এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে উদ্বাস্তুদের অসহায়তা ও জীবনের সাথে সংগ্রামের কাহিনী যুগের পর যুগ চলে আসছে। কিন্তু জীবনের সংগ্রামকে অতিক্রম করার শক্তিই থাকে এই উদ্বাস্তু মানুষদের, আর সেই লড়াই থেকে বেরিয়ে এসে তারাই আসল বিজয়ী হল। এমনই এক কাহিনী হল ড্যানিশ ফুটবলার নাদিয়া নাদিমের। আফগান জাত এই ফুটবলার চলতি মরশুমে পিএসজির হয়ে ফরাসি লিগ জিতেছেন। কিন্তু ওনার শৈশব আজও আতঙ্কের।

১৯৮৮ সালে আফগানিস্তানের হেরাতে জন্মগ্রহণ করেন নাদিম। ১১ বছর বয়সে আফগান সেনাবাহিনীর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত পিতাকে তালিবানদের কাছে হারান নাদিম। এরপর ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তান এবং সেখান থেকে ইউরোপে পালিয়ে যান নাদিম এবং তার মা ও চার বোন। কথা ছিল লন্ডনে যাওয়ার, কিন্তু এসে পাড়ি দেন ডেনমার্কে।

এই নিয়ে নিজের ওয়েবসাইটে নাদিম লিখেছিলেন, "আমরা লন্ডনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, যেখানে আমাদের কিছু আত্মীয় ছিলেন, আর ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে আমরা পাকিস্তান থেকে ইতালি এসে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি আর আমার পুরো পরিবার ট্রাকে উঠেছিলাম, ভেবেছিলাম আমরা হয়ত লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। কয়েক দিন বাদে, যখন আমরা ট্রাক থেকে নামলাম, বিগ বেন দেখার আশায় ছিলাম, আমরা কেবল গাছ দেখতে পেয়েছিলাম। আমরা স্থানীয় একজন জিজ্ঞেস করে জানতে পারি যে আমাদের ডেনমার্কে নামানো হয়েছে।"

আর সেখানেই নিজেদের দ্বিতীয় জীবন শুরু করেন নাদিয়ারা। ২০০৯ সালে ডেনমার্ক জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করেন, আর তারপর থেকে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোলস্কোরার হিসেবে উঠে এসেছেন। ২০১৭ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নাদিয়ার দুর্ধর্ষ গোল আজও সকলের চোখে ভাসে। দেশের হয়ে ৯৮ ম্যাচে ২০০ এর বেশি গোল করেছেন নাদিয়া।

শুধু তাই নয়, অবসর সময়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জিয়ন হওয়ার জন্য পরিশ্রম করছেন নাদিম। বর্তমানে আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করছেন এবং ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর এনিজের পঠনপাঠন শেষ করবেন। এছাড়া ১১টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন তিনি।

নাদিয়ার এই কাহিনী গোটা সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্ব ছড়িয়ে পড়ে। দেশ-বিদেশের ফুটবলপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ নাদিয়ার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে। আর এই আবেগঘন বার্তা পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন নাদিম। একজন প্রকৃত আদর্শ হিসেবে উঠে এসেছেন নাদিয়া নাদিম, বিশ্বজুড়ে সমস্ত উদ্বাস্তুদের মুখ আজ নাদিম।