বাড়ির ফুটবল পরিবেশের জন্যই অন্য কোনও খেলার কথা মাথায় আসেনি প্রীতম কোটালের...

গোপাল রায়: ভারতীয় দলে যে ক'জন বাঙালি ফুটবলার এখন খেলছেন, তার মধ্যে প্রীতম কোটাল অন্যতম। শেষ পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে খেলে চলেছেন তিনি। কী ভাবে সেটা সম্ভব? সেটাই বলছিলেন প্রীতম।
আসলে ছোটবেলা থেকেই খেলার পরিবেশ ছিল বাড়িতে। বাবা শিবুরাম কোটাল আন্ডার হাইটের খেলায় নিয়ে যেতেন ছেলেদের। আর কাকা শঙ্কর কোটাল কলকাতা ময়দানে প্রথম ডিভিশনে খেলতেন। কিন্তু অফ সিজিনে অর্থ রোজগারের জন্য খেপও খেলতেন। বাড়ির এই ফুটবল পরিবেশ দেখে, আর অন্য কোনও খেলা কথা মাথায় আসেনি প্রীতমের। তাই ছ-সাত বছর বয়স থেকেই পাড়ার মাখলা হাই স্কুলের মাঠে খালি পায়ে নেমে পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই একটু একটু করে গভীর ভালোবাসা জন্মায় ফুটবলের প্রতি। আর তার সঙ্গে তো বাবা, কাকাদের ফুটবল চর্চা ছিলই।
১৩ বছর বয়সে উত্তরপাড়া নেতাজি ব্রিগেডে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ ম্যাঞ্চেস্টার কাপে চন্ডীগর খেলতে যাওয়া। তারপর মাধ্যমিক দেওয়ার পর অনুপ দাসের কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া। সেখান থেকে বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিসি রায় ট্রফি খেলার পর অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ট্রায়ালে ডাক পাওয়া। ৮০ জন ফুটবলারের মধ্যে থেকে ৩০ জন ফুটবলারকে জাতীয় দলে নির্বাচিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রীতম ছিলেন। ভারতীয় চূড়ান্ত দলের সুযোগ পেয়ে এএফসি কাপেও খেলেছিলেন তিনি। ভারতীয় দলে খেলার পর দু' বছর পৈলান অ্যারোজে খেলেন প্রীতম। সেখানে সুখবিন্দর সিং ও আর্থার পাপাসের কোচিংয়ে খেলার পর মোহনবাগানে চলে আসেন। তারপর চার বছর ছিলেন সবুজ-মেরুনে। করিমের কোচিংয়ে খেললেও, সুভাষ ভৌমিকের কোচিংয়ে খুব একটা খেলা হয়নি তাঁর। এশিয়ান গেমসের জন্য ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যাওয়ায়। এশিয়ান গেমসে কোভারম্যানের কোচিংয়ে খেলেন তিনি। তারপর ভারতীয় দল থেকে ফিরে এসে আবার মোহনবাগানে যোগ দেন প্রীতম। সবুজ-মেরুনের হয়ে যেতেন আই লিগ ও ফেড কাপ।
আই লিগ ও আইএসএল আলাদা হয়ে যাওয়ার পর দিল্লি ডায়নামোসে যোগ দেন এই সাইড ব্যাক। তিনি অবশ্য ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলতেন। কলিন টোল তাঁকে সাইড ব্যাক করেছিলেন। মরশুমে মাঝপথেই তাঁকে দিল্লি ডায়নামোস থেকে ট্রান্সফার মানি দিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসেন এটিকে টিম ম্যানেজমেন্ট। ২০২৩ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে চুক্তি এটিকের।
ঘন ঘন ক্লাব পরিবর্তন করতে খুব একটা ভালবাসেন না প্রীতম। যে ক্লাবেই খেলেন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে ভালবাসেন। প্রীতমের বিশ্বাস কোনও ক্লাবে থিতু হয়ে পরের লক্ষ্য ঠিক করা অনেক সহজ।
এখন বালিতে প্রীতমের সাজানো গোছানো দু'তোলা বাড়ি, হুন্ডাই সিয়েটা গাড়ি, ইনকাম ট্যাক্সে চাকরি - সব কিছুই আছে। একটি একাডেমিও খুলেছেন তিনি। ভবিষ্যতের প্রীতমদের তৈরি করবেন বলে।