বট গাছের নীচে আরেক বট গাছ না হলে, এক ভারতসেরা কোচের সহকারি অন্য এক ভারতসেরা কোচ হতে পারে না...

গোপাল রায়: ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগান তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। মোহনবাগানকেও তিনি সসম্মানে আই লিগ ফেরত দিয়েছেন। অমর্যাদা করেননি। তবু তাঁকে মরশুম শেষ হলেই মোহনবাগান ছেড়ে চলে যেতে হবে। পেশার তাগিদে। সঙ্গে হয়তো বেইতিয়া, সহকারী টমাস চর্জ, ফিজিক্যাল ট্রেনার পাওলিসদের নিয়ে যাবেন। মোহনবাগানের মতো কেরালা ব্লাস্টার্সেও নিজের সেটআপ তৈরি করতে।
সত্যি কষ্টের। মোহনবাগানের সঙ্গে যে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে গেছেন কিবু। তবু তাঁকে চলে যেতে হবে। বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায়।
এখন বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ওনাকে। দুটো কারণের জন্য। এক, করোনা ভাইরাসের মতো মারণ রোগের জন্য আই লিগ এখনও শেষ হয়নি। চারটে ম্যাচ বাকি। দুই, মরশুমও এখনও শেষ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া তার সামনে আর কি বা উপায়। তিনিও এখন আই লিগের মতো লকডাউন। ঘরবন্দি।
১ জুন এটিকের সঙ্গে মোহনবাগানের মার্জার হওয়ার অনেক আগেই হাবাসের চাকরি পাকা হয়ে গেলেও, কিবু ভিকুনার কিন্তু হয়নি। জীবনে কে আর অনিশ্চিয়তার রাস্তায় হাঁটতে চায় বলুন। সবাই নিজের রুটি রুজিটা নিশ্চিত করতে চায়। কিবু ভিকুনাও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। তাই তিনি আইএসএলের আরেক ক্লাব কেরালা ব্লাস্টার্সকে মৌখিক কথা দিয়ে দিলেও, সরকারি ঘোষণা তিনিও করেননি, কেরালা ব্লাস্টার্সও করেনি।
পেশাদার কোচ। পেশাদারিত্ব মেনেই হয়ত তিনি সব কিছু করবেন। আগে মোহনবাগানের চুক্তি শেষ করে দেশে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তবেই হয়তো কেরালা ব্লাস্টার্সকে চূড়ান্ত সম্মতি দেবেন। তার আগে এই নিয়ে যতই প্রশ্ন হোক না কেন, তাঁর ছেলেরা যেমন জমিতে অজস্র পাস খেলে এগিয়ে যায়, ঠিক তেমনই ভাবে প্রচুর কথা বলে আসল বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাবেন।
অনেকেই হয়ত বলবেন, ইস, মোহনবাগান কর্তারা ওনাকে রাখার চেষ্টা করলেন না। অথচ মোহনবাগান কর্তারই তো ওনাকে ভারতীয় ফুটবলে প্রতিষ্ঠা দিলেন। কলকাতা লিগ, শিল্ড, ডুরান্ড, শেখ কামাল ইন্টারন্যাশনাল কাপে ব্যর্থতার পরও তো ওনার উপর ভরসা রাখলেন। তাই তো তার প্রতিদান দিলেন কিবু। আই লিগ জিতে। ডেম্পোকে ছুঁয়ে।
সেই কিবুকেই মোহনবাগান ছেড়ে দেবে? আটকাবে না। আটকালেও, কোথায় বা রাখবেন ওনাকে? এটিকে-এমবি বা এমবি-এটিকে হলে, তার তো চিফ কোচ হিসেবে হাবাস ঠিকই হয়ে গেছে। তা হলে তো কিবুকে রাখতে হলে হাবাসের সহকারি রাখতে হবে। না হলে আর তো কোনও বিকল্প রাস্তা খোলা নেই। আর একটি দলের তো দুটো হেড কোচ হতে পারে না। তাহলে কিবুকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় কই! কিবু তো আর হাবাসের সহকারি হবেন না। হাবাস যদি আইএসএলে ভারতসেরা হন, তাহলে কিবুও তো আই লিগে ভারতসেরা। এক ভারতসেরার আন্ডারে আরেক ভারতসেরা কোচ থাকতে পারে কখনও? ঠিক যেমন এক বট গাছের নীচে আরেক বট গাছ থাকতে পারে না।