক্ষমতা বুঝে নেন দাভিন্দার অরোরা। অরোরার কথায়, সকালে তিন ঘন্টা অনুশীলনের পর বিকেলে সূর্য ডোবা অবধিই নিজের স্পিনের উপর কাজ চালিয়ে যেতেন ভাজ্জি।
২০০০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবারের বোঝা এসে পড়ে হরভজনের উপর। নিজে না বিয়ে করে তিন বোনের বিয়ে দেন হরভজন। তখন সদ্য ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন ভাজ্জি। এবং নিজের যোগ্যতাতেই ভারতীয় দলে সুযোগ পান। ১৯৯৫-৯৬ মরশুমে পাঞ্জাবের অনুর্ধ্ব ১৬ দলে ব্যাট ও বল হাতে চমকপ্রদ পারফর্মেন্স করেন হরভজন, যার জেরে উত্তরাঞ্চলের অনুর্ধ্ব ১৬ দলে সুযোগ পান তিনি।
এরপর মাত্র ১৫ বছর ৯ মাস বয়সে তিনি ভারতীয় অনুর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে পাঞ্জাবের হয়ে রঞ্জিতে অভিষেক করেন ভাজ্জি। এরপর ৯৭-৯৮ মরশুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করার সৌজন্যে দলীপ ট্রফিতে উত্তরাঞ্চল দলে জায়গা পান ভাজ্জি। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের হয়ে খেলেন তিনি। আর এভাবেই জাতীয় দলের দরজা তার জন্য খুলে যায়।
১৯৯৯-০০ মরশুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথমবার ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন হরভজন। যদিও সেখানে খেলতে পারেননি তিনি। ২০০০ সালের মাঝের দিকে নিজের বিশৃঙ্খলতার জন্য কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যান ভাজ্জি। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন তিনি, যেখানে প্রশিক্ষণ করাচ্ছিলেন দুই কিংবদন্তী এরাবল্লী প্রসন্ন ও শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন।
তবে সেই খারাপ সময় কাটিয়ে ফের ভারতীয় দলে সুযোগ পান হরভজন। তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বুঝেছিলেন, এই ছেলের মধ্যে দম আছে ম্যাচ জেতানোর। আর অধিনায়কের মর্যাদা রেখেছিলেন ভাজ্জি। ২০০১ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজের কথা তো সবাই জানে, দেশে ও বিদেশে হরভজনের অনবদ্য পারফর্মেন্সে ভারত অসংখ্য ম্যাচ জিতে এসেছে।
সব মিলিয়ে, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে যদি কোনও বই লিখতে হয়, সেখানে একটি আলাদা অধ্যায় অবশ্যই আসবে হরভজন সিংয়ের নামে। তিনি টার্বুনেটর, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের দূর্নিবার।