৭০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ মোহনবাগান স্পনসরের বিরুদ্ধে, অনলাইন বেটিং সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামল সরকারি সংস্থারা

বিশেষ রিপোর্ট: ভারতীয় ফুটবল তথা ক্রীড়াজগতকে বেটিংয়ের প্রভাব কিভাবে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে, তার ধারণা এখনও অবধি সাধারণ মানুষের মনে স্পষ্ট হয়নি। অথচ এই বেটিংয়ের কালো ছায়া ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে দেশের ফুটবলকে। ভারতবর্ষের দুই ঐতিহ্যশালী ক্লাব মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলও বেটিং সংস্থার গ্রাসে আক্রান্ত! বিগত কয়েক মরশুমে, এই দুই ক্লাবের ফুটবল দলের মূল স্পনসর হিসেবে জুড়েছে বেটিং অ্যাপগুলির সারোগেটেড সংস্থা। মোহনবাগানের সঙ্গে রয়েছে পারিম্যাচ নিউজ। মোহনবাগানের জার্সিতে জ্বলজ্বল করছে পারিম্যাচ' অ্যাপ', যা সাইপ্রাসের এক বেটিং সংস্থা পারিবেটসের সারোগেটেড সংস্থা। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে রয়েছে 'ব্যাটারি', যে সংস্থা নিয়েও অনেক সংশয়, অনেক প্রশ্ন। প্লে স্টোরে দেখা যাচ্ছে এটিও একটি ক্রিকেট বেটিং অ্যাপ, যা ভারত, পাকিস্তান আর বাংলাদেশ ব্যবহার করা হয়।
আরও পডুন - ফের বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যেতে পারে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ
সম্প্রতি এই পারিম্যাচ অ্যাপের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগ করেছে ডাইরেক্টোরেড জেনারেল অফ গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্সের মুম্বাই শাখা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারা ভারত থেকে বিপুল অর্থ ( ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) ক্রিপ্টোকারেন্সি রূপে বিদেশে পাচার করছিল। একাধিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, খোদ কলকাতায় এরকম ৩৫০-এর কাছাকাছি নেটওয়ার্ক রয়েছে, যারা এভাবে দেশ থেকে অর্থ বিদেশে পাঠাচ্ছে। বিদেশ থেকে অপারেট করে দেশের টাকা বিদেশে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত এরকম ৪০ টি বেটিং অ্যাপকে চিহ্নিত করেছে তারা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফ থেকে সমস্ত সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়া সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে এই ধরণের বেটিং সংস্থা বা তার সারোগেটেড শাখার কোনও বিজ্ঞাপন গ্রহণ বা সম্প্রচার যেন না করা হয়। মিডিয়া হাউসগুলি সরকারি নিয়মের কারণে বিজ্ঞাপন নিচ্ছেনা। অথচ ক্রীড়া সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন গুলি জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বেটিং সংস্থাগুলি বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে স্পনসরশিপের প্রলোভন দেখাচ্ছে, ফলে সেখান থেকে মুখ ফেরাতে পারছে না দেশের অসংখ্য ক্লাব তথা ক্রীড়া সংস্থাগুলি। বড় ক্লাব তো বটেই, ছোট ছোট ক্লাবগুলিও এই বেটিং সংস্থার কাছে নিজেদের সমর্পিত করছে। কলকাতা ময়দানে তাদের প্রতিনিধিরা স্পন্সরশিপের নামে ব্যক্তিগত ভাবে জুড়ে যাচ্ছে, দলগঠনের ক্ষেত্রে, যার ফলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মত ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেশি করে উঠে আসছে।
আরও পড়ুন - ইউএস ওপেন ফাইনাল হেরেও দর্শকদের মন জিতে নিলেন রোহন বোপান্না
যদিও দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে এই ধরণের সংস্থার দাপাদাপি রুখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, কিন্তু বাকি রাজ্যে বেলাগামভাবে চলছে এই সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য। এক্ষেত্রে অনেকে পারিম্যাচ বা ওয়ানএক্স ব্যাট-এর মত সংস্থার সাথে গুলিয়ে ফেলেন ড্রিম ইলেভেন বা মাই এলেভেন সার্কেলের মত অ্যাপের সাথে।
ড্রিম ইলেভেনের মত ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপগুলি মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, সেখানে আপনার কাছে খেলোয়াড়দের সম্পর্কে তথ্য আর বুদ্ধিমত্ত্বার প্রয়োজন হয় জেতার জন্য। কিন্তু এই পারিবেটস, দাফা বেটস বা ওয়ানএক্সবেট-এর মত বেটিং সংস্থাগুলিতে স্রেফ ভাগ্যের জোরে জেতা-হারা নির্ভর করে, অর্থাৎ এটা শুধুই জুয়াই। ভারতে এই জুয়া নিষিদ্ধ, গেমিং অ্যাপগুলো নয়।
মোহনবাগানের সুপার জায়ান্টের কথাই ধরা যাক, তাদের বাজেট এই মুহুর্তে আনুমানিক ৭০ কোটি টাকার বেশি, কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মত একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী রয়েছেন এই ক্লাবের সাথে। সেখানে এই পারিম্যাচের দেওয়া অর্থের পরিমাণ অতীব যৎসামান্য। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দলের উপর বিনিয়োগ করছেন, খুবই সামান্য অর্থ আসছে টাইটেল স্পনসর থেকেও। সত্যি কি এই পারিম্যাচ খুব একটা পার্থক্য আনছে সঞ্জীব গোয়েনকার মত এখন ব্যবসায়ীর লাভ ক্ষতিতে? কিন্তু এতে এক বালতি দুধে যেন চার ফোঁটা চোনা পড়ার মতই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বদনামই বেশি হচ্ছে মোহনবাগানের মত একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের।
আরও পড়ুন - পেলের অসামান্য রেকর্ড ভাঙলেন নেইমার জুনিয়র!
ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে যেমন গত বছর ওয়ানএক্স ব্যাট, যা ওয়ানএক্স বেট-এর সারোগেটেড সংস্থা, অ্যাসোসিয়েট স্পনসর হয়েছিল। এই বছর নতুন এসেছে 'ব্যাটারি', যেটা পরিষ্কার একটা বেটিং অ্যাপ। স্যারোগেট সংস্থাও নয়।
এই ধরণের সংস্থাগুলি আসলে মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের মত ঐতিহ্যশালী ক্লাবগুলির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। মোহনবাগানের ক্ষেত্রে আরপিএসজি বা ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রে ইমামি তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে ফুটবল দলগুলি চালায়। তাদের সামাজিক কাজে ব্যবহৃত অর্থ দিয়ে আমাদের ফুটবল ক্লাব গুলি চলে যায় স্বচ্ছন্দে , কিন্তু সেখানে এই বেটিং সংস্থাগুলোর আগমনে আসলে সেই সামাজিক দায়িত্বই পালনে অনেকটাই ব্যর্থ হচ্ছে ইমামি কিংবা আরপিএসজির মত প্রসিদ্ধ সংস্থারা।