মোহনবাগানের জয়ের হ্যাটট্রিক। শেষ মুহূর্তের গোলে 'হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা' রয় কৃষ্ণা। বিস্তারিত পড়ুন...

এটিকে মোহনবাগান : ১ (রয় কৃষ্ণা : '৯৪)
ওড়িশা এফসি : ০
সব্যসাচী বাগচী : একেই বলে 'ওস্তাদের মার শেষ রাতে'। একটা সময় মনে হচ্ছিল জয়ের হ্যাটট্রিক অধরাই রয়ে গেল। কিন্তু ইনজুরি টাইমে গোল করে সব হিসেবনিকেশ বদলে দিলেন রয় কৃষ্ণা। ফলে ওড়িশা এফসি'র বিরুদ্ধে অবধারিত ড্র ম্যাচ ১-০'এ জিতে নিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। একইসঙ্গে এই জয়ের ফলে ৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে আবার লিগ টেবিলের শীর্ষে চলে গেল আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের এটিকে মোহনবাগান। কেরালা ব্লাস্টার্স, এসসি ইস্টবেঙ্গলের পর এবার ওড়িশা। দল তো জয়ের হ্যাটট্রিক করলই, একইসঙ্গে চলতি আইএসএলে ৩'টি গোল করে ফেললেন ফিজি'র জাতীয় দলের স্ট্রাইকার। 'ম্যাচের সেরা'ও হলেন তিনি।
সবাই তখন ধরেই নিয়েছিলেন গোলশূন্য অবস্থাতেই শেষ হবে। ঠিক তখনই কৃষ্ণর ম্যাজিক। ৯৪ মিনিটে রয় কৃষ্ণর গোলে ম্যাচ জিতল হাবাসের দল। সেট পিস থেকে সন্দেশের হেড খুঁজে নেয় রয় কৃষ্ণর মাথা। তাঁর হেড দলকে এনে দিল মহামূল্যবান তিন পয়েন্ট। গোটা ম্যাচ জুড়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে 'চল রে চল সবে ভারত সন্তান। মোহনবাগান করে আহ্বান...' পুরো ম্যাচজুড়ে গানটা বেজে চললো। সবাই ভেবেছিল গানটা শোনার পরেও হয়তো ফুটবলাররা উজ্জীবিত হতে পারলেন না। তবে রয়ের মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই তো কঠিন ম্যাচ জিতে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ল তাঁর দল।
যদিও প্রথমার্ধে গোলের সুযোগ তৈরি হলেও সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলেন না রয় কৃষ্ণা। ম্যাচের বয়স তখন ২৪ মিনিট। বক্সের কাছে থাকা রয় কৃষ্ণার দিকে ভাসানো বল বাড়িয়ে দেন তিরি। দারুণ রিসিভ করার পরেও তাঁর বাঁপায়ের শট পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আরও একবার সুযোগ পান ফিজি থেকে আসা স্ট্রাইকার। মাঠের বাঁদিক থেকে কৃষ্ণার দিকে ক্রস তোলেন শুভাশিস বোস। যদিও রয়ের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়।
তবে ওড়িশা এফসি'ও পিছিয়ে ছিল না। সন্দেশ সন্দেশ জিঙ্গান, তিরি ও প্রীতম কোটাল শক্তপোক্ত ডিফেন্স গড়ে তুললেও গোল করার সুযোগ পেয়েছিল স্টুয়ার্ট বাক্সটারের দল। ৩৪ মিনিটে সেট পিস থেকে গোল করার সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন ওডিশার ফুটবলার জ্যাকব ট্র্যাট।
এবারের টুর্নামেন্টে ভাল শুরু করেনি ওড়িশা। হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ড্র করেছিল তারা। দুই ফুটবলার মার্সেলিনহো ও দিয়েগো মরিসিওকে নজরে রেখেছিলেন হাবাসের রক সলিড ডিফেন্স। মার্সেলিনহোকে আগে থেকেই চিনতেন হাবাস। এদিন ম্যাচের শুরুতেই মার্সেলিনহোকে কড়া ট্যাকল করেন তিরি। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হলুদ কার্ডও দেখেন। কিন্তু ওই কড়া ট্যাকলের ফলে মার্সেলিনহো নিজের সহজাত খেলা আর খেলতে পারেননি। ৬৭ মিনিটে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। মরিসিওকেও তুলে নিতে বাধ্য হন স্টুয়ার্ট বাক্সটার।
এটিকে-মোহনবাগানের রক্ষণভাগের উপরে আর কোনও চাপ ছিল না তখন। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে রয় কৃষ্ণর হেডে এটিকে-মোহনবাগান ম্যাচ জিতে নেয়। হাবাস ও বাক্সটার এর আগে মুখোমুখি হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। একে অপরকে আগে থেকে জানতেন। আইএসএলে দুই পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে শেষ হাসি তোলা থাকল হাবাসের জন্য। এবং অবশ্যই এই জয়ের নেপথ্যে সন্দেশ-তিরি-প্রীতমের অনেক বড় অবদান আছে। কারণ, চলতি মরসুমে যে সবুজ-মেরুন একটাও গোল হজম করেনি।
এটিকে মোহনবাগান : অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোলকিপার), প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ জিঙ্গান, প্রবীর দাস, শুভাশিস বোস, জাভি হার্নান্দেজ/শেখ সাহিল, কার্ল ম্যাকহাউ, জয়েস রানে/গ্লেন মার্টিন্স, রয় কৃষ্ণা (অধিনায়ক), মনবীর সিং/ ব্র্যাড ইনমান
ওড়িশা এফসি : হেন্দরি অ্যান্টনি, কোল আলেকজান্ডার, মার্সেলো পেরেইরা/ স্যামুয়েল লামমপুইয়া, গৌরব বোরা, শুভম সারঙ্গী, জ্যাকব ট্রাট, কমলজিত সিং (গোলকিপার), নন্দ কুমার, স্টিভেন টেলর, লাসীরাম প্রেমজিত সিং, দিয়েগো মরিসিও/ মাইকেল অনউ