জঘন্য ডিফেন্স। নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে হারের হ্যাটট্রিক করল এসসি ইস্টবেঙ্গল। বিস্তারিত পড়ুন...

নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড : ২ (সুরচন্দ্র সিং, '৩৩, আত্মঘাতী গোল, ৯১'রোছারজিলা)
এসসি ইস্টবেঙ্গল : ০
সব্যসাচী বাগচী : না এবারও হল না। এটিকে মোহনবাগান মরিয়া হয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারলেও, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসসি ইস্টবেঙ্গল একইরকম তাগিদ দেখিয়ে হারের হ্যাটট্রিক রুখতে পারল কোথায়! সৌজন্যে, লাল-হলুদের 'জঘন্য ডিফেন্স'। অবশ্য মাঝমাঠ ও স্ট্রাইকিং লাইনের অবস্থায় একইরকম। খুব সাধারণ মানের। তাই তো শনিবার নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ২-০'এ হেরে একেবারে লিগ টেবিলের নীচে রবি ফাউলারের দল। আর এই ম্যাচ জিতে ৪ ম্যাচে ৮ নম্বর নিয়ে লিগ টেবিলের দুই নম্বরে উঠে এল তরুণ কোচ জেরার্ড নাসের নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড।
সবাই যখন ধরে নিয়েছিল ব্যবধান বাড়ছে না, ঠিক তখনই ইনজুরি টাইমে ভিপি সুহেরের ক্রস থেকে দ্বিতীয় গোল করে ইস্টবেঙ্গলের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন রোছারজিলা। এবং সেখানেও আবার ডিফেন্সের ভুল। যা বেঞ্চে বসে ফাউলারের দেখা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল ছন্দ খুঁজে পায়নি। ফুটবলারদের ক্লান্ত দেখিয়েছে। নর্থ ইস্টের পেনাল্টি বক্সে সেন্টার ভাসালেও পিছন থেকে প্লেয়ার তুলে আনতে পারেনি। ফলে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ডিফেন্ডাররা কোনও সময়তেই চাপে ছিলেন না। একাধিক পরিবর্তন এনেও ফাওলার ম্যাচের রং বদলাতে পারেননি। উল্টে খেলার একেবারে শেষ লগ্নে 'সুপার সাব' রোছারজিলা-ভিপি সুহের জুটি ব্যবধান বাড়ান নর্থইস্টের হয়ে। সমতা ফেরানোর জন্য ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা উঠে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে নর্থ ইস্ট ২-০ করে যায়।
লড়াই। ফিরে আসার তাগিদ। সঠিক সময় জ্বলে উঠে বিপক্ষকে জাস্ট উড়িয়ে দেওয়া। রবি ফাউলারের এই এসসি ইস্টবেঙ্গলে চোখে চোখ রেখে প্রতিপক্ষকে বুঝে নেওয়ার ক্ষমতাই নেই। দলের নামটাই শুধু 'ইস্টবেঙ্গল'। তবে অতীতের লাল-হলুদ সুলভ যুদ্ধাংদেহী মারাকাটরি মনোভাবের বড্ড অভাব। তাই তো খুব সহজে নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে পরাভূত হয়ে হারের হ্যাটট্রিক হজম করল লিভারপুল লেজেন্ডের দল।
কবে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স বারবার অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে! লাল-হলুদের এত কমজোরি স্ট্রাইকিং লাইন কবে দেখা গিয়েছে! জ্যাক মাঘোমার মত এত সাধারণ মানের মিডফিল্ডার কবে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন সেটা হয়তো কোনও পরিসংখ্যানবিদ খুব সহজে বলতে পারবেন না। এদিনও আবার ডিফেন্সের ভুল বারবার ধরা পড়ল। নারায়ণ দাসের দুর্বল ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে ম্যাচের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ডানদিক থেকে আক্রমণ করে গেল জেরার্ড নাসের ফুটবলাররা।
আর ৩২ মিনিটে নর্থ ইস্টের কাছে এল প্রথম সাফল্য। সুরচন্দ্রের আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে গেল লাল-হলুদ। কায়েসী এপিয়া'র একটি গ্রাউন্ডার শট সুরচন্দ্র সিংহের হাঁটুতে লাগে। তারপর সেই রানিং বল পার্কে ঘুরে বেড়ানোর মত ধীরেসুস্থে জালে ঢুকে যায়! এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল পুরো ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখলেন দুই ডিফেন্ডার স্কট নেভিল ও সুরচন্দ্র! দেবজিত মজুমদার অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনিও স্রেফ দর্শকের ভুমিকা পালন করলেন! বলটাকে আটকানোর কোনও তাগিদ'ই নেই!
দুই অর্ধে ইস্টবেঙ্গল যে চেষ্টা করেনি এমনটা কিন্তু নয়। ১০ মিনিটেই ফ্রি-কিক পেয়েছিলেন অ্যান্টনি পিলকিংটন। কিন্তু সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না। নর্থইস্টের মানবপ্রাচীরে তা প্রতিহত হয়। ২১ মিনিটে মাঘোমাকে পেনাল্টি বক্সের ভিতরে ফেলে দেন আশুতোষ মেহতা। পেনাল্টির আবেদন করেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা। যদিও রেফারি সন্তোষ কুমার সেই দাবিতে কর্ণপাত করেননি।
প্রথম দুটো ম্যাচ হারের পর নাকি ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য টিম হোটেলের ডাইনিং রুমে প্রাক্তন লাল-হলুদ ফুটবলারদের ছবি রাখা হচ্ছে। শোনানো হচ্ছে লাল-হলুদের সংগ্রামী ইতিহাস। রবি ফাউলার ইংল্যান্ড থেকে বোঝাই করে একাধিক সাপোর্ট স্টাফ এনেছেন। মনোবিদের লাগাতার ক্লাস চলছে। সবই হচ্ছে। শুধু ফুটবলটাই হচ্ছে না। কারণ, এই ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে সেই মরিয়া তাগিদটাই নেই। তিন ম্যাচে ৭ গোল হজম করল লাল-হলুদ।সাহেব কোচ এবার নিশ্চয়ই ভাববেন।
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড : গুরমিত সিং (গোলকিপার), আশুতোষ মেহতা/প্রভাত লাকরা, মশহুর শেরিফ/রোছারজিলা, বেঞ্জামিন ল্যাম্বোট, গুরজিন্দর কুমার, লালেঙমাভিয়া, কাসা কামারা, লুইস মাচাদো/ডাইলন ফক্স, নিথোইনগানবা মিতেই, ইদ্রিসা সাইলা/ভিপি সুহের, কায়েসী এপিয়া/ইমরান খান
এসসি ইস্টবেঙ্গল : দেবজিত মজুমদার (গোলকিপার), স্কট নেভিল, মহম্মদ ইরশাদ/ লিংডো, নারায়ণ দাস, শেহনাজ সিং, সুরচন্দ্র সিং, আঙ্গুসানা/ মহম্মদ রফিক, মাত্তি স্টেইনমান, জ্যাক মাঘোমা, অ্যান্টনি পিলকিংটন, বলবন্ত সিং/ সিকে ভিনিথ