তুলসীদাস বলরামকে গলি থেকে আবিষ্কার করেছিলেন রহিম সাহেব: সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়

তুলসীদাস বলরামকে কেমন দেখেছেন?
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: তুলসীদাস বলরাম এত বড় প্লেয়ার ছিলেন কিন্তু তাঁকে দেখে কখনোই মনে হতো না। যতবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি বা কথা বলেছি মনে হয়েছে তিনি একজন মাটির মানুষ। ভারতীয় ফুটবলে সে সময় যতজন ফুটবলার ছিলেন তাদের মধ্যে ফুটবলার হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখতেন বললাম'দা। প্রচারের আলোয় কোনদিন আসতেন না, সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতেন না। নিজের কাজ করে যেতেন নিঃশব্দে, আড়ালেই। আমি মনে করি ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন ফুটবলার তুলসীদাস বলরামই।
তুলসীদাস বলরামের জীবনে রহিম সাহেবের প্রভাব কেমন ছিল?
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বলরাম'দার সঙ্গে কথা বলতে বলতে জানতে পারি রহিম সাহেবের সম্পর্কে। কীভাবে ভারতীয় দলে এলেন তুলসীদাস বলরাম? সেটাও একটা ট্র্যাজেডি। রহিম সাহেব প্লেয়ার খুঁজতে বিভিন্ন গ্রামে-শহরে যেতেন। হঠাৎ একদিন সেকেন্দ্রাবাদের, একটি গ্রামের গলিতে অনেকগুলি বাচ্চা ছেলেকে ফুটবল দেখেন। সাইকেল নিয়ে তখন যাচ্ছিলেন রহিম সাহেব। সেখানেই তুলসীদাস বলরামকে আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। বলরাম'দা প্রত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে এসেছিলেন। বলরাম'দা কে যাতায়াতের ভাড়াও দিতেন রহিম সাহেব। রহিম সাহেবের কোচিংয়েই প্রফেশনাল ফুটবলার হিসেবে জন্ম নিয়েছিল তুলসীদাস বলরাম।
তুলসীদাস বলরামের কাছে রহিম সাহেবের কোন গল্প শুনেছেন?
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এখনও পর্যন্ত জাতীয় দলে কোচ হিসেবে রহিম সাহেবের যা অবদান তা আর অন্য কারোর নেই। যদি কোন কারনে কোন ভুল করতেন খেলোয়াড়রা খুব বকতেন রহিম সাহেব। আবার পরে ডেকে এনে ব্যক্তিগতভাবে সেই ভুলকে বুঝিয়েও দিতেন তিনি। বলরাম'দা ঈশ্বরের মূর্তির স্থানে রহিম সাহেবের ফটো রাখতেন। আসলে তিনিই তো তুলসীদাস বলরামকে ফুটবলার হিসেবে জন্ম দিয়েছিলেন।
রহিম সাহেবের জীবনের উপর নতুন সিনেমা তৈরি হয়েছে কী বলবেন?
সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রহিম সাহেব ভারতীয় ফুটবলকে যা দিয়েছেন এই সিনেমা হয়তো তাঁকে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাটা জানালো। ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিকে সেমিফাইনালিস্ট, ১৯৬২ এশিয়ান গেমসে সোনা, মারডেকা রানার্স। এই কৃতিত্ব ভারতীয় ফুটবলে আর বোধহয় কেউ ছুঁতে পারবে না। তাই ফুটবলপ্রেমী, ফুটবল বিশেষজ্ঞ, ফুটবল খেলোয়াড় সকলের কাছে এই সিনেমাটি উদযাপন করার জন্য। ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহাসিক মুহূর্ত রুপোলি পর্দায় তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ ময়দান সিনেমার টিমকে।