কোপা জয়ের কান্ডারি অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া - কয়লা খনি থেকে কিভাবে হয়ে উঠলেন আর্জেন্টিনার হীরক?

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : সেরা খেলোয়াড়দের কাহিনী সর্বদাই সেরা হয়ে থাকে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর কোপা আমেরিকা খেতাব জিতেছে আর্জেন্টিনা, আর তারপরেই গোটা ফুটবল সমাজে মেসি বন্দনা শুরু। কিন্তু যার জন্য আজ শক্তিশালী ব্রাজিলকে হারানো সম্ভব হল, সেই অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াই প্রকৃত হীরে। কিন্তু এই হীরের উৎপত্তি কয়লাখনি থেকেই - আর এটাই সত্যি।
১৯৮৮ সালে আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মেছিলেন অ্যাঞ্জেল ফাবিয়ান ডি মারিয়া। তার বাবাও একজন পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। বাবাকে দেখে ছোট্ট ডি মারিয়াও ফুটবলে আগ্রহ দেখাতেন। কিন্তু হাঁটুর চোটের জেরে বাবার ফুটবল কেরিয়ারে দ্রুত সমাপ্তি আসে, আর সংসার চালানোর জন্য কম পয়সার বেতনে কয়লাখনিতে কাজ করতে হয়।
এদিকে মা টুকটাক কাজ করলেও তেমন রোজগার হচ্ছিল না, বাবার কয়লাখনির কাজেও তেমন পয়সা আসছে না। পরিবারের এই কঠিন অবস্থা দেখে তরুণ অ্যাঞ্জেল সিদ্ধান্ত নিলেন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। ফুটবলের স্বপ্নকে বিসর্জন না দিয়েই তিনি বাবার সাথে কয়লাখনির কাজে লেগে পড়লেন।
এই নিয়ে ডি মারিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "সেটি এমন একটি মুহুর্ত ছিল যা আমি ভুলতে পারব না। নিজের কাজ থেকে ফুটবলের জুতো কেনা অত্যন্ত খুশির ব্যাপার ছিল। সেই সময় আমি এক কিশোর ছিলাম যে কয়লা দিয়ে আসত, কাজটা খুব কঠিন ছিল।"
তবে কাজের মাঝেও ফুটবলে নিজের অসাধারণ স্কিল প্রদর্শন করতেন রোজারিওর রাস্তায়। আর সেই খেলা দেখে ডি মারিয়াকে নিয়ে নেয় রোজারিও সেন্ট্রাল। ২০০৬-০৭ মরশুমে রোজারিওর হয়ে ২৫ ম্যাচ দুর্দান্ত ফুটবল খেলার জেরে ২০০৭ অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে সুযোগ পান ডি মারিয়া।
কানাডায় আয়োজিত হওয়া সেই বিশ্বকাপে তিন গোল করে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ডি মারিয়া। আর তারপর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আর্জেন্টাইন উইঙ্গারকে। পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকায় সুযোগ পান ডি মারিয়া। আর তারপর রিয়াল মাদ্রিদে খেলেন তিনি। সেখানে লা লিগা, সুপার কাপ, কোপা ডেল রে জেতেন লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হয়ে। জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ।
কিন্তু তারপরেই আসে অশনি সংকেত। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়েই যেন কেরিয়ারে বড়সড় আঘাত আসে ডি মারিয়ার। চোট-আঘাত ও অফ ফর্মে কখনও রেড ডেভিলসদের হয়ে জমিয়ে নিতে পারেননি। যার জেরে সেই সময় আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের দরজাও ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসছিল ডি মারিয়ার জন্য।
কিন্তু ডি মারিয়াকে নতুন জীবন ফিরিয়ে আনে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। নেইমার ও এমবাপ্পের সাথে অসাধারণ যুগলবন্দী তৈরি করেছেন ডি মারিয়া। আজ তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা এক উইঙ্গার হিসেবে বিবেচিত। এবারের কোপা আমেরিকায় মেসির পরে সেরা পারফর্মার হিসেবে বিবেচিত হতেই পারেন ডি মারিয়া।
ডি মারিয়াদের কাহিনী এমনই হয়। কঠিন পরিশ্রমকে কাঁধে নিয়েই তারা সাফল্যের পথে ওঠেন। জীবনে চড়াই উতরাই থেকেই যায়, কিন্তু অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ারাই সেই জীবন যুদ্ধকে জয় করে সাফল্য অর্জন করতে পারে।