এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : জমজমাটি খেলা চলছে স্টুটগার্টে। এমনই সময়ে খেলার ১৭ মিনিটে থ্রো পেল ডেনমার্ক। আলেকজান্ডার বাহের থ্রো থেকে বল পেয়ে জোনাস উইন্ড ফ্লিক করে বলটি বক্সে পাঠান ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের উদ্দেশ্যে, যিনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জান ওবলাকের পাশ দিয়ে গোলে বল ঢোকান। এগিয়ে যায় ডেনমার্ক, উচ্ছ্বাসে মাতেন এরিকসেন সহ গোটা ডেনমার্ক।

রুপকথার গল্পের শুরুটা এভাবেই করা হল। কেন? কেন শুধু একটি গোল দিয়ে রুপকথার কাহিনী লেখা হবে? কেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের এই গোলটাই দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রত্যয় আর বিশ্বাস থাকলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আবারও দেশের হয়ে ভালো খেলা যায়।

আরও পড়ুন - ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মাঝে শুধুই রয়েছে জালে ঘেরা এক দেওয়াল! কারণটা কী?

একই কাজ করে চলেছেন আরও একজন তারকা। যদিও তিনি ফুটবলের সাথে জড়িত নন, যুক্ত ক্রিকেটের সাথে। তিনি হলেন ঋষভ পন্থ। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে স্রেফ প্রত্যয় ও বিশ্বাসের জোরে আজ টি২০ বিশ্বকাপে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন ঋষভ।

দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতের, ভিন্ন মহাদেশের দুই ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। কিন্তু নতুন জীবন পেলে কীভাবে সেটিকে কাজে লাগানো উচিত, শেখা উচিত এই দুই তারকার কাছ থেকে। 

আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে, বলা ভালো, ১১০০ দিন আগে, স্টুটগার্ট থেকে প্রায় ৯০০ কিমি দূরে কোপেহাগেনের পার্কেন স্টেডিয়ামে ইউরো ২০২০-এর অভিযান শুরু করেছিল ডেনমার্ক। কিন্তু সেই ম্যাচটি ছিল ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের জন্য অভিশপ্ত। খেলতে খেলতে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে পড়লেন মাঠে, তারপর ১৩ মিনিট ধরে মৃত্যুর সাথে দড়ি টানাটানি চলেছিল এরিকসেনের। শেষ অবধি বেঁচে যান এরিকসেন। 

আরও পড়ুন - অনুশীলনে নেই বিরতি, গরমেও চনমনে অনুশীলন মোহনবাগানের

কিন্তু ফুটবল খেলার বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল বটে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে সেরে ওঠা এরিকসেনকে শারীরিক কারণে রিলিজ করে দিয়েছিল তার ততকালীন ক্লাব ইন্টার মিলান। এরপর দীর্ঘ লড়াই করে অবশেষে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ব্রেন্টফোর্ড সুযোগ দিল নতুনভাবে ফিরে আসার। সেখানে খেলে বুঝিয়ে দেন, তিনি রয়েছেন খেলার জন্যই। আর তারপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সই করে জাত চেনাতে শুরু করলেন এরিকসেন।

প্রায় একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ঋষভ পন্থের ক্ষেত্রেও। যদিও মাঠে নয়, মাঠের বাইরে জীবন সংকটে পড়েছিলেন পন্থ। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিল্লি-দেহরাদুন হাইওয়েতে রোড ডিভাইডারে সজোরে ধাক্কা মারে ঋষভ পন্থের গাড়ি। দুর্ঘটনার প্রভাবে গাড়িটিতে আগুন লেগে যায়, কিন্তু ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান পন্থ। হাঁটুতে একাধিক অস্ত্রোপচারের পর মনে হয়েছিল, আর কখনও মূলধারার ক্রিকেট এরপর দীর্ঘ রিহ্যাব ও অধ্যাবসায়ের পর সবাইকে ভুল প্রমাণ করে আইপিএল ২০২৪-এ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে নেতৃত্ব দেন পন্থ। আর সেখানে দুরন্ত ব্যাটিং ও উইকেটকিপিং করে সুযোগ পেলেন টি২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে। 

এভাবেই উদাহরণ তৈরি করলেন ঋষভ পন্থ ও ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। জীবন দ্বিতীয়বার সুযোগ দিলে, সেই সুযোগকে সব সময়ে কাজে লাগানো উচিত।