কেন এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল আদালত? জানতে পড়ুন...

এক্সট্রাটাইম নিউজ ডেস্ক : ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ পাকিস্তানের প্রাক্তন কোচ বব উলমারের অপঘাতে মারা যান। জামাইকায় অবস্থিত পাকিস্তানের টিম হোটেল থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অবশ্য এর অনেক আগে ক্রিকেট বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আরও একটা মর্মান্তিক ঘটনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন টেস্ট ক্রিকেটারকে স্ত্রীর হত্যার জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তিনি লেসলি হিল্টন। আজকের দিনে ১৯৫৫ সালের ১৭ মে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন পেসার লেসলি হিল্টনকে তাঁর স্ত্রী লুরলিন রোজকে গুলি করার জন্য, ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। লেসলি হিল্টন হলেন এখনও পর্যন্ত একমাত্র টেস্ট ক্রিকেটার যিনি খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন।
জামাইকার এক হতদরিদ্র পরিবার জন্মেছিলেন লেসলি। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা-মা উভয়কে হারিয়েছিলেন। সেই যন্ত্রণা ভুলে একমাত্র বোনকে নিয়ে ধীরেধীরে বেড়ে উঠছিলেন লেসলি। তবে লেসলির বয়স যখন মাত্র ১৩, তখন সাধের বোনকেও হারান। অর্থের অভাব ছিল। তাই অকালে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এবং পেট ভরানোর জন্য একটি দর্জি দোকানে সহকারী হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। যদিও সেই কাজ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর স্থানীয় একটি বন্দরে কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
তবে এগুলোর মাঝেই চলছিল তাঁর ক্রিকেটপাঠ। পেস বোলিংয়ের সৌজন্যে ধীরেধীরে তাঁর পরিচিতি গড়ে উঠতে শুরু করে। এবং পেস বোলার হিসাবে খুব শীঘ্রই তিনি জামাইকা দলে সুযোগও পেয়েছিলেন। ১৯২৬-১৯৩৯ পর্যন্ত জামাইকার হয়ে ৪০'টি প্রথমশ্রেণীর ম্যাচ খেলেন লেসলি। ঝুলিতে ছিল ১২০ উইকেট। লোয়ার অর্ডারে বেশ ব্যাট করতেন। সেই ফরম্যাটে ৫'টি অর্ধ-শতরানও ছিল। যার সুবাদে জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়ে যান। সব বেশ ভালই এগোচ্ছিল। ১৯৩৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে তিনি নির্বাচিত হলেন। ইংল্যান্ডের দল ওয়ালি হ্যামন্ড ও আর.ই.এস. ওয়াইটের মত কিংবদন্তি ছিলেন। জর্জ হেডলির জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে সেই সিরিজ জিতেছিল। বিধ্বংসী বোলিং করে সেই সিরিজে ১৩'টি উইকেট নিয়েছিলেন হিল্টন। ফলে ১৯৩৯'এর পরবর্তী ইংল্যান্ড সফরের জন্যও তাঁকে দলে নেওয়া হয়। কিন্তু পারফরম্যান্স করতে ব্যর্থ হন। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। মাত্র চার বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ৬'টি টেস্ট খেলেন। নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট। এরমধ্যে ১৩'টি উইকেট এসেছিল ১৯৩৫'এর সিরিজ থেকে।
ক্রিকেট খেলার সময় জামাইকার এক পুলিশ অফিসার মেয়ে লুরলিন রোজের প্রেমে পড়েন। লুরলিনের পরিবারের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৪২ সালে তারা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু হিল্টনের বিবাহিত জীবন সুখের হল না। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে কেরিয়ার গড়তে গিয়ে লুরলিন প্রায়শই নিউইয়র্ক যেতেন। এবং সেখানে গিয়েই তিনি রয় ফ্রান্সিস নামক এক যুবকের ঘনিষ্ট হন।
১৯৫৪ সালের এক সকালে হিলটন নিউইয়র্ক থেকে স্বাক্ষরযুক্ত একটি টেলিগ্রাম পেয়েছিলেন। সেই টেলিগ্রাম থেকেই লরিন এবং ফ্রান্সিসের মধ্যে সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। যদিও হিল্টন এর আগেই দুজনের প্রেমপত্র হাতে পেয়েছিলেন। সেই রাতেই হিল্টন এবং লরিন মধ্যে তীব্র বাকবিতন্ডা হয়। এবং তারপর মেজাজ হারিয়ে স্ত্রী লরিন'কে সাতবার গুলি করেছিলেন হিল্টন। ১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর হওয়া এই মামলায় আদালত লেসলি হিল্টনের মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা দেন।