"আপনি কি সত্যি 'স্পট ফিক্সিং' করেছিলেন?" মুখ খুললেন শ্রীসন্থ। বিস্তারিত পড়ুন...

সব্যসাচী বাগচী : ২০১৩ সালে আইপিএল চলাকালীন কুখ্যাত 'স্পট ফিক্সিং' কাণ্ডে জর্জরিত। এবং অবধারিতভাবে বিসিসিআইয়ের তরফ থেকে নির্বাসিত। সেই নির্বাসন ২০১৯'এ উঠে গিয়েছে। এবং এহেন শান্তাকুমারণ শ্রীসন্থ আবার কামব্যাক করছেন। তাঁর কামব্যাকের মঞ্চ কেরল রঞ্জি দল। দলের বোলিং কোচ ও 'গড ফাদার' টিনু ইহনন তাঁকে দলে নিতে প্রস্তুত। তবে শর্ত একটাই। ফিটনেস টেস্ট পাশ করতেই হবে। 'কোচিন এক্সপ্রেস'ও লাল বল হাতে নিয়ে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছেন। সবকিছু ভুলে তিনি আবার বাইশ গজের যুদ্ধে সেই দাপট দেখাতে চান। ফের নতুনভাবে সবকিছু শুরু করতে মরিয়া।
সেই ২০১৩ সাল থেকে আমার মনে একটা প্রশ্ন দানা বেঁধে ছিল। "আচ্ছা আপনি কি সত্যি 'স্পট ফিক্সিং' করেছিলেন?" কোনও রাখঢাক না করে ৩৭ বছরের এই ডানহাতি পেসার এক্সট্রাটাইম'এর লাইভ অনুষ্ঠানে বললেন, "না 'স্পট ফিক্সিং' করিনি। তবে আমি মানুষকে বিশ্বাস করতাম। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতাম। খুব পার্টি করতাম। যেমনটা সবাই করে। এতে আমি কোনও দোষ খুঁজে পাই না। তবে কিছু মানুষ আমাকে দেখে ঈর্ষা করতেন। তারা হয়তো আমাকে একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। যদিও ব্যাপারটা নিয়ে যে এত জলঘোলা হবে, তাদের হাতের বাইরে চলে যাবে এটা হয়তো তারাও আন্দাজ করতে পারেনি। কিন্তু এতে ক্ষতি আমার হয়েছে। আমার ক্রিকেট কেরিয়ার, আমার ও পরিবারের সামাজিক সম্মান নষ্ট হয়েছে। একটা সময় এমন হয়েছে যে আমার কাছে সংসার চালানোর মত অর্থ পর্যন্ত ছিল না। 'বিগ বস', 'খাতরো কে খিলাড়ি', কয়েকটা হিন্দি সিনেমায় অভিনয় না করলে সংসার খরচ থেকে সন্তানদের স্কুল, তাদের লেখাপড়ার জন্য অর্থের যোগান পর্যন্ত করতে পারতাম না। যদিও যাদের জন্য আজ আমার এই পরিণতি তাদের প্রতি কোনও রাগ নেই। বরং আমি জানি ওরা গ্লানিবোধ করে। তাই তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।"
গত সাত বছরে ক্রিকেট অনেক বদলে গিয়েছে। তিনি কি আগের মত ব্যাটসম্যানদের আউট-সুইং ও ইয়র্কারে বিদ্ধ করতে পারবেন? আত্মবিশ্বাসী শ্রী বলে উঠলেন, "দাদা দেখে নেবেন আমি নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে সবাইকে চমকে দেব। বিরাট কোহলি সবসময় একটা কথা বলে, 'বল্লা বোলতা হ্যায়'। আমার হাতেও বল তেমনভাবেই কথা বলবে। আমার সাত বছর নষ্ট হয়েছে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না। সবাই বলতেন যে আমি ট্যালেন্টেড। আমি সবাইকে ফের দেখিয়ে দেব যে আমার মধ্যে এখনও অনেক প্রতিভা রয়েছে। তাই কেরল'কে রঞ্জি ট্রফি ও ইরানি ট্রফি জেতানোই আমার একমাত্র টার্গেট। এবং জোর গলায় বলছি আগামী মরসুমে আমি নিজের কেরিয়ারের পারফরম্যান্স করার পাশাপাশি দলের জুনিয়র ক্রিকেটারদের কাছে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। এরপর যদি বিরাট কোহলি ও টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে তাঁরা আমাকে দলে নেবে। কারণ, আমি এখনও দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখি।"
বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শচীন তেন্ডুলকর, ভিভিএস লক্ষ্মণ, ইরফান পাঠান, সুরেশ রায়না সবাই ওর পাশে আছেন। তবে টিম ইন্ডিয়ার একজন বর্তমান ক্রিকেটার কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে কটাক্ষ করেছিলেন। সেই অপমান এখনও ভোলেননি শ্রীসন্থ। শেষে যোগ করলেন, "২০১৯ সালে নির্বাসন ওঠার পর আমার সমর্থকরা ট্যুইটারে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করে। ঠিক সেই ট্যুইটে ভারতের একজন বর্তমান ক্রিকেটার কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, 'কেস থেকে মুক্ত হওয়ার পরেই টেস্টে ১০০ উইকেট নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে।' ওই ক্রিকেটারের এমন জঘন্য ট্যুইটের পরেই আমার সমর্থকরা তাঁকে একহাত নিয়েছিল। এবং সে পরে ট্যুইট মুছে ফেলতে বাধ্য হয়। যদিও সেই ট্যুইট এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছি। এবং কোনও সময় তাঁর সামনাসামনি হলে এই ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন করব। কারণ, শ্রী অন্যায় করেনি। তবুও ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা আমার চরম শত্রুকেও যেন আমার মত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়।"
বেশ বোঝাই যাচ্ছে যে তাঁর নামের মধ্যে 'সন্থ' শব্দ থাকলেও, বুকের ভেতর একটা আগুনের লাভাস্রোত এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে। আগ্নেয়গিরি শুধু বেরোনোর অপেক্ষা।