শুধু ভারত নয়! নীরজ চোপড়ার অলিম্পিকে সোনা জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা একটি জার্মান গ্রামও

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : যখন ভারতের প্রথম ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী নীরজ চোপড়া বিমানবন্দরে নামেন তখন তিনি বিমানবন্দর থেকে হাজারো মানুষের সংবর্ধনা পেয়েছিলেন। তার দুই জার্মান কোচ, তখন তাদের স্মার্টফোনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই উন্মাদনা অনুসরণ করছিলেন।
প্রায় দেড় বছর পর বাড়ি ফিরে চোপড়ার ৭৩ বছর বয়সী বায়োমেকানিক্যাল এক্সপার্ট ড. ক্লাউস বার্টোনিটজ একটি ট্রেন ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ১৩০ বছর পুরনো একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ওবার্সলেটেনবাকে পৌঁছান। তার পারিবারিক ডাক্তারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে পরে থাকা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করার সময়, বার্টোনিটজ নীরাজের বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখে আনন্দিত হয়েছিলেন।
নীরজের সঙ্গে ভারতে কী হচ্ছে? এই প্রশ্নের সঙ্গে তিনি বলেন, "আমি জানি এটা ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক। আমি কিছু ছবি পেয়েছি এবং আমি দেখেছি যে সেনাবাহিনীতে (আধাসামরিক বাহিনী) তাকে সংবর্ধিত করার জন্য ডাকা হয়েছে।"
জ্যাভেলিনে ভারতের প্রধান কোচ উয়ে হনও রেনসবার্গে বসতি স্থাপন করছিলেন, বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথে দেখা করছিলেন এবং ভারতের দিকেও নজর রাখছিলেন। হোন ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন যে অলিম্পিক সাফল্যে ক্ষুধার্ত একটি দেশের জন্য জ্যাভেলিন স্বর্ণপদক বলতে কী বোঝায়। ৮০০০ এর কম জনসংখ্যার একটি শহরে, তিনি তার মা এবং বোনকে নিয়ে বসবাস করেন।
নীরজ চোপড়ার সাথে ড.ক্লাউস বার্টোনিটজ, বায়োমেকানিক্যাল এক্সপার্ট যিনি তাকে অলিম্পিক সোনা জিততে সাহায্য করেছিলেন। হোন তার নতুন অলিম্পিক তারকাকে ভারতের আবেগপূর্ণ অভ্যর্থনা অনুসরণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন এই মুহূর্তে নিরাজ তার সাফল্য উদযাপন করতেই পারে। "নীরজ এই সব সম্মান পাওয়ার যোগ্য। আমি আশা করি এটি শুধুমাত্র ভারতের সব ক্রীড়াবিদদের উপর প্রভাব ফেলবে, শুধু জ্যাভেলিন নিক্ষেপকারীদের উপর নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিভার কোন কোচ নেই জেনে আমি ভারতে এসেছিলাম। আমি ক্লাউসকে ভারতে নিয়ে এসেছিলাম। ক্লাউস ভালো কাজ করেছে। গত কয়েক মাসে আমরা খুবই উন্নতি করেছি এবং চোপড়ার এই সাফল্য শেষ অবধি এনে দিতে পেরেছি।" নীরাজ এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন তখন থেকেই তার কোচ ছিলেন উয়েহন।
ওবার্সলেটেনবাক বোনের মধ্যে অবস্থিত এই হাইকিং ট্রেইলগুলির জন্য বিখ্যাত, যা একসময় রাজপরিবারের শিকারের জায়গা ছিল, বার্টোনিটজ এই গ্রামের একজন সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন। একটি ছোটখাট সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছেন। তিনি অনবরত প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অভিনন্দন মূলক ফোন কল পাচ্ছেন এবং তারা বারবার তার কাছ থেকে জানতে চাইছেন যে এই রকম বড় মঞ্চে কিভাবে একজন প্লেয়ারের মাথা ঠান্ডা রাখা সম্ভব এবং তার যদি একজন ভারতীয় হয় তার সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে নীরাজের করা ৮৭.৫৮ মিটার নিক্ষেপ টি ওবার্সলেটেনবাখের একটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
২০১৮ সালের এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার সময় নীরজ চোপড়াকে প্রশিক্ষণ দেন উয়ে হোন। বার্টোনিটজ কিছুদিন ধরে জার্মান অ্যাথলেটিক্স ইকোসিস্টেমের অংশ ছিলেন। তার এক সময়ের ছাত্র বরিস ওবার্গফোল টোকিও ২০২০-তে ভেটের কোচ ছিলেন।
কোচ ভারত ও জার্মানির অলিম্পিক পদকপ্রাপ্তদের দেওয়া নগদ পুরস্কারেরও তুলনা করেন। “গতকাল একজন বন্ধু আমাকে বলেছিল যে জার্মানিতে একজন স্বর্ণপদক বিজয়ী ২০০০০ ইউরো (প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা) পায়। নীরজ সরকার এবং স্পনসরদের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এটা শুধু আমার একার কৃতিত্ব নয়।" নীরাজ যখন জুনিয়র বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন তখন তার কোচ ছিলেন গ্যারি কালভার্ট, এরপর কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়ান গেমস জেতার সময় তার কোচ হন উয়ে (হোন)।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, বার্টোনিটজের ভারতে ফেরার কথা রয়েছে। হোহনও জানেন যে তিনি বাড়িতে থাকার বেশি সময় পাবেন না। "শীঘ্রই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়ান গেমসসহ ২০২২ সাল একটি আকর্ষণীয় বছর নিজের জন্য অপেক্ষা করছে।"
ভারতে ফ্লাইট নেওয়ার আগে, বার্টোনিটজ গ্রামের চারপাশে হাইকিং ট্রেইল করতেন। “এটি আসলে জার্মানির বৃহত্তম বনভূমি। মাঝখানে কিছু গ্রাম আছে। এই অঞ্চলের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। জলবায়ু খুব সুন্দর তাই এটি ওয়াইন চাষের জন্যও ভাল।”
এরপর বার্টনিজ ডাক্তারের কাছে যান এবং যাওয়ার সময় তিনি বলেন যে "আপনার শরীর আপনার গাড়ির মতো, আপনি দীর্ঘ যাত্রায় যাওয়ার আগে আপনাকে এটি পরীক্ষা করতে হবে।" হয়তো এই শিক্ষাতেই চোপড়াকে তিনি আরো অলিম্পিক পদক জেতাবেন। এই আশ্বাসই মনে হয় দিয়ে গেলেন।