১৯৮২ বিশ্বকাপে অবাক কীর্তি কুয়েত রাজপুত্রের, হারতে থাকা খেলা আটকে বাতিল করলেন গোল

এক্সট্রা টাইম ওয়েব ডেস্ক : দীর্ঘ ৮০ বছর ধরে চলা ফিফা বিশ্বকাপে এমন অসংখ্য মুহুর্ত রয়েছে, যা অনেকেরই স্মৃতিতে ঘোরাফেরা করেছে। কিন্তু এমন অদ্ভুত কান্ডও রয়েছে, যা স্মৃতিতে বাধা নেই অনেকেরই। এমনই এক অবাক কান্ড ঘটেছিল ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপে।
স্পেনে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেছিল কুয়েতের জাতীয় দল। আর সেই একবারই আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল এই ছোট দেশ। অথচ এই এশীয় দেশ নিজের একমাত্র বিশ্বকাপে এমন কান্ড ঘটিয়ে বসেছিল, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এর আগে কখনও হয়নি আর আজও হয়নি।
সেই টুর্নামেন্টে শক্তিশালী চেকোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করার পর ২১ জুন তারিখে মুখোমুখি হয়েছিল অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। আর সেই ম্যাচে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, কুয়েত ম্যাচটি হেরে যাবে। আর সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ দেখতে হাজির ছিলেন সে দেশের রাজপুত্র শেখ ফাহাদ আল আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ, যিনি ছিলেন সেই দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টও বটে।
শুরুর ৩০ মিনিটে কুয়েত ভালো ডিফেন্স করেছিল। কিন্তু বের্নার্ড গেঙ্ঘিনি গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন। এরপর ৪৩ মিনিটে মিশেল প্লাতিনি গোল করে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করেন। আর তারপর ৪৮ মিনিটে ৩-০ করে ফেলে ফ্রান্স। যদিও ৭৫ মিনিটে আবদুল্লাহ আল বুলৌশি গোল করে কুয়েতকে কিছুটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে আসেন, কিন্তু ফরাসি মিডফিল্ডার আলাইন গিরেসে দলের চতুর্থ গোলটি তুলে আনেন।
আর তারপরেই শুরু হল ঝামেলা। চতুর্থ গোল নিয়ে কুয়েতের খেলোয়াড়রা অভিযোগ করেছিলেন, তারা ভেবেছিল সোভিয়েত রেফারি মিরোস্লাভ স্টুপার বাঁশি বাজিয়েছিলেন, যার জেরে তারা থমকে গিয়েছিল এবং ফ্রান্স সুযোগ বুঝে গোল করে। যদিও সেই বাঁশির আওয়াজ এসেছিল দর্শকদের থেকে।
আর দেশের প্রতি এমন অন্যায় দেখে মাঠেই নেমে পড়েন রাজপুত্র ফাহাদ। এসে তিনি রেফারির সাথে তর্ক জুড়ে দেন, হুমকি দেন খেলা বন্ধের। আর কার্যত সেই হুমকিতে রেফারি স্টুপার গোলটি বাতিল করে দেন এবং খেলা চালু করেন। আর সেই ম্যাচের পর রেফারিং থেকে নিষিদ্ধ হন স্টুপার।
যদিও ৮৯ মিনিটে চতুর্থ গোলটি তুলে নেন ম্যাক্সিম বোসিস। ৪-১ ব্যবধানে হেরে লজ্জায় ড্রেসিংরুমে ফিরে যেতে হয়েছিল কুয়েতকে। এক গোল বাতিল করা সত্ত্বেও চার গোল হজম করতে হয়েছে তাদের। এরপর গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ০-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল কুয়েত।
সেই ঘটনা আজও কুয়েতিদের মনে ভিড়ে থাকে। নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপে এমন কান্ড ঘটিয়ে তারা এসেছিল খবরের শিরোনামে। যদিও তারপরে আরও কিছু বিতর্কে জড়ায় কুয়েত ফুটবল ফেডারেশন। ২০১৮ বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ না খেলা ও দুর্নীতি জড়িত কারণে সাসপেন্ড করেছিল ফিফা।
তবে ২০২২ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে কুয়েতের। গ্রুপ বিতে অস্ট্রেলিয়ার পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই এমিরেট দেশ।