নির্মাণ শ্রমিক, নিরাপত্তা কর্মী থেকে অজি বধের নায়ক- শামার জোসেফের এক অবিশ্বাস্য জীবনযাত্রা

Struggle of shamar joseph for his cricket career
এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্কঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে অনবদ্য বোলিংয়ের জন্য তিনি এখন শিরোনামে। তিনি ২৪ বছর বয়সী ক্যারিবিয়ান পেসার সামার জোসেফ। তবে তার এই সাফল্য অনেক ত্যাগের ফসল। অনেক সংগ্রামের পর শিখরে পৌঁছাচ্ছেন তিনি। চলুন, দেখে নেওয়া যাক এক জীবনযোদ্ধা ক্রিকেটারের গল্প।
১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ। তার বাসস্থান ছিল গুয়ানার বারাকারি গ্রামে।পূর্ব বারবিস-কোরেন্টাইন নামক এক ছোট সম্প্রদায়ের পরিবার থেকে আসেন জোসেফ। এই গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র চারশ। ২০১৮ পর্যন্ত কোনরকম ইন্টারনেট পরিষেবা পাননি জোসেফরা। যোগাযোগ করার জন্য শুধুমাত্র ল্যান্ডলাইন পরিষেবা পেতেন তারা। তবে ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন জোসেফ। সঠিক ক্রিকেট বল না পাবার দরুন ফল,বোতলকেই বল হিসেবে অনুশীলন করতেন তিনি।
আরও পড়ুন- শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল আইসিসি
চাকরির সন্ধানে নিউ আমস্টারডাম বন্দরে চলে আসেন জোসেফ। প্রথমে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে এবং পরে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে বারো ঘন্টা কাজ করতেন তিনি। তবে কাজ এবং ঘুমানোর দরুন অনুশীলনের জন্য সময় বের করা তার পক্ষে অসম্ভবপর হয়ে উঠছিল। পরে তার বাগদত্তা ট্রিশের সমর্থনে ক্রিকেট জীবন গড়ে তোলার স্বপ্নপূরণে চাকরী থেকে ইস্তফা দেন জোসেফ।
আরও পড়ুন- ইনিয়েস্তার ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাওয়া মেসির সতীর্থ আসছেন ইস্টবেঙ্গলে
তার এই অনবদ্য জীবন যাত্রার কথা পড়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবি ডিভিলিয়ার্স। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি একটি পোস্ট করে বলেছেন, “ কখনো পারলে ওর জীবনযাত্রার কথা উইকিপিডিয়াতে পড়বেন।আমার চোখে জল এসে গেছিল। সত্যিই ওর জীবনযাত্রা অনুপ্রেরণা জায়গায়।”
গত বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় জোসেফের। কিন্তু গতকাল তার কাছে ছিল যেন এক স্বপ্নপূরণ। ১১ নম্বরে ব্যাটে নেমে ৩৬ রানও করেছেন তিনি। তবে বোলিংয়ে নিজের প্রতিভা বুঝিয়ে দিয়েছেন জোসেফ। অস্ট্রেলিয়ার জিততে যেখানে ২১৬ রান দরকার ছিল সেইখান থেকে দুই উইকেটে ১১৩ রান থাকাকালীন ট্রাভিস হেড এবং ক্যামেরুন গ্রিনের উইকেট তুলে নেন এই তরুণতুর্কি। ৬৮ রান দিয়ে ৭ উইকেট তোলেন তিনি সেই ইনিংসে। আটরানে জয় হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
এই অবিস্মরণীয় বোলিংয়ের জন্য ভারতীয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকার, ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি বোলার কার্টলি অ্যামব্রোসের মত খেলোয়াড়দের থেকে প্রশংসা পেয়েছেন জোসেফ।১৯৯৩ সালে আমব্রোসও চতুর্থ ইনিংসে চারটির বেশি উইকেট তোলেন। তারপরে জোসেফের হাত ধরেই সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়।
আগামী জীবনে যেসব খেলোয়াড়রা খেলোয়াড় জীবনে প্রবেশ করতে চান, তাদের কাছে জোসেফের গল্প সত্যিই যেন অনুপ্রেরণা জোগাবে। লড়াকু মনোভাব থাকলে সাফল্য যে পিছু ছাড়বে না তা যেন জোসেফের গল্প আমাদের সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে গেল।