আনন্দের মাঝেও হারানোর ভয় মোহনবাগানের!

গোপাল রায়: আই লিগ কড়া নাড়ছে মোহনবাগানের দরজায়। বিশাল কোনও অঘটন না ঘটলে দ্বিতীয়বারের জন্য ভারত সেরার ট্রফি ঢুকছেই সবুজ-মেরুন তাঁবুতে। যা আটকানোর সাধ্যি নেই কারও। এমনকি গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া করোনা ভাইরাসেরও।
তরতর করে এগিয়ে চলেছে সবুজ-মেরুনের পাল তোলা নৌকা। মাঝে মাঝে চেন্নাই সিটি এফসির মতো ছোট ছোট ঢেউ আসবে। কিন্তু থেমে গেলে চলবে না। লক্ষ্য স্থির করে যেভাবে টানা ১৩ ম্যাচে অপরাজিত থেকে মরোক্কান কোচ করিম বেঞ্চারিফার রেকর্ড ভেঙে মোহনবাগান এগিয়ে গেছে, সেই ভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। অতিক্রম করতে আই লিগের আর বাকি পাঁচ ম্যাচ।
সবাই জানে আর পাঁচ ম্যাচে মোহনবাগান ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু তার আগেই আই লিগ পকেটে পুরে ফেলতে হবে। কাজ ফেলে রাখলে চলবে না। তার জন্য আইজল ম্যাচ জেতা জরুরি। কারও দিকে না তাকিয়ে। সে ইস্টবেঙ্গল বনাম রিয়াল কাশ্মীর ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন। এতটা পথ কিন্তু মোহনবাগান নিজের দক্ষতায় এসেছে। কারও দয়ায় নয়।
মোহনবাগান সমর্থকরাও বিজয়োল্লাসের জন্য তৈরি হচ্ছেন। প্রতিদিন তারা হোম ম্যাচে কল্যাণী স্টেডিয়ামে ভিড় করছেন। দেদার আনন্দ করছেন। আর একরাশ অক্সিজেন নিয়ে বাড়ি ফিরে পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সেটাই স্বাভাবিক। পয়েন্ট টেবিলে তাদের ধারে কাছে নেই আই লিগের বাকি দশ দল। পড়শি ক্লাব ইস্টবেঙ্গলও ১৮ বছর আই লিগ না পেয়ে, এবছরও লিগ টেবিলে ভদ্রস্থ জায়গায় শেষ করার জন্য লড়াই চালাচ্ছে। সেখানে মোহনবাগান এবারের লিগের ফার্স্ট হয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য আই লিগ প্রায় পকেটে পুড়ে ফেলেছে। এর থেকে আনন্দ আর কি হতে পারে!
সত্যি এতো আনন্দের মধ্যেও একটাই শুধু ভয়। হারিয়ে ফেলার ভয়। পরের বছর কিবু স্যার থাকবেন তো? না, আই লিগ দিয়ে দেশে কিংবা অন্য কোথাও চলে যাবেন। তাঁকে যে করেই হোক রাখার জন্য আর্তি করে যাচ্ছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। আই লিগের সেই ৭-৮ ম্যাচ বাকি থাকতেই। কখনও মিডিয়ার কাছে বিশেষ অনুরোধ করছেন। কখনও কর্তাদের কাছে। দয়া করে কিবু স্যারকে রেখে দিন। তিনি চলে গেলে তো আর এই ব্র্যান্ড অফ ফুটবল দেখা যাবে না যে। ফিফায় গিয়ে পৌঁছাবে না মোহনবাগানের ২৩ পাসের গোল।
না এখনও কর্তারা সমর্থকদের আর্তির উত্তর দিতে পারেননি। মিডিয়াও তাদের শোনাতে পারেননি আশার কোন বাণী। শোনাবেন কি করে, মরশুম যে এখনও শেষ হয়নি।
মরশুম শেষ হবে। মোহনবাগানের সঙ্গে এটিকের সংযুক্তিকরণ হবে ১ লা জুন। তারপর বোর্ড গঠন হবে। সেই বোর্ডের ডিরেক্টররা ঠিক করবেন কিবু ভিকুনা থাকবেন কিনা। মিডিয়ার কাজ তো শুধু খবর রিলে করা। সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়। তখন আর সৃঞ্জয় বোস, দেবাশিষ দত্তদেরও একক সিদ্ধান্তে কিছু হবে না। মিলিত সিদ্ধান্তেই তৈরি হবে চূড়ান্ত রূপরেখা।
শুধু কিবু ভিকুনা নয়, জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রাণ গঞ্জালেস, পাপ বাবাকার, শেখ সাহিলদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তারা আগামী দিন মোহনবাগানে থাকবেন কিনা!
তাদের রাখা না হলে তারা অন্য কোথাও চলে যাবেন। তারা পেশাদার ফুটবলার। ফুটবলটাই তাদের জীবিকা।
ইতিমধ্যেই এটিকে যেমন দল সাজাতে শুরু করেছে। তেমনই দল সাজাতে শুরু করেছে অন্য দলগুলোও। বেইতিয়া, গঞ্জালেসের কাছে প্রস্তাবও আছে অন্য দলের। মোহনবাগান না রাখলে সেখানে তারা চলে যাবেন। তাছাড়া এও শোনা যাচ্ছে এটিকে নাকি বিদেশি কোটা প্রায় পূরণ করে ফেলেছে। তাহলে তো বেইতিয়া, গঞ্জালেসদের আর জায়গা কোথায়?
তাই বোধ হয় বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে অনেক আগে মোহনবাগান এক কর্তা বলেছিলেন, ভবিষ্যতের কথা আগাম কিছু বলা যায় না। তবে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে সবার বায়োডাটায় সেটা যোগ হবে। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য তারা।
কথাটা হয়তো সত্যি। কিন্তু মোহনবাগান সমর্থকরা যে শুধু বেইতিয়াদের খেলাকে ভালোবাসেন নি, তাদেরকেও ভালোবেসে ফেলেছে। তাই হয়তো লিগ জয়ের আনন্দের মধ্যেও প্রিয় নায়কদের হারানোর ভয় মোহনবাগানে।