খারাপ রেফারিংয়ের শিকার হয়েও ১০ জন নিয়ে জামশেদপুরকে রুখে দিল ইস্টবেঙ্গল। বিস্তারিত পড়ুন...

এসসি ইস্টবেঙ্গল : ০
জামশেদপুর এফসি : ০
সব্যসাচী বাগচী : ফুটবল দেবতাও বৃহস্পতিবার এসসি ইস্টবেঙ্গলের পাশেই ছিলেন। গত তিন ম্যাচের মত জামশেদপুর এফসি'র বিরুদ্ধেও ডিফেন্সের ফাঁকফোকর ধরা পড়লেও, মহম্মদ ইরশাদ একাই রুখে দাঁড়াচ্ছিলেন। ফলে নেউরিস ভাল্সকিস-আলেকজান্দ্রে লিমা-জ্যাকিচাঁদ সিং'রা একাধিকবার গোল করার চেষ্টা করলেও খাতা খুলতে পারলেন না। অ্যান্টনি পিলকিংটন-জ্যাক মাঘোমা এমনকি স্কট নেভিল পর্যন্ত ডিফেন্স উঠে এসে গোল করার চেষ্টা করেন। গোল করার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তাঁদের দলও। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছোঁয়ালেই গোল পেতেন স্কট নেভিল। তবে সেটা হল না। ফলে ১০ জনকে নিয়ে প্রায় ৭০ মিনিট ধরে লড়াই করে ম্যাচ ড্র করে প্রথম পয়েন্ট ঘরে তুললো রবি ফাউলারের এসসি ইস্টবেঙ্গল। যা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে।
অনিকেত যাদব, স্টেফান এজে ও নেউরিস ভাল্সকিসের একক দক্ষতায় জামশেদপুর তিন গোলে এগিয়ে গেলে, ম্যাচের ভাগ্য প্রথমার্ধেই নির্ধারিত হয়ে যেত। যদিও সেটা হয়নি। তবে রেফারি রাহুল কুমার গুপ্ত যে কান্ড ঘটালেন সেটার জন্যই হয়তো খেলা থেকে হারিয়ে যেতে পারত লাল-হলুদ বাহিনী। কারণ, অদ্ভুতভাবে ইউজেনসিং লিংডোকে লাল কার্ড দেখিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেন রেফারি রাহুল। যা মেনে নিতে পারছেন না ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। কারণ, রেফারি অহেতুক 'মার্চিং অর্ডার' দেখার জন্য ১৫ ডিসেম্বর হায়দ্রাবাদ এফসি'র বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না লিংডো।
ম্যাচের বয়স তখন ২৫ মিনিট। বল দখলকে কেন্দ্র করে জ্যাক মাঘোমা ও বিপক্ষের আইটর মনরয়ের লড়াই জমে উঠেছে। ঠিক এমন সময় বিপক্ষের আলেকজান্দ্রে লিমা'কে ফাউল করার জন্য দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখেন লিংডো। ফলে তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেন রেফারি। সুতরাং বাকি সময়ের জন্য ইস্টবেঙ্গল ১০ জনের হয়ে যায়। স্বভাবতই সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রবি ফাউলার। প্রসঙ্গত, ২১ মিনিটের মাথায় প্রথমবার হলুদ কার্ড দেখেছিলেন লিংডো। সেবার লালডিনলিয়ানা রেন্থলেই'কে সাইড ট্যাকেল করেছিলেন এই মিডফিল্ডার।
দ্বিতীয় ফাউলের জন্য লিংডো'র কি জোড়া হলুদ কার্ড আদৌ প্রাপ্য? ভিডিও দেখে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে আলেকজান্দ্রে লিমা'কে ইচ্ছাকৃত ফাউল তিনি করেননি। বরং বলে শট করতে গেলে লিংডো'র পা পিছলে যায়। এবং তাঁর রানিং শট লিমার পায়ে লাগে। ফলে সেটা অনিচ্ছাকৃত ভুল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই রেফারি লিংডো'কে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড না দেখাতেই পারতেন। তাছাড়া ২১ মিনিটের মাথায় লিংডো'কে একবার হলুদ কার্ড দেখানোর পর, ফের ৪ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানোর ক্ষেত্রে রেফারির ধৈর্য বজায় রাখা উচিত ছিল। তবে সেটা হয়নি। আর সেইজন্য চলতি আইএসএলে রেফারিংয়ের মান নিয়ে রোজ সমালোচনা হচ্ছে। যা দেখে দৃশ্যতই হতাশা প্রকাশ করেন লিভারপুল লেজেন্ড।
তাই তিলক ময়দানে 'ম্যাচের নায়ক' যতই হন মহম্মদ ইরশাদ হোন, আসল 'ভিলেন' কিন্তু ওই রেফারি রাহুল কুমার গুপ্ত। তাঁর জন্যই তো ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল লাল-হলুদ বাহিনী।
তবে এই ম্যাচ থেকে মূল্যবান এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য দুই বঙ্গ গোলকিপার শঙ্কর রায় এবং তাঁর পরিবর্ত হিসেবে নামা দেবজিত মজুমদারের প্রশংসা করতেই হয়। বেশ কয়েকবার ইস্টবেঙ্গলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান। কারণ, 'ভাগ্য সবসময় বীরের সঙ্গে থাকে'।
এসসি ইস্টবেঙ্গল : শঙ্কর রায়/দেবজিত মজুমদার (গোলকিপার), স্কট নেভিল, মাত্তি স্টেইনমান, মহম্মদ রফিক, জেজে/আঙ্গুসানা, ইউজেনসিং লিংডো, জ্যাক মাঘোমা, নারায়ণ দাস, অ্যান্টনি পিলকিংটন (অধিনায়ক), শেহনাজ সিং, মহম্মদ ইরশাদ
জামশেদপুর এফসি : আইটর মনরয়, আলেকজান্দ্রে লিমা, নেউরিস ভাল্সকিস, অনিকেত যাদব/আইজ্যাক ভানমালস্বামা, মহম্মদ মোবাশির/জ্যাকিচাঁদ সিং, রিকি লালাওয়ামা, লালডিনলিয়ানা রেন্থলেই, রেহনেস টিপি (গোলকিপার), পিটার হার্টলে (অধিনায়ক), উইলিয়াম লালনুনফেলা/করন আমিন, স্টেফান এজে