করোনার আফটার এফেক্ট দেখা দিতে পারে ভারতীয় ফুটবলে…

গোপাল রায়: করোনার জেরে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে ভারতীয় ফুটবল। এমনটাই মনে করছেন ভারতীয় ফুটবলের কর্তাব্যক্তিরা।
কোনও রকমে হয়তো এবছরে কোটি টাকার লিগ আইএসএলটা শেষ করা গেছে। দর্শকশূণ্য স্টেডিয়ামে ফাইনাল করে। আই লিগ কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। চার-পাঁচ ম্যাচ করে বাকি আই লিগ টিমগুলির। ১৫ এপ্রিল লক ডাউন উঠে গেলেই যে, আই লিগের অবশিষ্ট ম্যাচগুলি সম্পন্ন করা যাবে– এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ। ফেডারেশন কর্তারা বলছেন, ১৫ এপ্রিল আগে যাক, তারপর পরবর্তী পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। স্বাভাবিক।
হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আই লিগের বাকি চার-পাঁচটা করে ম্যাচ সম্পন্ন করা যাবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন — নতুন মরশুম শুরু করা যাবে তো? ফেডারেশন সচিব কুশল দাস যেমন বলছিলেন, “বিশাল প্রশ্ন চিহ্নের মুখে গোটা বিশ্ব। সেখানে ভারতবর্ষ তো আর পৃথিবীর বাইরে নয়। গোটা বিশ্বের মতো তো এই দুশ্চিন্তা আমাদেরও।”
সত্যি তো করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে গোটা বিশ্ব। একদিন হয়তো বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এই লড়াইয়ে জয়ী হবে পৃথিবীর সমগ্র মানুষ। নির্মূল হবে করোনা ভাইরাস। কিন্তু এর আফটার এফেক্ট থেকে যাবে আরও দু-তিন মাস। তাতে বিশ্বের সমস্ত খেলাধূলার মতো ওলোট- পালোট হয়ে যেতে পারে ভারতীয় ফুটবলও।
ধরা যেতে পারে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়ে ছিল ভারতের নম্বর ওয়ান কোটি টাকার লিগ আইএসএল। প্রি-সিজন হয়েছিল আগস্ট মাঝে। কোনও দল প্রি-সিজন করতে গিয়েছিল ইউরোপে। কেউ আবার অর্থনৈতিক কারণে এশিয়া, নয়, ভারতেই প্রি-সিজন করেছিল।
কিন্তু এবার কী হবে? চিন, ইরানের পর এবার করোনা ভাইরাসে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ। শুধু তাই না, আইএসএলে যত না আফ্রিকা মহাদেশের ফুটবলার খেলে তার অনেক বেশি খেলে ইউরোপ মহাদেশের প্লেয়ার। তার উপর ভারতীয় ফুটবলে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য স্পেনের ফুটবলার। সে আইএসএল হোক, কিংবা আই লিগ। আর করোনা ভাইরাসে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতালির পর স্পেন। তারপর তো অন্য দেশগুলি আছেই।
তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, ভারত সরকারও কি সহজে ভারতে ঢুকতে দেবে ইউরোপিয়ানদের! মনে হয় না। বিদেশের সব দেশের মতো ভারত সরকারও ভিসা নিয়ে একটু আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা নেবে।
সেক্ষেত্রে হয়তো হাবাস, এডু গার্সিয়া, জ্যাভি হার্নান্দেজ পুনরায় এটিকেতে যোগ দিতে ভারতে প্রবেশ করতে যেমন একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ঠিক তেমনই মোহনবাগানের চুক্তি শেষ করে কিবু ভিকুনা, বেইতিয়ারা দেশে ফিরে গিয়ে, কেরালা ব্লাস্টার্সে যোগ দিতে পুনরায় ভারতে আসতে গেলে সাময়িক সমস্যা হতেই পারে। ফলে প্রি-সিজন থেকে আইএসএল, আই লিগ শুরু সবটাই নির্দিষ্ট সময়ের থেকে পিছিয়ে যেতে পারে। এই অনুমান করেই হয়তো ইউরো কাপ, অলিম্পিক পিছিয়ে গিয়েছে।
তাই করোনা ভাইরাস নির্মূল করার পরও, তার আফটার এফেক্টের আতঙ্ক কিন্তু এখন থেকেই তারা করে বেড়াতে শুরু করে দিয়েছে গোটা বিশ্বের মতো ভারতীয় ফুটবলেও। তাই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের চিন্তা ঠিক সময় সব কিছু শুরু করা যাবে তো! বিদেশি ফুটবলাররা সময় মতো আসার ভিসা পাবে তো! সব কিছু বিষয় তো আর তাদের হাতে নেই। করোনা ভাইরাসেরই মতো ব্যাধি তো এখন বিশ্বের ইস্যু, রাষ্ট্রর ইস্যু।